মাসকাওয়াথ আহসান
টিভিতে আর্টিফিশিয়াল ইনটেলিজেন্স বা এ আই দিয়ে তৈরি খবর পাঠিকাকে দেখে দিকে দিকে তার ক্রাশ তৈরি হয়। সহমত ভাই, রহমত ভাই, শিবব্রত দাদা, শরিয়ত ভাই সবাই ইউটিউবে টিভি নিউজ লিংকের কমেন্টে এসে লাভ ইউ অপরাজিতা বলে অজ্ঞান হয়ে যেতে থাকা। বোঝা যায় সর্বমহলে এ আই-ই আজ ও আগামীর বাস্তবতা।
কান্দাকাটি পড়ে যায় সেন্টাল রুথলেস ইনটেলিজেন্স ওরফে ক্রাই অধিদপ্তরে। ইনটেলিজেন্সের হাজির বিরিয়ানি খেয়ে শুরু হয় এ আই বিষয়ক বৈঠক। কী করে আলী আর্টিফিশিয়াল ইনটেলিজেন্স (এ এ আই) সৈনিক তৈরি করা যায়; তা নিয়ে শুরু হয় পর্যালোচনা।
শুধু এ আই শব্দটি জেনেই সবাই যেন বিজ্ঞানী হয়ে পড়েন। কেউ গাল চুলকে, কেউ মাথার চুল ছিঁড়ে, কেউবা হাতের দুটো আঙ্গুল ফুটিয়ে পরামর্শ দিতে শুরু করে।
বিজ্ঞানী কেমিকেল আলী বলে, সংখ্যার ধারাপাতে তৈরি এই নিউজ কাস্টারের মতো আমরাও তৈরি করতে চাই এ এ আই সাইবার সৈনিক।
উপদেশক মাজামরা রতন ভাঙ্গা গালে কিছুটা বাতাস পুরে পরামর্শ রাখে, চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সঙ্গে তাল মিলিয়ে উন্নয়ন প্রচারণায় চাই এ এ আই গ্যাং।
এ আই বিজ্ঞানী টিপু সুলতান বলে, কী কী গুনাগুন চাই বলুন; কী কী কনটেন্ট পুরে দিতে দিতে হবে আর্টিফিশিয়াল ফেসবুক পিকেটারের মাঝে!
ক্রাই ভবনের ক্যাশাবাবু বাঙ্গময় পেটওয়ালা বলে, মন্তব্য প্রতি ২০০ টাকা আর স্টেটাস প্রতি ৪০০ টাকা খরচ করে এতো বছর সাইবার গ্যাং পুষে ফলাফল এলো ৮.৮৬ শতাংশ ভোট। উন্নয়নকে ডিফেন্ড করতে গিয়ে ভোটারদের অফেন্ড করেছে পিকেটারেরা। তাই এ এ আই-ই সৈনিক হতে পারে জনপ্রিয়তা ফিরিয়ে আনার একমাত্র উপায়।
কবি তেরবিন্দু চক্কোত্তী বলে, সোজা আঙ্গুলে কী ওঠে ভায়া ঘি; কিছু গালি তো থাকা চাই আর্টিফিশিয়াল ইনটেলিজেন্সের মগজেও!
মাজামরা রতন উল্লাস করে, চক্কোত্তী মশাই আমার মনের কথাটা বলেছে; পুরে দিন বিজ্ঞানী মশয় কিছু চ-বর্গীয় বিশেষণ।
ফেসবুক ইনফ্লুয়েন্সার ঝুম ঝুম বাজনদার বলে, “যন্ত্র ঐ একটাই ষড়যন্ত্র” বিষয়টা শেখাতে হবে এ এ আই সৈনিককে। যে কোন ইস্যুতে “দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চলছে” কথাটা প্রোগ্রামিং-এ থাকা চাই।
মাজামরা রতন পট করে ফোনে কিছু বিবর্ণ ছবি বের করে বলে, এই যে দেশের শত্রুরা আজি হতে সতেরো বর্ষ আগে আমাদের ওপরে যে নির্যাতন করেছিলো তার প্রমাণ। এ এ আই যেন বর্তমানের যে কোন নির্যাতনের ঘটনায় পট করে দেখিয়ে দিতে পারে এইসব ছবি।
বিজ্ঞানী টিপু সুলতান গলা খাঁকারি দিয়ে বলে, ওকে; টাইম মেশিন মেথডে “শাক দিয়ে মাছ ঢাকা” মোডে ছবিগুলো লোড করে দিচ্ছি এ এ আইয়ের মেমোরিতে।
সবার জন্য চা নিয়ে আসে টি বয় শামীম ক্ষুদ্র। সে মিন মিন করে বলে, এ আই আই আইসা গেলে আমরা তো বেকার হইয়া যাবো স্যার; আমরা তো চা টানাটানির পাশাপাশি কমেন্ট-স্টেটাস কপি পেস্ট কইরা কিছু উপরি আয় করি। তাই দিয়া সংসার চলে। আমগো প্যাটে এইরকম লাথি দিয়েন না স্যার। টিবয় ইউনিয়ন সদস্য নাজমুল চোষান ও কাঁংকন দাস ধর্মঘট করছে। আমরা আর চা-কফি দিতে পারুম না স্যার।
কালো ফ্রেমের চশমা পরা সেবায়েত উল্লাহ বলে, অটোমেশনে কিছু লোক চাকরি হারাবেই; আমার কটা সার্টিফিকেট আছে; তবু টেনশনে আছি চাকরি থাকে কীনা! তোমরা তো বাবা লেখাপড়া তেমন শিখো নাই; খালি কপি পেস্ট করো!
মাজামরা রতন উঠে দাঁড়িয়ে সরু কোমর দুলিয়ে কংকালের মতো হাত দুখানা নড়িয়ে বলে, এখন যাওতো বাবা শামীম ক্ষুদ্র। আমাদের ব্রান্মণদের চাকরিরই ঠিক নাই; তোমরা এসেছো দলিতের অধিকার নিয়ে কথা বলতে। আমি সরকারি টাকায় ফুলের বাগান করেছি; ঐখানে নিড়ানি দিও; কিছু বাড়তি পয়সা ধরে দেবোনে। এখন যাও তো বাছা।
কবি চক্কোত্তী কৌতুক করে বলে, রতনদা ফুলের বাগানে আপনার ছবি দেখে সেই বিটিভির পুরোনো নাটক “ফুলের বাগানে সাপ”-এর কথা মনে পড়ে যায়।
কনফারেন্স রুমে হাসির রোল পড়ে যায়। হঠাত হাঁপাতে হাঁপাতে প্রবেশ করে ক্রাই-এর মেসেঞ্জার বয় বাল্টন গোবর হীরা, ওপর থেকে খবর এনেছি নুরু আর হিরো আলম বড্ড “যন্ত্র ঐ একটাই ষড়যন্ত্র” করছে।নুরু নাকি ইজরায়েলি গোয়েন্দা মেন্দি সাফান্দিকে দিয়ে দেশটাকে গন্ধমাদন পর্বতের মতো তুলে নিয়ে যাবে ওয়েস্ট ব্যাংক ও গাযা উপত্যকায়। আর হিরো আলম এমেরিকার সঙ্গে হাত মিলিয়ে স্থানে স্থানে আমাদের স্মার্ট শান্তি কমিটির সম্মেলনের স্টেজ ভেঙ্গে দেবে!
মাজামরা রতন মুখটা বিস্বাদ করে বলে, এই মোসাদ নুরা আর রুচির দুর্ভিক্ষ হিরো আলমটাকে দুচোখে দেখতে পারিনা। ছেলে হবে আমাদের লক্ষীসোনা গাড়ি সাদ্দু আর লেখে না ভট্টের মতো সৎ দেশপ্রেমিক সর্বোপরি স্মার্ট। আনস্মার্ট নুরা আর হিরো আলমের বেইল নাই।
সেবায়েত উল্লাহ মুখ বাঁকা করে , বিকাশ নুরা বলুন ওকে ও নামেই বেশি মানায়। ভালো কথা বিকাশের কথা উঠতেই মনে পড়ে গেলো, ও ক্যাশাবাবু আমার গতকালকের পাঁচটা কমেন্ট আর তিনটা স্টেটাসের টাকাটা বিকাশ করে দিয়েন।
ক্যাশাবাবু বাঙ্গময় পেটওয়ালা ফেসবুক খুলে পাঁচটা কমেন্ট আর তিনটা স্টেটাস চেক করতে থাকে!
বৈঠক প্রায় শেষের দিকে এলে, বিজ্ঞানী কেমিকেল আলী বলে, উন্নয়নের ধারাপাতটা যেন এ এ আই-এর মেমোরিতে থাকে, জিডিপি গ্রোথ, রিজার্ভ, দারিদ্র্য দূরীকরণ, মাথাপিছু আয় এগুলো লোড করে দিন। প্রেসফ্রিডম, ডেমোক্রেসি, হ্যাপিনেস, করাপশান-ইনডেক্স; এসব ধারাপাতগুলো মুছে দিন যদি ভুল করেও থেকে থাকে এ এ আই মেমোরিতে।
মাসকাওয়াথ আহসান, সম্পাদক, দ্য এডিটর থ্রি সিক্সটি ফাইভ, প্রধান সম্পাদক, ই-সাউথ এশিয়া