ডেস্ক রিপোর্ট : শ্রীলংকার বিপক্ষে ঢাকা টেস্টের প্রথম ইনিংসে ২৪ রানে ৫ উইকেট হারিয়েছিলো বাংলাদেশ। দ্বিতীয় ইনিংসেও একই চিত্র বাংলাদেশ ইনিংসে। এবার ২৩ রানে ৪ উইকেট নেই টাইগারদের। ফলে চতুর্থ দিন শেষে সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ টেস্টে হারের শঙ্কায় বাংলাদেশ।
অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুজের অনবদ্য ১৪৫ ও দিনেশ চান্ডিমালের ১২৪ রানের কল্যাণে প্রথম ইনিংসে ৫০৬ রান করে শ্রীলংকা। প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশের সংগ্রহ ৩৬৫ রান। ১৪১ রানে পিছিয়ে থেকে দ্বিতীয় ইনিংস শুরু করে দিন শেষে ৪ উইকেটে ৩৪ রান করেছে বাংলাদেশ। ৬ উইকেট হাতে নিয়ে ১০৭ রানে পিছিয়ে বাংলাদেশ।
মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত ম্যাচের তৃতীয় দিন শেষে ৫ উইকেটে ২৮২ রান করেছিলো শ্রীলংকা। ৫ উইকেট হাতে নিয়ে ৮৩ রানে পিছিয়ে ছিলো লংকানরা। অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুজ ৫৮ ও দিনেশ চান্ডিমাল ১০ রানে অপরাজিত ছিলেন।
চতুর্থ দিনের পঞ্চম ওভারেই ৩শ রান স্পর্শ করে শ্রীলংকা। এবাদতের করা ইনিংসের ১০৭তম ওভারের শেষ বলে বাউন্ডারি মেরে চান্ডিমালের সাথে জুটিতে পঞ্চাশ পূর্ণ করেন ম্যাথুজ।
১১৫ ওভার পর্যন্ত পাঁচ বোলার ব্যবহার করেন বাংলাদেশ অধিনায়ক মোমিনুল হক। তারপরও ম্যাথুজ-চান্ডিমাল জুটি ভাঙ্গতে হিমশিম খেতে হয় বোলারদের। তাই বাধ্য হয়ে ১১৬তম ওভারে প্রথমবারের মত নিজেকে বোলিংয়ে আনেন মোমিনুল। অকেশনাল বোলার হিসেবে চতুর্থ ডেলিভারিতেই উইকেট নিয়ে নিয়েছিলেন তিনি। টাইগার দলনেতার ডেলিভারি খেলতে গিয়ে ব্যর্থ হন চান্ডিমাল। বল যায় উইকেটরক্ষকের হাতে। বাংলাদেশের জোড়ালো আবেদনে চান্ডিমালকে আউটও দেন নন-স্ট্রাইকের আম্পায়ার। তবে রিভিউ নিয়ে বেঁচে যান চান্ডিমাল। রিপ্লেতে দেখা যায়, বল তার ব্যাটে লাগেনি। প্রথম ওভারে উইকেট পেয়েও, পেলেন না মোমিনুল।
৪৩ রানে জীবন পাবার পর টেস্ট ক্যারিয়ারের ২২তম হাফ-সেঞ্চুরি তুলে নেন চান্ডিমাল। অন্যপ্রান্তে রানের চাকা ঘুড়িয়েছেন ম্যাথুজও। সেঞ্চুরির দ্বারপ্রান্তে দাঁিড়য়ে মধ্যাহ্ন-বিরতিতে যান ম্যাথুজ। সেঞ্চুরি থেকে ৭ রান দূরে ছিলেন তিনি। শ্রীলংকার রান ছিলো ৫ উইকেটে ৩৬৯।
বিরতির পর ৯৪ রানে আউটও হয়ে গিয়েছিলেন ম্যাথুজ। পেসার খালেদ আহমেদের বলে ম্যাথুজকে কট আউট দিয়েছিলেন আম্পায়ার। কিন্তু রিভিউ নিয়ে এ যাত্রায় বেঁচে যান ম্যাথুজ। জীবন পেয়ে সেঞ্চুরির স্বাদ নিতে ভুল করেননি তিনি। নিজের মুখোমুখি হওয়া ২৭৪তম বলে মোসাদ্দেক হোসেনের ডেলিভারি লেগ সাইডে ঠেলে দিয়ে ১ রান নিয়ে টেস্ট ক্যারিয়ারের ৯৬তম ম্যাচে ক্যারিয়ারের ১৩তম ও বাংলাদেশের বিপক্ষে সেঞ্চুরি তুলে নেন ম্যাথুজ। সিরিজের প্রথম টেস্টেও সেঞ্চুরি করেছিলেন ম্যাথুজ।
সেঞ্চুরির পর আরও একবার রিভিউ নিতে বাঁচেন ম্যাথুজ। মোসাদ্দেকের বলে ক্যাচের আবেদনে আউট দিয়েছিলেন আম্পায়ার। তখন ১০৫ রানে ছিলেন ম্যাথুজ।
অন্যপ্রান্তে নাভার্স-নাইন্টিতে পৌঁছে যান চান্ডিমাল। এবাদতের করা ১৪৫তম ওভারের প্রথম দুই বলে বাউন্ডারি মারেন চান্ডিমাল। এতে ৯৯ রানে পৌছান তিনি। চতুর্থ ডেলিভারিতে ব্যাক ফুটে অফ-সাইডে খেলে ১ রান নিয়ে টেস্ট ক্যারিয়ারের ৬৬তম ম্যাচে ১৮১তম বলে ১২তম সেঞ্চুরির স্বাদ নেন চান্ডিমাল। ২০১৮ সালের জুনের পর টেস্টে সেঞ্চুরি করলেন তিনি। প্রিয় প্রতিপক্ষ বাংলাদেশের বিপক্ষে পঞ্চম সেঞ্চুরি তার।
দ্বিতীয় সেশনে ম্যাথুজ ও চান্ডিমালের জোড়া সেঞ্চুরির উপর ভর করে ৫ উইকেটে ৪৫৯ রান তুলে শ্রীলংকা। এসময় লিড ছিলো ৯৪ রানের।
আজ প্রথম দুই সেশনে সাফল্য না পেলেও, বিরতির পর জ¦লে উঠে বাংলাদেশের বোলাররা। শেষ সেশনের ১২তম বলে ম্যাথুজ-চান্ডিমাল জুটি ভাঙ্গেন এবাদত। তার স্লো ডেলিভারিটি কভার দিয়ে মারতে গিয়ে তামিমের দুর্দান্ত ক্যাচে ফিরেন চান্ডিমাল। ২১৯ বলে ১১টি চার ও ১টি ছক্কায় ১২৪ রান করেন তিনি। ষষ্ঠ উইকেটে ৪১৫ বলে ১৯৯ রানের জুটি গড়েন ম্যাথুজ ও চান্ডিমাল। বাংলাদেশের বিপক্ষে ষষ্ঠ উইকেটে এটিই সর্বোচ্চ জুটির রান।
এরপর শ্রীলংকার উইকেটরক্ষক নিরোশান ডিকবেলাকে ৯ রানে সাকিব ও রমেশ মেন্ডিসকে ১০ রানে বিদায় দেন এবাদত। ততক্ষণে ৫শ রান স্পর্শ করে ফেলে লংকানরা। নবম ব্যাটার প্রবিন জয়াবিক্রমাকে খালি হাতে ফিরিয়ে ইনিংসে পাঁচ উইকেট পূর্ণ করেন সাকিব। ৬১ ম্যাচের ক্যারিয়ারের ১৯তমবারের মত ইনিংসে পাঁচ উইকেট নিলেন সাকিব। শ্রীলংকার বিপক্ষে তৃতীয়।
আর লংকানদের শেষ ব্যাটার আসিথা ফার্নান্দো রান আউটের ফাঁদে পড়লে, ৫০৬ রানে গুটিয়ে যায় শ্রীলংকা। অন্যপ্রান্তে ১৪৫ রানে অপরাজিত থাকেন ম্যাথুজ। ৩৪২ বলে ১২টি চার ও ২টি ছক্কা মারেন তিনি।
বাংলাদেশের সাকিব ৯৬ রানে ৫ উইকেট নেন। এবাদত ১৪৮ রানে ৪টি উইকেট নেন।
১৪১ রানে পিছিয়ে থেকে খেলতে নেমে মহা বিপদে পড়ে বাংলাদেশ। প্রথম ৫ ওভারে বিপদ না আসলেও, পরের ৪ ওভারে ধস নামে বাংলাদেশ ইনিংসে।
ষষ্ঠ ওভারের প্রথম বলে শ্রীলংকার পেসার আসিথার ডেলিভারি ডিফেন্স করতে গিয়ে তৃতীয় স্লিপে ক্যাচ দেন তামিম। প্রথম ইনিংসের মত এবারও শুন্য হাতে ফিরেন তিনি।
তামিমের বিদায়ে উইকেটে এসে বিপদ আরও বাড়ান নাজমুল হোসেন শান্ত। অহেতুক রান নিতে গিয়ে রান আউট হন তিনি। পয়েন্টে ঠেলে রান নিতে গিয়েছিলেন শান্ত। সেখান থেকে থ্রোতে শান্তকে রান আউট করেন জয়াবিক্রমা।
শান্ত ফেরার পরের ওভারে মোমিনুল প্যাভিলিয়নের পথ ধরেন। পেসার রাজিথার অফ-স্টাম্পের ডেলিভারি ড্রাইভ করতে গিয়ে ব্যাট-বলের টাইমিং করতে পারেননি টাইগার নেতা। বল তার ব্যাটে লেগে উইকেটেরক্ষকের হাতে জমা পড়ে। এবার শুন্য থামেন মোমিনুল।
১৯ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে দল যখন ধুঁকছে, তখন প্যাভিলিয়নের পথ ধরেন ওপেনার জয়। আসিথার বাউন্সারে স্লিপে ক্যাচ দেন জয়। ২৭ বলে ৩টি চারে ১৫ রান করেন জয়।
২৩ রানে ৪ উইকেট পতনের পর দলের হাল ধরেন প্রথম ইনিংসের দুই নায়ক মুশফিকুর রহিম ও লিটন দাস। প্রথম ইনিংসে ২৪ রানে ৫ উইকেট পতনের পর জুটি বেঁেধছিলেন তারা। আজ দিনের শেষ সময়টা আর কোন বিপদ হতে দেননি মুশফিক ও লিটন। অপরাজিত থেকে যান তারা। মুশফিক ১৪ ও লিটন ১ রানে অপরাজিত। শ্রীলংকার আসিথা ২টি ও রাজিথা ১টি উইকেট নিয়েছেন।
দিএডিটর৩৬৫/এমআরএম