শংকর হালদার
তুমি আসবে বলে হে রবীন্দ্রনাথ
সকাল বিছিয়ে বসে আছি
রোদের ফুলে ভরিয়ে রেখেছি সারাটা উঠোন
নবান্নের সুবাস বুকের পাত্রে ঢাকা
তুমি আসবে বলে
রঙীন চুড়ি – – – লিপস্টিক – – – –
আর লাল টক্-টকে টিপের পাতা কিনেছে
আমার মহাশ্বেতা
নাইবা থাকলো তার পরণে
ঢাকাই শাড়ী – – – কপালে সিঁদুর – – – –
তুমি এলেই আবার আর্মানী গীর্জের ঘড়ি
বেজে উঠবে ঢং – – – ঢং – – – –
পাখীরা নতুন কলতানে ভরিয়ে দেবে দিক্-বিদিক্
বৈদিক মন্ত্রে কেঁপে উঠবে আকাশ বাতাস
অজাতশত্রু নটীর পায়ের কাছে
নতুন করে নতজানু হবে
ছোট নদী আবার
খল্-খল্ জেগে উঠবে পুরোনো নিয়মে
প্রত্যেক শিশুর হাতে আবার পৌঁছে যাবে
সহজপাঠের হলুদ মলাট
তুমি এলেই আবার ফুটে উঠবে, তোমার ক্যামেলিয়া
হে রবীন্দ্রনাথ ;
আমরা বসে আছি শুধু তোমার অপেক্ষায় ।
তুমি আসবে বলে
কুমোরপাড়ায় গোরুর গাড়ীর চাকা ধোয়া হচ্ছে
পথের দু’পাশে সাজানো হয়েছে পতাকায় পতাকা
সুগন্ধি ছড়ানো হয়েছে পথের ধূলোয়
যেখানে তোমার পা’য়ের ছাপ
আলপনার মতো আঁকা হয়ে উঠবে
দীর্ঘ থেকে দীর্ঘ সমুদ্রের তোলপাড়ের কোলাহল
পলকবিহীন মানুষের মুখ ;
আর তোমার সেই পদ্মাপারের হাট, হাটের মানুষ
রঙীন জামায় রঙীন জুতোয়
অকারণে কিলবিল করে কথা বলছে
খিল্-খিল্ করে হেসে উঠছে যখন তখন
আতরের গন্ধ মিশে যাচ্ছে ছলাৎ ছলাৎ পদ্মার শরীরে।
তুমি আসবে বলে
পুরোনো নিয়মের ধূলো ঝেড়ে
জেগে উঠেছে নতুন মানুষ
বর্শায় বিষ মাখাতে মাখাতে যে শিশু পৌরুষ পেল
যে মা নতুন শিশু জন্ম দিতে চলেছে, আগামী বৈশাখে
যে শিশু বর্ণপরিচয় সরিয়ে রেখে সকালে ও সন্ধ্যায়
গলির মোড়ে দাঁড়িয়ে থাকে
মায়ের ঘরে নতুন খদ্দেরের অপেক্ষায়
যে মা যৌবনের সিঁড়ি মাড়িয়ে
এখন শুধু বুড়িদের সারিতে
এক হাতে মধ্যবয়সী মেরুদণ্ডের মতো লাঠি
অন্য হাতে
তোবড়ানো এনামেলের বাটিতে
খুচরো পয়সার ঝন্-ঝন্ – – – – –
তারাও এসেছে কাঁপা কাঁপা পায়
কুঁচকে যাওয়া চামড়ায় সুবাশের সমারোহ সাজিয়ে
তুমি আসবে বলে – – –
শুধু তুমি – – – –
হে রবীন্দ্রনাথ – – –