মাসকাওয়াথ আহসানঃ
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় যথাযথ একটি ক্যাম্পাস। এখানে পড়ালেখা ও গবেষণার পরিবেশ আছে। শিক্ষা-সংস্কৃতি-ক্রীড়া-বিজ্ঞান-সমাজসেবা অনুশীলনের মাধ্যমে যোগ্য ছাত্র-ছাত্রী তৈরি হয় এই বিশ্ববিদ্যালয়।
এই বিশ্ববিদ্যালয়ে নাট্যাচার্য সেলিম আলদীন ও নাট্যবেত্তা আফসার আহমেদের অধীনে নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিষয়ে এম ফিলের ক্লাস করেছি দিনমান। সেলিম স্যার আমাকে নিয়ে যেতেন শিক্ষার্থীদের ওয়ার্কশপ থিয়েটারের ক্লাসে। পরে জিজ্ঞেস করতেন আমার মূল্যায়ন। আমার পছন্দ হলে তবেই স্যার বাংলাদেশ বেতারে ঐ কর্মশালা নাটকটি শ্রুতি থিয়েটার হিসেবে প্রচারের অনুরোধ করতেন। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসে করে ছাত্রছাত্রী এসে তাদের থিয়েটার রেকর্ডিং-এ অংশ নিতো। ক্যান্টিনে তাদের জন্য স্বাদু লাঞ্চের বন্দোবস্ত থাকতো।ওরা রেকর্ডিং সেরে চলে গেলে; আমার সহকর্মীরা ওদের মেধা, দীপ্তি ও শিষ্টাচারের প্রশংসা করতেন।
সেলিম স্যার নাটক প্রচারের পর আনন্দে ফোন করতেন। স্যারের সঙ্গে আর নাট্যতত্ত্ব বিভাগের চিন্তাশীল-গবেষক শিক্ষকদের সঙ্গে খুব ভালো আড়াইটি বছর কেটেছ। সিনিয়ররা কিছু না কিছু শেখাতেন গল্পে গল্পে। সমবয়েসীরা আড্ডা দিতেন; খাওয়াতেন; একেবারে ফ্রেশ মাছ জোগাড় করে এনে। তাদের ধ্যান-জ্ঞান-আনন্দ দেখেছি শিক্ষা-সংস্কৃতিকে কেন্দ্র করে। কি আন্তরিক সবুজ আর মায়া জড়ানো; লাল ইটের ঐতিহ্যময় প্রত্ননগরী এই ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাস! ইউনিভার্সিটি বাসে, আমার বন্ধু পদার্থবিজ্ঞানের শিক্ষক রনী নিজে ঢাকা পর্যন্ত পাশে দাঁড়িয়ে সারারাস্তা গল্প করে আমাকে জোর করে বসিয়ে রেখেছিলো।
সেলিম স্যারের অধীনে ইংরেজি ভাষায় “পোস্ট লিবেরেশন ওয়ার ড্রামাঃ ফর্ম এন্ড কন্টেন্ট নিয়ে পিএইচডি করছিলাম। সেলিম স্যার-আফসার স্যার আমাকে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগের প্রস্তাব দিলে; আমার খুব ইচ্ছা হয়েছিলো ওখানে ছাত্রদের আনন্দযজ্ঞে সময় কাটাতে। বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় এসে “আমাকে গোয়েন্দা পাঠিয়ে নাচাতে কিংবা নিজেরা আমার মেধার সঙ্গে টক্কর দিয়ে নাচতে শুরু করলে; ওদের নাচের তাল ঠিক না হওয়ায়; ডয়চেভেলেতে চলে যাই।
নাচানাচি প্রসঙ্গে মনে এলো; জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ওরিয়েন্টাল (প্রাচ্য)-অক্সিডেন্টাল (পাশ্চাত্য) নাচের সংমিশ্রণে কম্পোজ করা একটি নৃত্য সম্প্রতি; বাংলাদেশে গত একুশ বছরে বিএনপি-জামায়াত-আওয়ামী লীগ-হেফাজত-শিবসেনারা মিলে যে বিরাট গর্বের সংস্কৃতি স্তম্ভ তৈরি করেছে; সেই গজদন্তের স্তম্ভ ধরে নাড়া চাড়া করেছে শিক্ষার্থীরা; এমন অভিযোগ করছেন, ফেসবুকের মখারা।
যেই কাওয়ালি সংগীত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আয়োজন করতে গিয়ে টিএসসিতে বাল(BAL)-এর ছেলেরা; সহমত কালা আযমভ ও রাজবদর বলদা রায়েরা; এসে ভাংচুর করে; গালাগাল করে, ছাত্রীদের আহত করে পণ্ড করে দিলো আয়োজন। অথচ এর কিছুকাল আগে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি নান্দনিক কাওয়ালীর অনুষ্ঠান সফল হয়েছে।এইখানেই জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষত্ব। শুধু তাই নয়; কর্মক্ষেত্রে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা, যে কাজগুলো করে; তা তারা জেনে করে। ফলে দ্রুত নির্ভুলভাবে করতে পারে তারা।
আর অফিসে শিষ্টাচারের কারণে খুব ভালো টিমপ্লেয়ার হতে পারে।অথচ “সর্বদলীয় ধর্ষণ জোট” নাচের এই বৈশ্বিক মানের নিরীক্ষা দেখে বলছে, নাচ হারাম; কিন্তু ধর্ষণে আরাম।