১৪ জুন রাত এগারোটায় প্রচারিত হলো ইলেকশন স্পেশাল শো’র প্রথম পর্ব। ঢাকা-১৭ আসনের আসন্ন উপনির্বাচনের প্রার্থী সংস্কৃতি সেবক ও জননেতা হিরো আলম এর অতিথি ছিলেন। আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন; দ্য এডিটরের প্রধান উপদেষ্টা ডা আব্দুন নূর তুষার।
এক ঘন্টার অনুষ্ঠানে হিরো আলম একজন প্রতিশ্রুতিশীল তরুণ জননেতা হিসেবে প্রজ্ঞার সঙ্গে সব প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন। পারসোনালিটি ইন্টারভিউ করা আমার প্যাশন। জীবনের নানা হাঁটা পথের মানুষের ইন্টারভিউ করেছি দীর্ঘ সাংবাদিকতা জীবনে।
হিরো আলমের ইন্টারভিউ ছিলো আমার জন্য নতুন একটি অভিজ্ঞতা। জীবনের স্কুলের শক্তি যে কথিত প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার চেয়ে অনেক মৌলিক ও মানবিক; হিরো আলমের সঙ্গে কথা বলে ঠিক সেই প্রশ্নটাই ঘুরপাক খাচ্ছে মাথায়।
হার্ট অফ ডার্কনেস’-এ লেখক জোসেফ কনরাড প্রশ্ন করেছেন, সভ্যতার স্রোত কী টেমস থেকে কঙ্গোর দিকে নাকি তার উল্টোদিকে। আমার প্রশ্ন জাগছে, সভ্যতার পথ ঢাকা থেকে বগুড়ার দিকে; নাকি ঠিক তার উলটো দিকে।
যৌগিক অসত প্রতারক লুন্ঠক অপরাধী তেলাঞ্জলি আসরের শাসক-শোষক-পরিতোষক-ভণ্ড সংস্কৃতি সেবক-বিদূষক-স্থূল সৌন্দর্য্য ধারকদের দেখে চোখ পচে গেছে সাধারণ মানুষের। ওদের শুনে কান পচে গেছে শ্রোতার।
হিরো আলমকে দেখা মানে এইসব রাজনীতির হালুয়া-রুটি ভাগের-লুন্ঠন-পাচারের-হেলমেট হাতুড়ির- ঠুনকো ভাবমূর্তি রক্ষার কলতলা অপসংস্কৃতির বাইরে সবুজ নিসর্গ দেখা; স্বচ্ছতোয়া নদী দেখা, উদার আকাশ দেখা-স্বপ্নের সমুদ্র দেখা।
এই যে দেশের প্রচলিত শিক্ষা-ব্যবস্থা, সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ; যেখান থেকে পাশ করে আসা রাজনীতিক-আমলা-তাদের সহমত ভাই; সম্মিলিত থাগস অফ বেঙ্গল; দেশটাকে খুবলে খেয়ে লুন্ঠন করে; বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড করে; পাণ্ডা পাঠিয়ে ভয় দেখিয়ে চাঁদাবাজি করে; দেশের মানুষকে নিজভূমে পরবাসী করে দেশজ উপনিবেশ কায়েম করেছে; প্রশ্ন দাঁড়াচ্ছে শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানগুলো কী অসততা শিক্ষা দেয়; দুর্নীতির উচ্চাভিলাষ গড়ে দেয়; লুন্ঠন করে টাকা পাচার শেখায়; হত্যা ও ধর্ষণ করে নির্বিকার থাকতে শেখায়। বিশ্ববিদ্যালয় কী অপরাধীকে অনুতাপহীন থাকার প্রশিক্ষণ দেয়!
এই যে হিরো আলম যে এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যায়নি; তারমধ্যে সততা-দেশপ্রেম-মানবিকতা সব বেঁচে আছে; তার বগুড়ার সমাজ তাকে স্বপ্ন দেখতে শিখিয়েছে। যে স্বপ্ন মানুষকে ভালোবাসার আর মানুষের ভালোবাসা পাবার।
হিরো আলমের মানসিক দূষণ না ঘটার কারণ সে ঐ থাগস অফ বেঙ্গল তৈরির স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে যায়নি।
হিরো আলমের মতো যারা স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে পার্টি করে খাওয়া শেখেনি; ঘুষ খেয়ে বাঁচা শেখেনি; তারাই বাংলাদেশকে স্বাধীন করেছে; শ্রমে ও ঘামে এ দেশটাকে বাঁচিয়ে রেখেছে। অর্থনীতির চাকা সচল রেখেছে। এই ঠগীদের বিদ্যালয়ে না পড়া লোকেরা যারা; শিক্ষাগত যোগ্যতার জায়গায়; অশিক্ষিত লেখে; তারাই বাংলাদেশের ত্রাণকর্তা।
কী থাকে পাঠ্য পুস্তকের অভিশপ্ত কালো হরফে; যা দেশকে কালো মেঘে ঢেকে দেয়; ডিজিটাল সিকিউরিটি এক্টের বিধিমালা সেই কালো হরফে লেখা হয়; ক্রসফায়ারকে স্বাভাবিক মৃত্যু দেখাতে ঐ কালো হরফে পুলিশ একটা কালো গল্প লেখে; কালো সাংবাদিকেরা কালো হরফে সেই কালো হত্যা চাপা দেয়া ফিকশন ছাপে। কী থাকে নির্বাচন কমিশনের কালো হরফে লেখা বিধিতে যা; ভোটসমনিয়া রোগ তৈরি করে। সৎ কৃষকের ছেলে অক্ষর জ্ঞান পেলেই কেন অপরাধী আমলা হয়!
এই যে হিরো আলমের মতো মৌলিক মানুষেরা যারা হাজার বছর ধরে শৃংখলিত বইয়ের মানুষের হাতে। বইয়ের মানুষেরা ঘাতক হয় কেন! বই পুস্তক কী মানুষ মারার সবচেয়ে বড় অস্ত্র।
ঐ যে কালো হরফে নেতার ভাষণ লেখা হয়; কালো হরফ মিথ্যা কথা বলে; মিথ্যা আশ্বাস দেয়; রাষ্ট্র-গণতন্ত্র-সংবিধান কঠিন কঠিন কথা বলে বইয়ের মানুষেরা হিরো আলমদের কারাগারে ঢোকায়; সমস্ত রাষ্ট্রই কারাগার হয়ে ওঠে আইনের বইয়ে পুলিশের কালো হরফের মিথ্যা অভিযোগ নামায়।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কী তবে উপনিবেশ আর কারাগার বানাতে শেখায়। হিরো আলমের উচ্চারিত শব্দের স্বকীয়তা; মমতা; সরলতা; এসবই নষ্ট হয়ে যায় দেশে-বিদেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরাট ডিগ্রি নিয়ে রাষ্ট্র-পরিচালনার কিংবা লোক ঠকানোর ব্যবসার বড় চেয়ারে বসলে।
বাংলাদেশের লুন্ঠকেরা লুন্ঠনের টাকায় ছেলে-মেয়েকে বিদেশে জমিদারি পরিচালনা শিখিয়ে এনে রাজনীতি-সংসদ-মন্ত্রীসভা-নগরসভা-ব্যাংক-ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান; এইসব শিক্ষিত বাটপারির দুষ্টচক্রে চিফ হিট অফিসার হিসেবে গদিনশীন করছে। আমি আমি আমি-র বানর-নৃত্যের ভীড়ে;
দলছুট হিরো আলম; তার বাবা দেশ ডাকাতি করেনি; বিরাট বাবা হয়নি; ফলে দেশবাসীকে হিট করে বেড়ানোর শিক্ষা দেননি।
তিনি একজন ছোট খাট মানুষের ঈশ্বর নিশ্চয়ই; নইলে অমন সরল সন্তান গড়ে তোলেন কীকরে! হিরো আলমের মা বাংলা মায়ের প্রতীক। এমন সন্তান জন্ম দিও বাংলা মা; যারা দেশের হৃদপিণ্ড, চোখ, ফুসফুস খুবলে বিক্রি করে সুইস ব্যাংকে টাকা জমাবে না।
আমাদের অতো শিক্ষা-অর্থ কিছু দরকার নাই। আমাদের শুধু ভালোবাসা চাই। আমার সোনার বাংলা; আমি তোমায় ভালবাসি।
মাসকাওয়াথ আহসান
সম্পাদক, দ্য এডিটর থ্রি সিক্সটি ফাইভ ও প্রধান সম্পাদক, ই-সাউথ এশিয়া
ভালো লাগলো। হিরো আলম নির্বাচন সুষ্ঠু হলে জয়লাভ করবে। শুভকামনা।
best of luck Hero Alam.