মাসকাওয়াথ আহসান ( ইস্তাম্বুল থেকে)
গত শনিবার ইউক্রেনে আগ্রাসনের দায়ে এমেরিকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন রাশিয়ার ভ্লাদিমির পুটিনকে “কসাই” বলেছেন। একী কথা শুনি আজ মন্হরার মুখে। আফঘানিস্তান থেকে চড খেয়ে ফিরে যাবার সময় জো বাইডেন কিছু অস্ত্রশস্ত্র ফেলে গেছেন। এটাই এমেরিকার নীতি, প্রথমে অবৈধ আগ্রাসন, তারপর ওয়ার অন টেররের গান গেয়ে বেনজির ক্রসফায়ারে পাখির মতো মানুষ মারা, গণতন্ত্রের প্রদীপ জ্বেলে এনকাউন্টারের মাধ্যমে লুকিং ফর শত্রুজ বলে অসহায় নারী শিশু হত্যা, মানুষকে তার মাতৃভূমি থেকে উচ্ছেদ করে মুনতাসির ফ্যান্টাসির ন্যারেটিভ রচনা। জয় এমেরিকা বলে এগিয়ে চলে এই মাংসের কারবার।
জো বাইডেন নিজ হাতে সিরিয়ার স্বর্গ পুডিয়ে খাঁক করে দিয়েছেন, সিরিয়ায় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার হিলারি ক্লিনটনীয় ডাইনি গাথায়। আল কায়েদা থেকে আইসিস, এসবই জো বাইডেনের তৈরি ফ্রাংকেস্টাইন। সিরিয়ার বাশার আল আসাদকে ইরাকের সাদ্দাম বা লিবিয়ার গাদ্দাফি স্টাইলে উচ্ছেদ করে এমেরিকার পুতুল সরকার প্রতিষ্ঠায় ব্যর্থ হয়ে,জো সিরিয়ায় অস্ত্র ফেলে যায়। এই অস্ত্র রেখে যায় ,বিশৃংখলার সুযোগে আইসিস যেন এগুলো ব্যবহার করতে পারে।
এমেরিকার অভিজাত ইউনিভার্সিটিতে বসে বা উড্রো উইলসন সেন্টারে বসে কথিত ডিশটিংগুইশড প্রফেসরেরা প্রফেসি করেন, ডমিনো এফেক্টের কলা কৈবল্য সি আই একে প্রেসক্রাইব করেন। কোনো দেশের সরকার বা রাষ্ট্রপ্রধান নি:শর্ত আত্মসমর্পণ না করলে কীভাবে তাকে সরাতে হবে। সেখানে আল কায়েদা বা আই এস পাঠিয়ে কথিত সন্ত্রাসবাদ তৈরি করে, সেই সন্ত্রাসবাদ দমনে মার্কিন মেরিন পাঠিয়ে কীভাবে নতজানু পুতুল সরকার বসাতে হবে। আর সিএনএন বিবিসির সারিন্দা লাগিয়ে দিয়ে এমেরিকান স্টাইল গণতন্ত্র জিহাদের গুনগান করতে হবে।
সিরিয়ায় মার্কিন আগ্রাসন ও সিআইএ নরভোজীকলা বাস্তবায়িত হবার আগে,সে ছিলো সমৃদ্ধ এক কল্যাণ রাষ্ট্র। আর হিলারির ফুরিয়ে যাওয়া যৌবন জ্বালার সংগে বাইডেনের কসাই বৃত্তিতে সিরিয়ার স্বপ্ন পুডে ছাই হয়েছে। লাখ লাখ মানুষ উচ্ছেদ হয়ে গেছে তাদের মাতৃভূমি থেকে।ইস্তাম্বুলের রাস্তায় সিরিয়ার দেবশিশু ডাস্টবিন থেকে খাবার কুডিয়ে খায়, সিরিয়ার একদা সম্পন্ন পরিবারের ছেলে ভিক্ষার পয়সায় নেশা করে উদ্দেশ্যহীন জাবনের জ্বালা জুডাতে।
আলেপ্পোতে কফি শপ ছিলো এমন এক নারী ইস্তাম্বুলের পথে আমার পথ আগলে তার স্বামী হারানোর ট্র্যাজেডির কথা বললো। একজন তরুণ বললো তার পিতা হারানোর স্মৃতিকথা।
সান্ত্বনা একটাই তুরস্কের মানুষ সহানুভূতিশীল। তুর্কীরা বাংলাদেশের ফইন্নি শিবসেনাদের মতো বলে না, রোহিংগারা ক্রিমিনাল, অগো বংগোপসাগরে ভাসাইয়া দাও। কিংবা পাকিস্তানের ফইন্নি জামায়াতের মতো বলে না আফঘানরা ক্রিমিনাল, অরা করাচীরে গান্ধা করতেছে। কিংবা ভারতের কলকাতার কোন বিজেপি ব্রাহ্মণের মতো বলে না, কলকাতা ফাইলস খুলো, মুসলমানরা আদিম, আমাদের সভ্য পাছাতীর্থে ওরা বেমানান। ইস্তান্বুলের ডিএনএ পাকিস্তান ভারত বাংলাদেশের মতো হিংসুটে নয়, তাই তারা সাধ্যমত সাহায্য করে সিরিয় শরণার্থীদের।
সিরিয়ার এই হতভাগ্য মানুষেরা যাদের জীবন এমেরিকার ফইন্নি জীবনের চেয়ে সমৃদ্ধ ছিলো, তারা হিলারীর অক্ষম নারী জীবনের ঈর্ষার বলি হয়েছে। স্বামী ক্লিনটনকে দুদন্ড শান্তি দেয়নি এই উচ্চাভিলাষী ম্যাকবেথের ডাকিনী নারী। অথচ জার্মানীর মমতাময়ী নেত্রী আংগেলা মেরকেল আশ্রয় দিয়েছেন সিরিয়ার হতভাগ্য শরনার্থীদের। বাংলাদেশের সমানুভূতিসম্পন্ন নেত্রী শেখ হাসিনা যেমন আশ্রয় দিয়েছেন রোহিংগা শরনার্থীদের, আগলে রাখেন উপায়হীন সংখ্যালঘু গোষ্ঠীকে।
অথচ তার পাশেই ভারতে নরেন্দ্র মোদী কী মানবতাবিরোধী অপরাধ করে চলেছেন সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর সংগে। তার দহরম মহরম মানবতাবিরোধী অপরাধী জো বাইডেনের সংগে।
আর জো বাইডেন তো ফইন্নির ঘরের ফইন্নি, দুর্ঘটনায় সন্তান হারিয়েছে তবু আফঘানিস্তান সিরিয়ার দেবশিশুদের নিয়ে মাংসের কারবারের নরভোজী নেশা যায়নি তার।
নিরাপরাধ মানুষের জীবন নিয়ে রক্তের হোলি খেলে হোয়াইট হাউজ বারবার দেয়ালে চুনকাম করে সিএনএন ফক্স টিভির রংমিস্ত্রি দিয়ে। তবু তাতে দেখা যায় ছোপ ছোপ রক্তের দাগ।