মাসকাওয়াথ আহসান, করাচী থেকেঃ
শেখ মুজিব তার অসহযোগ আন্দোলনের সময়; এই সত্য গোটা পাকিস্তানের সামনে তুলে ধরেছিলেন, চৌকিদার চোর হ্যায়। সে সময়ের পূর্ব পাকিস্তানের মানুষ তখন সিদ্ধান্ত নেয়, এই রাক্ষস তারা বধ করবে। ১৯৭১ সালে অসম সাহসিকতায় এই রাবণকে আধমরা করে দেয় বাংলাদেশের মানুষ। এই রাবণ পাকিস্তানের পশ্চিমাংশে জলপাই বাগানে ছায়ার মতো ঘুরে ঘুরে প্রাণঘাতী ভ্যাম্পায়ার হয়ে ওঠে।
জনগণের টাকায় যে চৌকিদারের বেতন হয়; সে ফ্রাংকেনস্টাইন হয়ে জনতার জীবনের শুল্ক নিয়ে বেড়ায়। ১৯৭১ সালে কাঁচা রক্তের স্বাদ পেয়ে এই উন্মাদ ডেমন পাকিস্তানে শুধু করে ৫০ বছরের লম্বা মানবতা বিরোধী অপরাধযজ্ঞ।
এই দুর্নীতির কর্কট আক্রান্ত রাক্ষস; শুভ-অশুভের, সত্য-মিথ্যার দ্বন্দ্বে; অশুভ আর মিথ্যার পক্ষ নিয়ে সেই বৃদ্ধ দুর্নীতিভূতকে পাকিস্তানের মসনদে বসালো। বিচার বিভাগের মধ্যরাতের ভূতগ্রস্ত হানাশুনানি; ইমরানকে ছলে বলে কৌশলে সরিয়ে অসত্য আর অশুভের প্রতীক মানবতা বিরোধী অপরাধী পাকিস্তান পিপলস পার্টি-মুসলিম লীগ নওয়াজের পুতুল সরকার ক্ষমতায় বসিয়েছে। এই বিচার বিভাগ ও সেনাবাহিনী ৭৫ বছরের দুর্নীতির পাহারাদার অন্ধ দৈত্য।
ভুট্টো সেই দৈত্য যে এই বিচার বিভাগ আর সেনাবাহিনীর সাহায্য নিয়ে; জনরায় জেতা শেখ মুজিবকে কারাগারে আটক করে জোর করে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর মসনদ দখল করেছিলেন। ইতিহাসের কী বিচিত্র পুনরাবৃত্তি। ইমরান বিরোধী ষড়যন্ত্রের মাস্টার মাইন্ড জারদারী ভুট্টোরই মেয়ে-জামাই। লারকানাতে বাগান বাড়িতে যেভাবে মুজিব বিরোধী ষড়যন্ত্রে ডিমন ভুট্টো আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন, সেনাবাহিনীর চার পাঁচ শীর্ষ কর্মকর্তাকে। একই লারকানায় জারদারি আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন, বিচার বিচাগ আর সেনাবাহিনীর খলনায়কদের।
মুসলীম লীগ ১৯৭১ সালে ছিলো কিংস পার্টি; সেনাবাহিনীর যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচিয়ে রাখতে; দলে পুনর্বাসনে; তারা বাংলাদেশে গণহত্যার রক্ত হাতে মেখেছে। ইতিহাসের কী অমোঘ কাকতালীয় জাদু বাস্তবতা, মুসলীম লীগ ক্ষমতায় এলো; পাকিস্তনে জামাত-জামায়াতে উলেমা ইসলামীকে কোলে নিয়ে; মাংসের কারবারে; মওলানা ফজলুর রহমানকে দিয়ে ইসলামাবাদের রাজপথ দখল করে; ইমরানের পতনের চেষ্টা তিন বছর ধরে অব্যাহত রেখেছে।
এরকম একটি জলসায় মওলানার কট্টর ইসলামপন্থী হলুদ পোষাকের ফুট সোলজারদের মাঝে টাকা বিতরণ করতে গিয়ে ধরা পড়ে সেনাবাহিনীর কর্মকর্তা। এই অপকর্মের ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে; ভাইরাল হয়।সে কারণে সাম্প্রতিক সময়ের হলুদ মোল্লাদের রাজপথ উচ্ছৃংখলতায়, ইমরান তাদের প্রতিহতের নির্দেশ দিলে, সেনাবাহিনী সে আদেশ অগ্রাহ্য করে। ইমরান তখন খায়বার পখতুন খোয়ার আধা সামরিক বাহিনী এনে মওলানা ফজলুর হলুদদের নৈরাজ্য প্রতিহত করে।
পূর্ব পাকিস্তান থেকে মার খেয়ে পালিয়ে আসা অন্ধ দৈত্য গত ৫০ বছর হাউ মাউ খাউ বলে দেশটিকে মৃত্যু উপত্যকায় পরিণত করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক সাহায্য নিয়ে এই ডিপ স্টেটের ডিমন ক্রসফায়ারে পাখির মতো মানুষ মেরেছে। বিচ্ছিন্নতাবাদীর তকমা দিয়ে কেড়ে নিয়েছে অমল কিশোরের স্বপ্ন। গুম হয়েছে পাকিস্তানের আলোর সন্তানেরা; দেশপ্রেমিকেরা।সেনাবাহিনীর গোয়েন্দা সংস্থা যুক্তরাষ্ট্রের নির্দেশে সন্ত্রাসী গোষ্ঠীকে মদদ দিয়ে; পাকিস্তানের মানুষকে জিম্মি করে রেখেছে। স্বপ্নবান মানুষেরা ভয়ে দেশত্যাগ করতে থাকে। কট্টর ইসলামপন্থী সন্ত্রাসীরা স্কুল শিশু হত্যা করেছে নির্বিচারে।
এই অন্ধ দৈত্য যেন তার কর্কট রোগের শেষ পর্যায়ে; রক্তের নেশায় তার উন্মাদ দশা। ১৯৭১ ডিমনের মুখোশ যেন উন্মোচন করলেন ইমরান খান। জাতির সামনে তুলে ধরলেন সেই থাগস অফ পাকিস্তানদের; যারা ১৯৪৭ থেকে আজ পর্যন্ত স্বদেশী স্টাইলের ভীতিপ্রদ উপনিবেশ জারী রেখেছে।
গতকাল রাত ৯টায় পথে নেমেছে পাকিস্তানের মানুষ। তারা সেনাবাহিনী ও বিচার বিভাগের ডিমন চিনেছে। স্বদেশের ঘাতককে চিনেছে। পাকিস্তানের স্বপ্ন হন্তারকদের মুখমন্ডল এখন সবার কাছে স্পষ্ট।বাতাসে সেই অমোঘ ডাক,
“আয়,আয় ছুটে আয়, সজাগ জনতা
আয় আয় নিয়ে আয়, নতুন বারতা
রামের দেশেতে সেই রাবণ বধিতে
যায় যদি যায়, জীবনটা যাক~~~
এ যেন সেই সত্তর-একাত্তরের ঢাকা; যার ঘরে ঘরে সচেতন মানুষের দূর্গ, দেয়ালে দেয়ালে জনতার উদ্দীপ্ত পোস্টার, এনিহিলেট দিস ডিমন।