ঈশ্বরের উপহার /
যুদ্ধ কি তা জানা ছিল না
মেয়েটির
সমাজতান্ত্রিক দেশে
জন্মে
জীবনযাপন দুরূহ ছিল
না তার,
দু’বেলা রুটি আর
পাতাকপি, গাজর, মাংশ
মেশানো
লালচে বশটের স্যুপ
খেয়ে সুখে বেড়ে উঠছিল
সে, হাইস্কুলের গন্ডি পেরিয়ে
যখন সে দ্বাদশ ক্লাসে
তখন এক দোকানে
আপেল কিনতে গিয়ে
দেখা হয় লিকজান্দ্রোর
সাথে।
লিকজান্দ্রো কলেজের
গন্ডি পেরিয়ে সবেমাত্র
যোগ দিয়েছে
সেনাবাহিনীতে,
দীর্ঘ সুঠাম দেহ
আর ভদ্র ব্যবহারে
মেয়েটি বিমোহিত প্রত্যাখান নয়
বরং নিজের দীঘল সোনালী
বেণী দুলিয়ে আপেল কিনে
চলে যাওয়ার আগে
ফিরে তাকিয়েছিল
লিকজান্দ্রোর চোখে-
মনে হয় এইত সেদিন।
পেছন থেকে লিকজান্দ্রো
চিৎকার করেছিল
“-নামটা বলে যাও
“নামটা বকে যাও”-
মেয়েটি ফিরে যেতে
যেতে ঘাড় ঘুরিয়ে
বলেছিল-
“দারিনা আমার নাম”,
সেদিন কিয়েভে ঘন
তুষারপাত,
সারা ইউক্রেনে
শীতকাল।
সেদিন ছিল রবিবার-
লিকজান্দ্রো বলেছিল
প্রতি রবিবার এই
আপেল দোকানীর কাছে
আসবে সে,
দারিনা যেন তার সাথে
আবার দেখা করে।
দারিনা কথা দিয়েছিল
আসবে এখানে।
এর ঠিক দিন দুই পরে
আগ্রাসী রুশ বাহিনী ঢুকে
পড়ে
সীমান্ত ভেঙ্গে ইউক্রেনে
কিয়েভ এ পুরো শহর
জুড়ে শুরু হয়
জলপাই রঙের রুশ
তান্ডব !
নাৎসী কায়দায় আক্রমণ
করে রুশ বাহিনী
কিয়েভ, চেরনোবিলের
সাধারণ মানুষের
আবাসিক এলাকায়,
মেট্রো স্টেশনে, বাস সড়কে।
স্কুল ভবনে লুকিয়ে থাকা
মানুষগুলোও
রেহাই পায়না রাশিয়ার
শ্বেত সন্ত্রাস থেকে।
দারিনা
তার পরিবারের সাথে
দেশ ছাড়তে
নামে কিয়েভের পথে,
উদ্দেশ্য সীমান্ত পেরিয়ে
পোল্যান্ড পৌছানো-
পথে যেতে যেতে তার
বারবার মনে পড়ে
লিকজান্দ্রো বলেছিল
প্রতি রবিবার দেখা
করতে,
যদি কোনদিন যুদ্ধ থেমে
যায়
যদি ইউক্রেন টিকে
থাকে
ক্রুজ মিসাইলের আঘাত
এড়িয়ে,
সে নিশ্চয়ই খুঁজে বের
করবে লিকজান্দ্রোকে-
দারিনার এই ভাবনায়
ছেদ পড়ে
যখন তাদের সামনে এসে
দাঁড়ায়
একটি জলপাই রংএর
সাঁজোয়া গাড়ি
একজন রুশ মেজরের
আদেশে থেমে যায়
শরণার্থী দল,
কয়েকজন রুশ সৈন্য
সার বেঁধে দাড় করায়
তাদের
সেখান থেকে নারী ও
শিশুদের আলাদা করে
ফেলা হয়,
কিশোরী যুবতীদের টেনে
হিঁচড়ে
তুলে নেওয়া হয় সাঁজোয়া
গাড়িতে,
তারপর
কালাশনিকভ
রাইফেলগুলো গর্জে ওঠে
সার বেঁধে দাঁড়ানো পুরুষ
ইউক্রেনিয়ানদের ওপর।
দারিনা
এখন
রুশ কন্সেন্ট্রেশন ক্যাম্প এ
রাঁধুনীর কাজ করে-
রাতে বাধ্য হয় রুশ
সেনাপতির শয্যাসঙ্গিনী
হতে,
দারিনা
যে যুবতী সাড়া দিয়েছিল
লিকজান্দ্রোর প্রেমে,
দারিনা
যে কথা দিয়েছিল প্রতি
রবিবার
যাবে আপেল কিনতে
নির্দিষ্ট দোকানে,
দারিনা যার ভাল লাগত শীতের
বিকেলে
ঘরে ফায়ার-প্লেসের
পাশে বসে
গরম লালচে বশটের
স্যুপ খেতে খেতে
জানালায় দেখতে শ্বেত
শুভ্র তুষারপাত,
দারিনা
এখন ইউক্রেনের দক্ষিণে
বয়ে যাওয়া
দানিউব নদী
দারিনা
যার নাম তার বাবা
রেখেছিলেন পরম স্নেহে,
দারিনা-
যার নামের অর্থ ঈশ্বরের
উপহার।