মাসকাওয়াথ আহসান
মার্কিন কর্মকর্তা রিচার্ড নোফিউকে সংবাদ সম্মেলনে দাঁড়িয়ে দুর্নীতিবাজদের স্যাংশানের ভয় দেখাতে দেখে কেঁপে যায় উন্নয়নের ঋষি-দরবেশ-মোল্লা-পুরুতের বুক। টিভিতে লোকটাকে দেখেই মাস্টার শেফ হারুনের সন্দেহ হয়; এই লোকটারে কই জানি দেখছি!
কিচেনে গিয়ে উপকমিশনার শেফকে ফোনে ভিডিও দেখিয়ে বলে, এই রিচার্ড নোফিউ লোকটারে খুব চেনা চেনা লাগে যে!
মাথায় বিদ্যুৎ ঝলকের মতো একটা ক্লু খেলে যায় উপকমিশনার শেফের, স্যার এইটা তো সেক্সপেয়ার!
পাশে ইলিশ মাছ ভাজতে ভাজতে; মাছের টুকরার ওপর হলুদ ছিটিয়ে ছিটিয়ে দিতে দিতে সহকারি কমিশনার শেফ বলে, গোস্তাকি মাফ করবেন স্যার; সেক্সপেয়ার না শেক্সপিয়ার!
–ঐ হইলো; আমরা তো আর ইংজিরি সাহিত্য নিয়া পড়িনাই। ভাবছি যার নাটকে খালি পেয়ার মহব্বত আর সেক্সের ছড়াছড়ি; তার নাম সেক্সপেয়ারই হইবো।
মাস্টারশেফ হারুন ধমক দিয়ে বলে, ফালতু প্যাচাল বাদ দেও; ঐ ডেপুটি শেফ তুমি ডাইলে বাগাড় দেও; পাঁচ ফোড়নটা মাপমতো দিও। আর ঐ এসিস্টেন্ট শেফ, মাছ ভাজা যেন মচমইচা হই; একদম মধুমতি নদীর ধারের ঐ হারুনের ভাত-ঘরের মতোন টেস্টি হওয়া চাই।
মাছ ভেঙ্গে এক টুকরো জিভের ওপর ফেলে দাঁত দিয়ে কাঁটাগুলো পিষে হারুন বলে, আমি একটু আইতাছি; তোমরা দশপদের খাওন রেডি করো; আর ফেসবুক লাইভ হইবো আইজ হারুন’স ডাইনে খেয়াল থাকে যেন!
এসিস্টেন্ট ও ডেপুটি শেফ কমিশনার সমস্বরে বলে, রজার দ্যাট; মেঝেতে পা ঠুকে মাছ ভাজার চামচ কপালে তুলে স্যালুট করে; এসিস্টেন্ট কমিশনার শেফ।
হোটেল সোনারগাঁতে রিচার্ড নোফিউ-এর রুমে রুম সার্ভিসের ভান করে খুশিজলের বোতল বাস্কেটে সাজিয়ে ঢুকে পড়ে মাস্টারশেফ হারুন।
–আর ইউ হাংরি স্যার!
–টু বি অর নট টুবি দ্যাট ইজ দ্য কুয়েশ্চেন!
–তার মাইনে ইউ আর হাংরি; আই ক্যান টেক ইউ টু হারুন’স ডাইন।
–ফেয়ার ইজ ফাউল ফাউল ইজ ফেয়ার; হাউ ফার ইজ দ্যাট!
–ফাইভ মিনিটস ড্রাইভ; লর্ড মিন্টো রোড, নিয়ার বাই স্যার ভেরি ক্লোজ।
–হোয়াই ডাজ দেয়ার ফেইট টার্ন ইন টু এশেস; ক্যান ইউ টেল মি!
–ফুড ফার্স্ট দেন ফিলসফি স্যার!
মাস্টারশেফ শেক্সপিয়ারকে নিয়ে হারুনের ভাতের হোটেলে এলে একজন নারী ডেপুটি শেফ ফুল দিয়ে স্বাগত জানায়, ডাবল, ডাবল টয়েল এন্ড ট্রাবল!
শেক্সপিয়ার মুচকি হেসে বলে, থ্যাংক ইউ লেডি ম্যাকবেথ।
শেক্সপিয়ারকে খেতে বসিয়ে; প্রথম আলো, ডেইলি স্টার, আনন্দবাজার, সমকাল, দেশ রুপান্তর পত্রিকা টেবিলে বিছিয়ে দিতে দিতে হারুন বলে, উই ইট উইথ ইনফরমেশন; উই রিমেইন আপডেটেড হোয়াইল হ্যাভিং ফুড।
হঠাত অপু বিশ্বাস এসে উপস্থিত হয় ফুটফুটে শিশুকে নিয়ে। হারুন শেলফ থেকে একটি ঝুনঝুনি এনে ধরিয়ে দেয় শিশুটির হাতে।
শেক্সপিয়ার বলে, আরে জুলিয়েট তোমার রোমিও কোথায়!
–রোমিও রোমিওর কাজে ব্যস্ত। আমাকে একটি দেবশিশু ধরিয়ে দিয়ে সে আ মিড সামার নাইটস ড্রিম করে বেড়াচ্ছে!
এমন সময় সুড়ঙ্গ নাটকের নায়িকা তার পরিচালক সহ হারুনের ভাতের হোটেলে খেতে এলে, শেক্সপিয়ার বলে, আরে তাতিয়ানা তুমি মধ্যগ্রীষ্মের রাতের স্বপ্নে বটম নামের যে লোকটার সঙ্গে গোপন প্রেম করলে, লোকটাকে গাধায় পরিণত করলে যে!
হারুন আমোদিত হয়, ডেপুটি শেফ কমিশনারকে জিজ্ঞেস করে, ফেসবুক লাইভ চলতেছে তো!
–কপি দ্যাট স্যার ওভার ওভার!
হঠাত গয়েশ্বর রায় এসে উপস্থিত হয় হারুন’স ডাইনে; পেছনে পেছনে হিরো আলম। গয়েশ্বর রায় বলে, ও ভাই হারুন, এই হিরোকে যতবারই বলি ওরে বাবা আমি রিজভী নই; আমি গয়েশ্বর; সে বিশ্বাস করেনা।
হিরো আলম অভিযোগ করে, ঐ লোকটি আমাকে অর্ধশিক্ষিত ও অর্ধ পাগল বলেছে।
শেক্সপিয়ার হেসে বলে, এ যে দেখছি কমেডি অফ এররস। আরে বাবা সুট টাই পরা পেট মোটা শিক্ষিতদের যে শিক্ষার মান দেখলাম; এই তল্লাটে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে না পড়াই ভালো রবিন!
–আমার নাম হিরো আলম!
–ঐ হলো তুমি মিড সামার নাইট’স ড্রিমে বলেছিলে, আমি চল্লিশ মিনিটে এই পৃথিবীর চারপাশে মালা পরাবো!
বাচ্চা কোলে নিয়ে পরীমণি এসে ঢুকে হারুনকে জিজ্ঞেস করে, বাচ্চাটার একটা নতুন নাম দিতে চাই; এনি সাজেশন।
শেক্সপিয়ার মুচকি হাসে, মিরান্ডা তোমার ফার্দিনান্দ কোথায়; তুমি প্রসপেরোর এখানে কী করছো!
–আর বলবেন না! ফার্দিনান্দ তো দেখলাম শেষ পর্যন্ত ক্যালিবানের মতো বিহেভ করলো! পুরুষ মানুষকে বিশ্বাস করাও পাপ!
হারুন জিজ্ঞেস করে, মিরান্ডা তোমার বাচ্চাটার কটা দাঁত উঠলো!
মিরান্ডা টেবিলে পাতা একটা পত্রিকার খবর দেখিয়ে বলে, এই যে এইখানে আপডেট আছে!
দশপদের খাবারে টেবিল ভরে উঠলে মাস্টারশেফ শেক্সপিয়ারকে একটু ভাত তুলে দিয়ে বলে, ১৯৪৭ সালে দেশটা ছাইড়া যাওয়ার পরে অনেক ভাতের কষ্ট আপনার। শুনছি আপনাদের দেশে দুইটার বেশি লেবু, একটার বেশি ডিম, চারটার বেশি মরিচ বেচেনা দোকানে। খুব খাওয়ার কষ্ট নাকি ঐখানে!
–নিশ্চয়ই মার্চেন্ট অফ ভেনিস শাইলক ভাঁওতাবাজি করে এসব খবর দিয়েছে! তুমি তো দেখছি এন্টোনিওর মতো বোকা! শাইলককে কী কেউ বিশ্বাস করে! শাইলক আর তার শ্যালকেরা দেশটাকে দুর্নীতি করে ঝাঁঝরা করে দিয়েছে; এইখানে শুনলাম মাংসের স্বাধীনতা নাই!
–থাকবে না কেন স্যার একটু গরুর ভুনা দিই; তেলে ভাসাইয়া ঘন পেয়াজ দিয়া ভাইজা রেডি করছে আমাদের ডেপুটি শেফ কমিশনার!
সাদা চুল নিয়ে লম্বা জয়নাল আবেদীন এসে ঢোকে হারুনের ভাতের হোটেলে!
শেক্সপিয়ার চমকে উঠে বলে, তুমি মেযার ফর মেযার নাটকের ক্লওডিও না! তুমি তো ডিউকের লোক এঞ্জেলোর হাতে মার খেয়েছিলে!
হারুন বিব্রত হয়ে বলে, চুলে কলপ করে ঘুরলে তো স্যার জয়নাল ভাইকে তাগড়া জোয়ান মনে হয়। যুবদল নেতা ভাইবা হয়তো পুলিশ লীগের এঞ্জেলো তার ওপর গোপালী কুস্তিগীরের মতো ঝাঁপিয়ে পড়েছিলো! মাফ কইরা দেনগো জয়নাল ভাই। আসেন পদ্মার ইলিশ দিয়া পেটপূজা করেন!
জয়নাল রেগে বলে, হারুনের ভাতের হোটেলের পানিও স্পর্শ করবো না! আমি তো গয়েশ্বর না; যে গোপালী কুস্তিগীর দিয়া পিটাইয়া রক্তাক্ত কইরা তারপর ব্যান্ডেজের উপর টুপি পরাইয়া “মনসুরের মায়ের মতো” খাওয়াইয়া ভিডিও ছাইড়া “খাওয়ার খোঁটা দেবার” পরেও আবার হাসিখুশি থাকবো!
অপু বিশ্বাস আনন্দ বাজার দেখিয়ে বলে, দেখেছেন জয়নাল ভাই; আপনার ছবি ভেবে ওরা শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীনের ছবি ছেপেছে।
শেক্সপিয়ার অট্টহাসি হেসে বলে, কমেডি অফ এররস।
হারুন চোখ দুটো মার্বেলের মতো ঘুরিয়ে শেক্সপিয়ার জিজ্ঞেস করে, দুর্নীতিবাজদের ওপর কী স্যাংশান আসবে স্যার!
–হোয়াই ডাজ দেয়ার ফেইট টার্ন ইন টু এশেস; ক্যান ইউ টেল মি!
মাসকাওয়াথ আহসান, সম্পাদক, দ্য এডিটর থ্রি সিক্সটি ফাইভ, প্রধান সম্পাদক, ই-সাউথ এশিয়া