ঘুড়ি ওড়ানোর দিন
শৈশবের ঘুড়ি ওড়ানোর দিনগুলো
অনেক দূরে ফেলে এসেছি,
ফেলে এসেছি মফস্বলি শহর
পাড়ার মধ্যে আমিই প্রথম
আকাশে ঘুড়ি ওঠাতাম
আর তোমার বাড়ির মাথার ওপরে
অনেকক্ষণ পাক খেয়ে উড়ত সেই ঘুড়ি
তোমাকেই ভালবেসে।
মাঝে মাঝে গোত্তা দিয়ে
সেই ঘুড়ি প্রায়ই নামিয়ে দিতাম
তোমাদের ছাদে,
আবার উঠিয়ে দিতাম নীলআকাশে,
ম্যাজিক দেখতে, মজা পেতে তুমি,
তোমার আনন্দ দুচোখের ভাষা
কাউকে না জানিয়ে রেখে দিতাম
বুকের গভীরে ।
ছাদের ওপরে বসে
শীতের রোদ পোহাতে পোহাতে
তুমি খেতে কুলের আচার।
পথে দেখা হলে তুমি যেন কিরকম
হয়ে যেতে বিস্ময় বালিকা!
আমাকে দেখেও দেখোনি,
চোখ নামিয়ে নিতে।
আমিও কাছাকাছি এসে
চোখ নামিয়ে নিয়ে চলে যেতাম
পাশ কাটিয়ে ।
একদিন বিদ্যালয়ের পাঠ শেষ,
ঘুড়ি ওডানোর দিনও শেষ।
যৌবনে পা দিয়ে এতবড় পৃথিবীর
কে যে কোথায় ছিটকে গেলাম!
তবু আকাশে ঘুড়ি দেখলে
মাঝে মাঝে স্মৃতিতে ফিরে আসতে তুমি
অথচ কেউ কখনো বলিনি কাউকে মুখফুটে
‘ভালোবাসি ‘।
হঠাৎ সেদিন গভীর রাতে
ফেসবুকে ফিরে এলে তুমি
সুদূর ইউএসএ থেকে
ফ্রেন্ডলিস্টে রিকোয়েস্ট ।
অ্যাকসেপ্ট করতেই উল্লেখ করলে
সেই ঘুড়ি ওড়ানো দিনগুলের কথা,
ছাদে বসে রোদে পুড়ে
কুলের আচার খাওয়ার কথা।
স্বামী ডাক্তার,
এক কন্যা এক পুত্রের সুখী জননী।
মুহূর্তে ফিরে পেলাম
রূপকথার মতো ঘুড়ি ওড়ানোর দিন,
কেন যে ফিরে এলো,
যেন যাদুবাস্তবের পৃথিবী!
সিনেমার মতো কিছুই ঘটবে না,
তবু কেন ফিরে এলো ?
মফস্বলি শহরের সেইসব পথঘাট,
কেউ কারো সঙ্গে কথা না বলে
চোখ নামিয়ে পাশ কাটিয়ে চলে যাওয়া,
আর হঠাৎ আজ ফেসবুকে
ঘুড়ি ওড়ানোর দিনগুলোর
ফিরে আসা,
কি বলব তোমাকে প্রেমিকা?
না বান্ধবী?
বুকের ভেতরে নির্ঝরিণী নদী কুল কুল জেগে উঠছে–
আমাদের সেইসব দিন অপাপবিদ্ধ থাক…
## ২৪ ডিসেম্বর ২০২১। সকাল।