মাসকাওয়াথ আহসানঃ
একবার সূফি কবি বাহাল উল মজনুনকে দাওয়াত করেন আলেম জুনেদ বাগদাদী। বাহালুল খেতে খেতে জিজ্ঞেস করেন, বলুন দেখি খাদ্য গ্রহণের আচার কী?
জুনেদ উত্তর দেন, হাত ধুয়ে খেতে বসতে হবে, অল্প অল্প করে খাবার খেতে হবে, শব্দ করা যাবে না, হাত বেশি প্রসারিত না করে মুখে খাবার দিতে হবে, চেবাতে হবে ভালো করে, অতিথির খাওয়ার দিকে তাকানো অভব্যতা, খাওয়া শেষ হলে হাত খুব ভালো করে ধুতে হবে।
মজনুন রেগে বলেন, খেতেই শেখেননি, অথচ খাবার নিমন্ত্রণ করেছেন। মজনুন উঠে চলে গেলে, জুনেদ তার পিছু পিছু যান। জুনেদের সহমত ভাই বলে, ছেডেদিন ও পাগল, প্রেমে ব্যর্থ মজনু।
জুনেদ সাগরেদকে ধমক দেন, পাগল আসলে তুমি!
জুনেদ রাস্তায় গিয়ে বাহাল উল মজনুনের হাত ধরে বলেন, আমি আপনার কাছ থেকে খাওয়ার আদব শিখতে চাই।
মজনুন জিজ্ঞেস করেন, আপনি কে যেন!
-আমি জুনেদ বাগদাদী
-আপনি তো কথা বলতেই জানেন না। বলুন তো কথা বলার আদব কী!
— ধীরে ধীরে স্পষ্ট করে কথা বলা, নিজেই সব কথা না বলে অন্যকে বলতে দেয়া। মনোযোগ দিয়ে শোনা, তারপর আবার বলা।
মজনুন আবার রেগে যান, নাহ আপনি তো কিছুই জানেন না।
জুনেদ এবার আকুতি করেন, আমার ভুল কোথায় বলুন? আমিও তো একজন শিক্ষক!
বাহাল উল মজনুন বলেন, আলেম সাহেব, আপনি কতকগুলো সাধারণ নিয়মের কথা জানেন মাত্র। কিন্তু খাবার আদব হলো হালাল উপার্জনের খাবার খাওয়া। হারাম উপার্জনের খাবার আপনার বলা নিয়মগুলো মেনে খেলেও তাতে আদব আসেনা।
জুনেদ বাগদাদী জিজ্ঞেস করেন, আর কথা বলার আদব কী!
– পরচর্চা না করা, হিংসার কথা না বলা, চরিত্রহননের কথা না বলা, ভন্ডামির সুরে কথা না বলা,অন্যায়ের প্রতিবাদ জানানো আর সবসময় সত্য বলা। সুন্দর করে মিথ্যা বললে, অন্যের কাসুন্দির কথা মিষ্টি করে বললেও তাতে কথা বলার আদব থাকে না।