মাদক মামলায় নায়িকা পরীমনি ও প্রযোজক নজরুল ইসলাম রাজের চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।
বৃহস্পতিবার তাদের ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করে পুলিশ। এরপর মামলার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য তাদের বিরুদ্ধে সাত দিনের রিমান্ডের আবেদন করেন মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা বনানী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) শেখ সোহেল রানা। শুনানি শেষে ঢাকা মহানগর হাকিম মামুনুর রশীদ প্রত্যেকের চার দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
বৃহস্পতিবার বিকেলে বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নূরে আজম মিয়া জানান, নায়িকা পরীমনি ও প্রযোজক নজরুল ইসলাম রাজের বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণে আইনে পৃথক মামলা হয়েছে।
এরআগে বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে র্যাব সদরদফতর থেকে কালো একটি মাইক্রোবাসে তাদের বনানী থানায় নেয়া হয়। পরে তাদের বনানী থানায় হস্থান্তর করে র্যাব। বনানী থানায় র্যাব বাদি হয়ে পৃথক দু’টি মামলা করে।
এদিকে, র্যাব সদরদফতরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘সুনির্দিষ্ট কিছু অভিযোগের ভিত্তিতে পরীমনির বাসায় অভিযান পরিচালনা করা হয়। এ সময় তার বাসা থেকে বিভিন্ন মাদকদ্রব্য উদ্ধার করা হয়। পরে প্রযোজক নজরুল ইসলাম রাজের বাসা থেকেও বিপুল পরিমাণ মাদক ও সিসার সরঞ্জাম জব্দ করা হয়।
র্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালতের একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে বুধবার বিকেলে পরীমনির বনানীর বাসায় অভিযান চালায় র্যাব। প্রায় ৪ ঘণ্টার অভিযান শেষে রাত ৮টার দিকে তাকে আটক করে র্যাব সদরদফতরে নিয়ে যাওয়া হয়। এ সময় তার বাসা থেকে বিপুল পরিমাণ মাদক জব্দ করার কথা জানায় র্যাব।
এরপর রাত সাড়ে ৮টার দিকে প্রযোজক ও অভিনেতা নজরুল ইসলাম রাজের বাসায় অভিযান শুরু করে র্যাব। পরীমনির দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে র্যাব সদস্যরা রাজের বাসায় অভিযান চালায়। প্রায় দু’ঘণ্টার অভিযান শেষে রাজকে বনানীর বাসা থেকে আটক করে রাত সাড়ে ১০টার দিকে তাকে র্যাব সদরদফতরে নিয়ে যাওয়া হয়। রাজের বাসা থেকেও মাদক এবং পর্নোগ্রাফি তৈরির সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়।
এছাড়া এ অভিযানে নায়িকা পরীমনি ও প্রযোজক মো. নজরুল ইসলাম ওরফে রাজ ছাড়াও তাদের দু’ম্যানেজার মো. আশরাফুল ইসলাম দীপু (২৯) (পরীমনির ম্যানেজার) এবং মো. সবুজ আলীকে (৩৫) (রাজের ম্যানেজার) আটক করা হয়।
র্যাব জানিয়েছে, পরীমনি ২০১৬ সাল থেকে মাদক সেবন করেন। এমনকি ভয়ঙ্কর মাদক এলএসডি ও আইসও সেবন করতেন তিনি। তার বাসায় একটি মিনি বারও রয়েছে। তিনি বাসায় নিয়মিত মদের পার্টি করতেন। চলচ্চিত্র প্রযোজক নজরুল ইসলাম রাজ পরীমনির বাসায় এসব মাদক সরবরাহ করতেন।
কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানান, মঙ্গলবার রাতে রাজধানীর বসুন্ধরা এলাকায় অভিযান চালিয়ে শরিফুল হাসান ওরফে মিশু হাসান এবং তার সহযোগি মো. মাসুদুল ইসলাম ওরফে জিসানকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে এ ৪ জনকে আটক করা হয়।
অভিযানকালে পরীমনির বাসা থেকে বিভিন্ন সরঞ্জামাদিসহ ৩৩ বোতল বিভিন্ন ধরনের বিদেশী মদসহ দেড় শতাধিক ব্যবহৃত বিদেশী মদের বোতল, ইয়াবা ও শিশা সামগ্রী, এলএসডি, আইস ও ইলেকট্রনিক ডিভাইস উদ্ধার করা হয়।
র্যাবের এ কর্মকর্তা জানান, গ্রেফতারকৃত পরীমনিকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, তিনি পিরোজপুরের কলেজে এইচএসসি অধ্যায়ণরত অবস্থায় চিত্র জগতে প্রবেশ করেন। তিনি ২০১৪ সালে চিত্র জগতে অন্তর্ভূক্ত হন। এ পর্যন্ত তিনি ৩০টি সিনেমা এবং ৫ থেকে ৭টি টিভিসি’তে অভিনয় করছেন।
পিরোজপুর থেকে ঢাকায় এসে চিত্র জগতে একটি দৃঢ় অবস্থান তৈরীতে নজরুল ইসলাম রাজের একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল।
র্যাবের আইন ও গনমাধ্যম শাখার মূখপাত্র বলেন, রাজ জিজ্ঞাসাবাদে জানান, তিনি ১৯৮৯ সালে খুলনার একটি মাদ্রাসা থেকে দাখিল পাশ করেন। পরবর্তীতে ঢাকায় গ্রাজুয়েশন সম্পন্ন করেন। তিনি বিভিন্ন ব্যবসা বানিজ্য ও ঠিকাদারী কাজ শুরু করেন। পাশাপাশি শোবিজ জগতেও তার অনুপ্রবেশ ঘটে। বিভিন্ন সিনেমা বা নাটকে তিনি নানান চরিত্রে অভিনয়ের সাথে সাথে নামে বেনামে প্রযোজনায় যুক্ত হন। রাজ মাল্টি মিডিয়া নামেও তার একটি প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। ব্যবসায়িক জগত ও চিত্র জগতের দু’ক্ষেত্রে তার সংযোগ থাকায় তিনি অতিরিক্ত অর্থ লাভের আশায় উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে নিজ অবস্থানের অপব্যবহার করেন।
র্যাব আরও জানান, রাজ ইতোপূর্বে গ্রেফতারকৃত শরফুল হাসান ওরফে মিশু হাসান এবং মাসুদুল ইসলাম ওরফে জিসানের সহযোগীতায় ১০ থেকে ১২ জনের একটি সিন্ডিকেট তৈরী করেন।
এ সিন্ডিকেটের সদস্যরা রাজধানীর বিভিন্ন অভিজাত এলাকায় বিশেষ করে গুলশান, বারিধারা ও বনানীসহ বিভিন্ন এলাকায় পার্টি বা ডিজে পার্টির নামে মাদক সেবনসহ নানাবিধ অনৈতিক কর্মকান্ড চালিয়ে আসছিল।
কমান্ডার খন্দকার মইন জানান, এছাড়া তাদের পার্টিতে অংশগ্রহণকারীদের নিকট থেকে সিন্ডিকেট সদস্যরা বিপুল পরিমান অর্থ পেয়ে থাকেন। অংশগ্রহণকারীরা সাধারণত উচ্চবিত্ত অভিজাত পরিবারের সদস্য। প্রতিটি পার্টিতে ১৫ থেকে ২০ জন অংশগ্রহণ করত। এছাড়া সিন্ডিকেটটি বিদেশেও প্লেজার ট্রিপের আয়োজন করত। একইভাবে উচ্চবিত্ত প্রবাসীদের জন্যেও দুবাই, ইউরোপ ও আমেরিকায় এ ধরণের পার্টির আয়োজন করা হত।
দিএডিটর৩৬৫/এমআরএম