মাসকাওয়াথ আহসান
সদা সত্য কথা বলিবে জাতীয় ঐ বস্তাপচা প্রবাদ প্রবচন; সোসাইটি ফর প্রফেশনাল জার্নালিস্টদের “কোড অফ এথিকস”-এর শুরুতেই যে বলা হয়েছে, “সিক দ্য ট্রুথ এন্ড রিপোর্ট ইট”; এসব অচল আচরণবিধিকে নাকচ করে দিয়ে চলিষ্ণুসাংবাদিকতাকল্পদ্রুপ হিতোপদেশ দিলেন, “কিছু সময় সত্য না বলাই ভালো।”
অমনি টিভিগুলো দেখাতে শুরু করলো কর্ণফুলী নদীর নীচ দিয়ে যাওয়া জাদুকরী টানেল; ফ্রান্স থেকে ইংল্যান্ড যাবার জন্য ঠিক যেমন একটি টানেল রয়েছে। কর্ণফুলী টানেলের গ্রাফিকস; এনিমেশন, মাত্র তিনমিনিটে রাজশকট এই টানেল অতিক্রমের লাইভ সম্প্রচার; ঐ তো কিংবদন্তীর কানের ঝুমকা যা এই নদীতে হারিয়ে যাওয়ায় এর নাম হয়েছিলো কর্ণফুলী; আজ সেই ঝুমকা খুঁজে পাওয়া গেলো।
আর এদিকে শান্তিমানবদের জন্য অজস্র ডেকচিতে রান্না হচ্ছে জাহাঙ্গীরের হোটেলের বিরিয়ানি; শান্তি সম্মেলনে মাথায় পতাকা বেঁধে ঢুলি তার উন্নয়নের “বেহুদা ঢোল” বাজাচ্ছে।
পুলিশ স্থানে স্থানে মোবাইল ফোন চেক করছে; ফেসবুকে গিয়ে দেখছে সেখানে উন্নয়ন ঢোল আছে কীনা! পুলিশ প্রতিটি ফেসবুক আইডিতে খুঁজে পায় অঞ্জনার প্লিসারিন বর্জিত কান্না। আর শিশু লুবাম্বার মুভি রিভিউ। “সবাই ভাবে আমি বয়সের তুলনায় পেকে গেছি, কিন্তু আমি পেকেছি উন্নয়নের পাকা কাঁঠাল খেয়ে।”
পুলিশ চেকিং করবে কী, সবাই কালো কোট পরে, মাত্র দুশো টাকায় একটি কোট কিনে সবাই নিরাপদ করেছে তাদের পল্টন যাত্রা।
পিটার হাঁস প্রতিদিন যেভাবে আংকেল স্যামের হাঁস চরাচ্ছে ক্রিসেন্ট লেকে, হাতির ঝিলে, তাতে করে আগের মতো হাত খুলে ব্যাটিং করতে পারে না অলরাউন্ডার ক্রিকেটার হারুন ও বিপ্লব। টেস্ট ক্রিকেটের মতো দেখেশুনে খেলে।
ঐ যে মহাখালীর খাজাবাবা টাওয়ার যেখানে ডিজিটাল গোপালভিলেজ-এর গ্লোবাল ভিলেজ হবার স্বপ্ন ভ্রমর কৌটায় লুকিয়ে রাখা হয়েছিলো; সেখানে শর্ট সার্কিটে আগুন লেগে ইন্টারনেটের গতি গরুর গাড়ির মতো হয়ে গেলে; শনিবারের শনি কাটানোর একটা সম্ভাবনা উজ্জ্বল হয়ে উঠেছিলো।
পুরোনো পান্ডুলিপির একটাও ঠিক জমছে না; দর্শক ভুয়া ভুয়া বলে দুয়ো দিচ্ছে; পল্টন কেন জনসমুদ্র হয়ে উঠছে! আচ্ছা এই সমুদ্রের ঢেউ না হয় নাইবা দেখানো হলো বাতাবি টিভিতে; বরং বিশ্বকাপ ক্রিকেটের ম্যাচে জাতীয়তাবাদের প্রতীক সাকিব-লিটনের ব্যাটিং দেখানো গেলো; ক্রিকেট অপিয়ামে যদি বুঁদ হয়ে থাকে দর্শক, তারা হয় তো পল্টনের জাতীয়তাবাদী জনসমুদ্র দেখবে না।
অনেক ভয় হয়, অনেক প্যারানয়া; অনেক রজ্জুতে সর্পভ্রম; অনেক লাঠি দেখে সাপ মনে হয়। এমন কেন হলো! হয়তো পনেরো বছরে সম্পদ বেড়েছে অনেক; সেই সম্পদ রক্ষার ভয় বাড়তে বাড়তে প্যারানয়াটা বেড়েছে অনেক করে। এতো টেনশন ভালো লাগে না; সেকেন্ড হোমের লঞ্চও গেলো, ফার্স্ট হোমের পঞ্চও যাবে নাকি! এরচেয়ে ভালো ছিলো সেই রাজপথের দিনগুলো, বাটারবন-কলা খেয়ে মধুর ক্যান্টিন গরম করার সাঁঝগুলো।
সেন্টার ফর রুথলেস ইন্টেলিজেন্স (ক্রাই)-এর বাঙ্গময় পেটওয়ালার গুজবগুলো ঠিক জমছে না। এই যে পল্টনের লোকের মদের বোতল হাতে ফটোশপ, কিংবা হোটেলে অসামাজিক কর্মের সময় পুলিশের হাতে কট রেড হ্যান্ডেড টাইপের যে গুজব খবরগুলো; এগুলো টিপিক্যাল গোবরডাঙ্গা মডেলের গুজব; নতুন প্রজন্ম রিলেট করতে পারে না; গোপাল ভিলেজের এই গান্ধা কইরা দেয়া প্রোপাগান্ডা।
আচ্ছা ঐ যে কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় ভিসির বাড়িতে হামলা; ঠিক ঐ রকম করে বিচারপতির বাড়িতে হামলা হলে কী পণ্ড করে দেয়া যাবে পল্টন! পুরোনো পান্ডুলিপিতে কী ওটিটির দর্শক ধরে রাখা যাবে!
বয়স্ক কমুনিস্টগুলো কবে কাজে দেবে আর! আজ একটু টাইম মেশিন মেথডে অতীতে গিয়ে জঙ্গী-টঙ্গী নিয়ে কথা বললে কী নতুন কমুনিস্টেরা কী বিজেপি-র সঙ্গে স্বামী-স্ত্রী’র সম্পর্কের খোঁটা দেবে! কী হবেরে কী হবেরে এখন! কোথায় জাস্টিফিকেশান মামু, কোথায় গেলে একটু হৃদয় শান্ত হবে!
প্রতিবাদকারীরা ধনুকভাঙ্গা পণ করেছে সহিংসতা না করার। ভায়োলেন্স না হলে সাইলেন্সের মাঝ দিয়ে যদি না বলা সত্য বেরিয়ে আসে অকস্মাত।
কেন যে এতোগুলো বছর হাতে পেয়েও প্রমোদে ঢালিয়া দিনু মন, পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে পারলাম না। বই দেখে পরীক্ষা আর অটোপাশের আশায় থেকে থেকে ভুলেই গেছি, কী করে পরীক্ষা দিতে হয়!
এখন অনেক আশার জনতা-ব্যাংক এসে পরীক্ষা-পাশের ভরসার বাণী শুনালেও রাগ হয়।
ওগো সেকুলার শর্বরী, তুমি কড়া করে প্রশ্ন তোলো প্রবারণা পূর্ণিমার দিনে কেন পল্টনের মহাসমাবেশ! তোমার এই অসাম্প্রদায়িক ফানুস ওড়ানোর সাম্প্রদায়িক ঠাকুর মা’র ঝুলিটা খুলে বসো না গো! লর্ড কর্ণওয়ালিশের বালিশ এনে ঘুম পাড়ানি গান করো ওগো প্রিয়ে।
কোথায় হারকিউলিস-হেলমেট ও ভাতের হোটেল; কোথায় বজরঙ্গী ভাই! জাগো বাহে কুন্ঠে সবাই। তোরা যে যা বলিস ভাই, আমার রণক্ষেত্র চাই।
ইন্টারনেট কানেকশন বন্ধ রেখে পিটিয়ে দাও; প্যালেস্টাইন ল্যাবরেটরি চাই! নিউমিডিয়ার অগোচরে কায়েম করো ঈদুল বেলারুশ!
গোলেমালে গোলেমালে নির্বাচন কইরো না!
মাসকাওয়াথ আহসান, সম্পাদক, দ্য এডিটর থ্রি সিক্সটি ফাইভ, প্রধান সম্পাদক, ই-সাউথ এশিয়া।