সাব্বির রেজার কবিতা
কাক ডাকা ভোর বেলায়
লাঙল জোয়াল কাঁধে ফেলে
মদ্দি চরের ভূঁইতে হাল
বাইতে যেতো বাবা–
সকাল থেকে সাঁঝ অব্দি,
বাবার অপেক্ষায়
অপেক্ষায় কেটে যেতো
আস্ত দিন–
বাবা ফিরতো গোধূলী বেলায়,
লাঙল জোয়াল চগোটা কাঁধে করে
কালো দামড়ার পায়ের
ছন্দে ছন্দে পা ফেলে ফেলে–
বাবা আর ফেরেনা এখন,
বাবার অপেক্ষায়
অপেক্ষায় রাত হয়ে যায়!
শত শত গোধূলী বেলা
ফিরে গেলো মুখ ভার করে-
বাবা আর ফেরে না-
ফিরবে না কোনদিন-
বাবার জায়নামাজ,
তসবিহ টুপি তোলা আছে দেরাজে –
চশমায় ধৃলা জমে রোজ,
দেয়ালে টাঙানো বাবার সফেদ দাড়ির ছবিটা
আস্তে আস্তে ফিকে হয়ে যাচ্ছে–
খয়েরবাগানের প্রতি হাটবারে ,
হাট ফেরা হাটুরিয়াদের ভীড়ে,
বাবাকে খুুঁজি প্রতি হাটবারে–
উঠোনে বাবার পায়ের আওয়াজ
শুনিনা কতকাল
দরাজ গলায় বাবা আর
নাম ধরে ডাকবে’না কোনদিন !
বাবা ছিলো উদার আকাশ-
মাথার ওপর আকাশের মুড়োমুড়ি ছায়া
এখন মাথার ওপর খরখরে রোদ
চৈত্র সংক্রান্তির মেলা শেষ হয়ে গেলেও,
ফেরে না বাবা !
ঈদের জামাত শেষ হয়ে গেলেও
বটতলায় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করি-
বাবা যদি ফিরে এসে
নাম ধরে ডাক দিয়ে বলে –
খোকা বাড়ি যাই চল–
বাবা হলো লাল ঘুড়ি, লাল জামা, ঝুমঝুমি –
ডাংগুলি -লাটাই-
বাবা মানে ঘোড়া ঘোড়া খেলা,
বাবা হলো অবারিত খোলা প্রান্তর,
বিশুদ্ধ বাতাস
মাথার ওপর আকাশের মুড়োমুড়ি স্নেহের ছায়া–
বাবা হলো বিশ্বাস,দুর্জয় সাহস,
প্রচণ্ড ঝড়ের মধ্যেও
নির্ভয়ে হাত ধরে হাঁটা–
বাবা হলো ঘোর সংকটে আলোর বাতিঘর
বাবা নেই, বাবা আছে–
বাবা এখন স্বপ্নহীন ঘুমিয়ে আছে
কারিগর পাড়ার বারোয়ারি গোরস্তানের –
বাঁশ বাগানের নরম ছায়ায়।
বাবা আর জাগবেনা –
বাবা আর ফিরবেনা !
বাবাই শিখিয়ে ছিলো –
কী ভাবে অন্ধকার ঠেলে ঠেলে
আলোর পথে হেঁটে যেতে হয় ?
বাবা নেই -বাবা আছে-
আজো বাবার-দেখানো পথেই
অন্ধকার ঠেলে ঠেলে ক্রমাগত হেঁটে যাচ্ছি–