মাসকাওয়াথ আহসানঃ
জিডিপি গ্রোথের উল্লম্ফনে লোটাস ফোটে কুঁড়ে ঘরে; উন্নয়নের “তাপস নিঃশ্বাস বায়ে” পাপিয়ামাণ্ডিতে “উন্নয়নের দুর্জয় শিখরে” ললিত লোভনকান্তি মাংসের লোফালুফি করে দেশপ্রেমের ধারাপাতেরা। পশ্চিম ইন পাঁচ তারা হোটেলের সুইমিংপুলে মারমেইডের কোটিদেশলগ্ন হয়ে রাজবদর খোকুন সোনা কাতলা মাছের মতো ভেটকি দিয়ে ছবি তোলে।
এতোদিন যে অধিকার বঞ্চিত টোকাইয়েরা মুখ শুকনো করে যুবরাজদের রাস উতসবে মোহনঘোটকিদের টুটি ফ্রুটি আইসক্রিম কামড়ে খেতে দেখতো; তাদেরও দিন আসে; লাইলাতুল ইলেকশনের পবিত্র রাত বদলে দেয় ভাগ্য।অন্ধ সেকেন্ড হোমারেরা বিবি-বাচ্চাকে ক্যানাডা-এমেরিকা-মালয়েশিয়া-দুবাই-এ পাঠিয়ে; কোঠের বাঁধা বাবু হয়; বুলবুলি আখড়াই করে। যুবতী নারীর কোল আর মৌরালা মাছের ঝোল; সঙ্গে দেশপ্রেমের হরিবোল।প্রগতিশীল সংস্কৃতিমামারা তাপস নিঃশ্বাসবায়ে পদ্মপুকুরে নিয়ে আসে জলকুমারী।
মদিনা সনদের অধীনে শোকরানা মেহেফিল হবার পর জান্নাতি বেগমের কপাল খোলে; ধর্ম-মামারা সোনারগাঁতে বেহেশতের হুর নিয়ে দুধের নহরের পাশে শুয়ে আঙ্গুর আপেল বেদানা খায়। কাভি খুশি কাভি ঘাম; কখনো বালিকা কখনো বালিকা নিয়ে ধর্ম মামা হুরের সুখে মাতোয়ারা হয়।প্রগতিমামা আর ধর্মমামা উন্নয়নের ঢেউয়ে লিবিডোর পদ্মপুকুরে সাঁতার কাটতে থাকে।
ফেসবুকে অনলাইন দেশ প্রেমের কথা বলে ঘরে বাইরের বিমলার ইনবক্সে দেশজপ্রেম ঢেলে দেয় ইতিহাসান মামা। বিমলা গয়না খুলে দেয় গরীব স্বদেশী আন্দোলনের নায়ককে। স্বদেশী করতে গেলে দেশপ্রেমিকের সুস্বাস্থ্য লাগে। গতরে চর্বি জমতে থাকে অনলাইন খেলনা বালকদের।
রাণী মাতা তাহাজ্জুদের নামাজ পড়ে ফুলের বাগানে দলীয় সাপ দেখে ক্ষুব্ধ হন। এলিট ফোর্সের হিটলারের জাতিস্মরকে ফোন করেন। বোট ক্লাবে সে কপিলার সঙ্গে “এই ব্লাউজ তোমাকে কে দিয়েছে” বলে; উন্নয়নের প্রশস্তি করছিলো । রাণী মাতার হুকুমে ছাপা পড়ে পাপিয়ামাণ্ডিতে; বন্ধ হয়ে যায় কোমল হরিণী নিয়ে জুয়া খেলার দেশপ্রেম কাসিনো।
অবশ্য বসুন্ধরার ছেলে হরিণী শিকার করে কাঁধে নিয়ে বীরের বেশে হেঁটে মাদার তেরেসা পুরস্কার জিতে নেয়। বসুন্ধরা যে দেশের চেয়ে শক্তিশালী; দেশপ্রেমিকেরা যেমন করোনার চেয়ে শক্তিশালী।
পাপিয়ামাণ্ডির বুলবুলি আখড়া ভেঙ্গে দেয় এলিট ফোর্সের জাতিস্মর। ওয়ার অন টেররের মতো অভিযান চালিয়ে একে একে গ্রেফতার হয়, লালপরী-নীল পরী। আদালতেরও হৃদয় আছে; আছে পরীর ডানায় ভালোবাসার আকাশে ওড়ার বাসনা; পরী তাই ডানা মেলে বলে, লাভ মি বিচ।
পরীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তারা হানিট্র্যাপ করে দেশপ্রেমিকের দুর্বল মুহূর্ত মুঠো ফোন বন্দী করেছে।
উপায়ান্তর না দেখে স্লাম ডগ মিলিওনিয়ারের গিয়ে প্রাচীন জলসাঘরে গিয়ে “টেকা দিছি; আমারে খুশিজল আইনা দে” বলে আর্তনাদ করে। কোণার টেবিলে বসা জলসাঘরের ছবি বিশ্বাস বিস্মিত হন। এখানে এতো উচ্চস্বরে কথা বলে কে! বেয়ারা এসে বলে, স্যার এরা কোটি কোটি টাকা দিয়ে মেম্বরশীপ কিনে দেশি মদের ভাটির মতো খোরারি করছে। নিষেধ করলে বলে, দুধ চা খেয়ে গুলি করে দেবো যা ফোট।
ছবি বিশ্বাসের এই উন্নাসিকতায় বিক্ষুব্ধ হয় স্লামডগ মিলিওনিয়ার। গলি থেকে রাজপথে, কুঁড়ে ঘরে থেকে রাজপ্রাসাদে পাগলপারা “থাগস অফ বেঙ্গল”। বাড়িতে লাখো বাতি জ্বেলে জানান দেয়, কীভাবে উন্নয়নের ধূলোমুঠি সোনামুঠি হয়েছে। ‘ সারেং বাড়ির সুরমা নাকি কপালেও লাগায় ‘।
ফইন্নির বাদশাহ এবার জিদ করে বলে, এইবার আমার জলসাঘরে বোম্বে থেকে বাঈজি এনে নাচাবো। বুড়াভাম ছবি বিশ্বাসরে দেখাইয়া দিমু।
স্লামডগ বিজনেস সিণ্ডিকেট চাল-ডাল-তেলের দাম বাড়ালে; উন্নয়ন সুসংবাদ মন্ত্রী বলে, এইগুলি স্বাধীনতার বিপক্ষের শক্তির “যন্ত্র ঐ একটাই ষড়যন্ত্র”।মধ্যবিত্ত ক্ষমতাকেল্লার উচ্চশহরের জিডিপি ফেস্টের চাপে ন্যায্য মূল্যের পণ্য বিক্রির ট্রাকের পিছে “মহীনের ঘোড়াগুলির মতো দৌড়াতে থাকে”। দ্রব্যমূল্য ঘোড়ার পিছে দৌড়ে ক্লান্ত তারা। ৯০০০ টাকা বেতন পাওয়া এক অসহায় পিতা কেঁদে কেঁদে রাজমাতাকে অনুরোধ করে, “দ্রব্যমূল্যঘোড়ার লাগাম টেনে ধরুন, ভাগ্য অবতার!”
চারিদিকে গুঞ্জন ওঠে, তেল ছাড়াও রান্না চলে; বিশেষণ ছাড়াও রূপস্থাপনা হয়; অনেক হয়েছে তেলাঞ্জলি; আর নয়।
এই ক্ষুধাক্লিষ্ট বিপন্ন নগরে; উন্নয়নের হাংগরেরা ডাইনিং টেবিলে কবজি ডুবিয়ে অষ্টপদ খায়; পেট ভরলে তথন হরিণীর নেশা জাগে।স্লামডগ মিলিওনিয়ার সংস্কৃতি মামা পাঁচতারা হোটেলে বোম্বে থেকে আনা বেবি ডল নাচায়।
স্লামডগ মিলিওনিয়ার ধর্ম মামা হুংকার দেয়, অশুদ্ধ হইয়া গেলো এ বিশুদ্ধ দেশ; বেলেল্লাপনা চলবে না!
একদিকে মহীনের ক্ষুধার্ত ঘোড়া দৌড়াতে থাকে দ্রব্যমূল্য ঘোড়ার পিছে; দেশপ্রেমের সহমত বোন বলে, এতে কোন ইজ্জত যায়না; জয় উন্নয়ন বলে এগিয়ে চলো।
অন্যদিকে দেশপ্রেমের ট্রেড মার্ক কোট পরে উন্নয়নের মেলস্ট্রিপাররা নাচতে থাকে “বেবিডল নিয়ে”।
সোনে সোনে পাতোলে লাক্ষা
সোনে সোনে পাতোলে ইয়াহ
আয়ে টাকদিয়া রেন্ডিয়া আংক্ষা
আয়ে টাকদিয়া রেন্ডিয়াহো
বেবি ডল মে সোনেদিইয়ে দুনিয়া,
ইয়ে দুনিয়া পিত্তলদি।