বিমলকান্তি দে
মাথার উপর দিয়ে দিগন্ত পেরিয়ে যায়
জ্যোৎস্না-প্লাবিত নীলাকাশ
মাঝে মাঝে একখন্ড শাদা মেঘ যেন
নিঝুম দ্বীপের মতো একাকিনী ভাসমান।
আমরা চলছি ধেয়ে দীঘল স্বরাতের টানে ভাঁটি গাঙ বেয়ে
জানিনা সে কোন অজানায় । অযান্ত্রিক নৌকো নয়,
যান্ত্রিক কেড়য়ালে হাঁক দেয় ভুসুকু বাঙাল–
বাহ তু ডোম্বী , বাহ লাে ডােম্বী, বাটত ভইল উছারা।
পায়ের তলায় সেই ব্রহ্মপুত্র ভেসে যায় বন্যার জলে
শরতের ভাঁটা যেন তরঙ্গবিহীন নদে চলমান অকূল পাথার।
উজান ভাঁটির পথে নৌকা চলে অলস চরণে।
এপার ওপারে যত দীর্ঘকায় দৈত্যের ছায়া
শিশুকে দেখায় ভয় অন্ধকার নদীতটে তেঁতুল তলায়।
সহসাই গা বাঁচিয়ে হেঁটে যায় নিঃশব্দ বাতাস
কুমারীর লজ্জা বুকে নিয়ে —
চোখে তার কৌতূহল,অপার বিস্ময় !
ভিতরের পাটাতনে পাটির বিছানে
জমাট আসরে বসে গায়কের দল ,
প্রাণ খুলে গান গায় সুনীল বাউল ,
সারিন্দা বাজায় সাথী বাদক রবীন
মনে মনে ছবি আঁকে দুলাল গায়েন
তটিনী তরঙ্গে রঙ্গে অন্য কেউ বাজায় ঢোলক।
দুপাশে জলের স্বরাতে, গায়ে লাগে হিমেল বাতাস,
মাথার উপরে জাগে ভাসমান মেঘখন্ড,
পূর্ণিমার চাঁদ হয়ে যুবতী জ্যোৎস্না হাসে শিহরিত তরঙ্গের মুখে।
আজকের সুখ স্মৃতি আনন্দের মৃদু গুঞ্জরণ
নিসর্গের অকৃপণএই আপ্যায়ন বিশাল প্রাপ্তির মতো
যেন এক অমিত সম্পদ-সুখ, মৃতসঞ্জীবনী–
জীবিকার যাঁতাকলে ক্লিষ্ট কিন্ন মানবের মন
সুধাপানে একদিন ফিরে পাবে তারুণ্য যৌবন।
অমোঘ নিয়মে চলে বিশ্ব চরাচর
চলমান আমাদের অনৃত জীবন, আর
সুখের –স্বপ্নের যত রঙীন ফানুস ওড়ে আকাশের গায় ।
সুতরাং বন্ধুগণ, এসসা আরবার, ফিরে যাই কঠিন ডাঙায়।