মাসকাওয়াথ আহসান
‘বাংলাদেশে একটা অদ্ভুত জিনিস দেখলাম, নীতি-আদর্শ, আমি জানি না আদর্শ-নীতি গুলিয়ে গেল কেন? চরমপন্থী, ডানপন্থী জামায়াতে ইসলামী হতে শুরু করে বামপন্থী কমিউনিস্ট হতে শুরু করে এত দিন যারা আদর্শের কথা বলেছে, তারা সব একই সঙ্গে, একই সুরে, একই কথা বলে কীভাবে? তারা এক হয়ে মিলেছে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে। আওয়ামী লীগ অপরাধটা কী করেছে, সেটা জানতে চাই। দেশবাসীর কাছে প্রশ্ন, আওয়ামী লীগের অপরাধ কী?’
– প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্প্রতি তাঁর এই বক্তব্যে জিজ্ঞেস করেছেন, আওয়ামী লীগের অপরাধ কী!
গ্রিক দার্শনিক সক্রেটিস বলেছিলেন, কেউ যখন অপরাধ করে; তখন বুঝতে পারেনা যে সে অপরাধ করছে; সে মনে করে যে, ঠিক কাজটিই করছে।
আওয়ামী লীগের ক্ষেত্রে ঠিক এমনটিই হয়েছে বলে মনে হয়।
১ আওয়ামী লীগের প্রথম অপরাধ হচ্ছে নিজেকে বাংলাদেশের মালিক মনে করা। মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দেয়া দল হিসেবে সে, সাধারণ মানুষের মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ, নির্যাতিত হওয়া, স্বজন হারানো, শরণার্থী হওয়া, পাকিস্তানি দখলদার বাহিনীর পোড়ামাটি নীতিতে ঘর-গুদাম-সম্পদ হারানোকে অস্বীকার করে । যে গণতন্ত্র মুক্তিযুদ্ধের প্রধান অঙ্গীকার; তা অস্বীকার করে আওয়ামী লীগ বাংলাদেশকে নিজস্ব উপনিবেশ আর নাগরিকদের অবরুদ্ধ প্রজা হিসেবে বিবেচনা করে।
২ সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থী খোঁজা; আওয়ামী লীগের পরিবার ও রক্ত খোঁজা; জার্মানির নাতসিদের মতোই একটি দলীয় বংশগতির শ্রেষ্ঠত্ব খোঁজার অপরাধ। মেধা ও যোগ্যতার পরিবর্তে দলীয় অন্ধ আনুগত্যকে প্রাধান্য দেয়া একটি অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড যেখানে সাধারণ জনগণের মৌলিক ও রাষ্ট্রিক অধিকারকে পুরোপুরি অবজ্ঞা করা হয়েছে।
৩ আওয়ামী লীগের প্রোপাগান্ডা কার্যক্রম হচ্ছে দলীয় লোকেদের মধ্যে এই বিশ্বাস প্রোথিত করা যে, যারা আওয়ামী লীগ সমর্থক নয়; তারা মানুষ নয়। এই ডিহিউম্যানাইজিং প্রোপাগান্ডা প্রকল্প একটি অপরাধমূলক কাজ।
৪ ভিন্নমতের মানুষকে মানুষ মনে না করায়; আওয়ামী লীগ কেবল তাদের দলীয় মৃতদেহের রাজনীতি করে; আর ন্যায়বিচার কেবল আওয়ামী লীগের প্রাপ্য; এরকম একটি ন্যারেটিভ তৈরি করে; সিলেক্টিভ জাস্টিসের একটি অপরাধ মনস্ত্বত্বকে জনপ্রিয়তা দিয়েছে।
৫ কেবল দলীয় লোকেদের ব্যবসা-বানিজ্য, ব্যাংক ও মিডিয়া লাইসেন্স দিয়ে ভিন্নমতের মানুষদের এসব ক্ষেত্রে সমুদয় অধিকার হরণ করে; আওয়ামী লীগ বৃটিশ শাসক লর্ড কর্নওয়ালিশের চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের মতো করে একটি নতুন জমিদারী ব্যবস্থা কায়েম করেছে; যা স্পষ্টতই একটি অপরাধমূলক কর্মকান্ড। পরিবারতন্ত্রকে লৌহ কঠোর ভঙ্গিতে প্রতিষ্ঠা করে আওয়ামী লীগ ফিরে গেছে প্রাচীন রাজতন্ত্রের যুগে।
৬ বৃটিশেরা যেমন হিন্দু-মুসলমানের মাঝে ডিভাইড এন্ড রুল প্রতিষ্ঠা করে সমাজের সম্প্রীতি বিনষ্ট করেছিলো; আওয়ামী হুবহু তাই করেছে। বৃটিশেরা যেরকম ভারতবর্ষের মুসলমান অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে হিন্দু পুলিশ-প্রশাসক নিয়োগ করে হিন্দু-মুসলমান দাঙ্গা-সৃষ্টির অংক কষেছিলো; আওয়ামী লীগ ঠিক তাই করেছে। আপাত দৃষ্টিতে অসাম্প্রদায়িকতা চর্চার নজির রাখার লিপ-সার্ভিস দিয়ে হিন্দু কর্মকর্তাদের দিয়ে ইসলামোফোবিক ডার্টি জব করিয়ে; দেশের নিরীহ হিন্দুদের বিপদাপন্ন করেছে। কারণ হিন্দু কর্মকর্তাদের মাধ্যমে নির্যাতিত মানুষের মনে হিন্দু বিদ্বেষ তৈরি হয়েছে। সৃষ্ট পরিস্থিতিতে আবার লীগ সরকার হিন্দুদের “রক্ষা-কর্তা” সেজে মূলত অন্ধ ও উপায়হীন আনুগত্য নিশ্চিত করেছে।
৭ দেশ “মদিনা সনদে চলবে”, “আল্লাহ ও রাসুলের অপমান সহ্য করা হবে না” জাতীয় জনতুষ্টিকর বক্তব্য দিয়ে প্রথমে ৫৭ ধারা ও পরে ডিজিটাল সিকিউরিটি এক্টকে “ব্লাসফেমি” আইনের মতো করে প্রয়োগ করেছে লীগ সরকার। সেইখানে আল্লাহ-রসুলের পাশাপাশি আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্বের ভাবমূর্তিকে যুক্ত করে; ভিন্নমত দমনের ও সরকার সমালোচনাকে স্তব্ধ করে দেবার স্বৈরাচারি ব্যবস্থা কায়েম করেছে আওয়ামী লীগ। বাক-স্বাধীনতা হরণ ও মানবাধিকার লংঘনের এই অপরাধ ইতিহাসে কালো অধ্যায় হিসেবে বিবেচিত হবে।
৮ আওয়ামী লীগ তার রাজনীতিতে “টাইম মেশিন মেথড” ব্যবহার করে বর্তমানের সমুদয় অপরাধকে জাস্টিফাই করার চেষ্টা করেছে; সুদূর অতীতে বিএনপি সরকারের করা অপরাধের চর্বিত চর্বন করে। এইকাজে তাদের নিয়ন্ত্রিত সমুদয় মিডিয়া ও অনলাইনে তারা নিয়োগ করেছে মাউথ ও কী-বোর্ড সোলজার। আওয়ামী লীগ তার মৌখিক গালাগালি দিয়ে বর্তমানের পীড়নমূলক গোলাগুলিকে ঢেকে রাখার চেষ্টা করেছে। এই অপরাধ দিবালোকের মতো স্পষ্ট।
৯ আওয়ামী লীগ গুম ও ক্রসফায়ার প্রশ্নে; বর্তমানের স্বজন হারা “মায়ের ডাকে”র বিপরীতে “মায়ের কান্না” জাতীয় সংগঠনকে এনে একইভাবে অতীতের অন্যদের অপরাধের নিয়ত কান্নায় ঢেকে দিতে চেষ্টা করেছে বর্তমানের অযুত কান্না। এই রুদালি মেথডে “কাঁদো বাঙালি কাঁদো” বলে আওয়ামী বছরব্যাপী সাজিয়েছে তাদের শোকের ক্যালেন্ডার। নিজদলীয় মানুষের মৃতদেহ, স্মৃতিচারণকে হেজিমনির মতো ব্যবহার করেছে বর্তমানের হত্যা-গুমকে ঢেকে দিতে। আওয়ামী লীগের এই শোকের ক্যালেন্ডারের মাধ্যমে “ভিক্টিম কার্ড প্লে” করার ঢংটি ঠিক সেই জায়নিস্টদের দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় স্বজন হারানোর ভিক্টিম কার্ড প্লে করে; ৭৫ বছর ধরে ফিলিস্তিনিদের ওপর গণহত্যা চালানোর মতোই অপরাধমূলক।
১০ আওয়ামী লীগ দুর্নীতির সুযোগ করে দিয়ে এমন অনুসারী তৈরি করেছে যে লুন্ঠক চক্র নিজ নিজ স্বার্থে “আওয়ামী লীগ সরকার, বারবার দরকার” জাতীয় মাতম তুলে চলেছে। যে কারণে “গণতন্ত্র কী কাজে আসে, ভোটই কী সব” এইজাতীয় কথাবার্তা সমাজের একশ্রেণীর লোক চালু রেখেছে; যারা আওয়ামী লীগের চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত পেয়েছে ঘুষ-দুর্নীতি ও লুন্ঠনের।
১১ ভারতের প্রয়াত নেতা প্রণব মুখার্জির “কোয়ালিশন ইয়ারস” গ্রন্থে তিনি কীভাবে ২০০৮ সালের ডিসেম্বর নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় আনলেন তার বিস্তারিত তথ্য দিয়েছেন। এরপর ২০১৪-র নির্বাচন ও ২০১৮-র নির্বাচনে ভারতের সরাসরি হস্তক্ষেপের নজির ভারতের সাধারণ মানুষের সঙ্গে বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের সম্পর্কের অবনতি ঘটিয়েছে। প্রতিবেশীর সঙ্গে সুসম্পর্ক অত্যন্ত জরুরি। কিন্তু আওয়ামী লীগ এই সম্পর্কটিকে তিক্ত করেছে; ভারতকে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ভাষায় স্বামীর সম্পর্কে রুপান্তর করে। এক্ষেত্রে বন্ধুর সম্পর্কই স্বাস্থ্যপ্রদ ছিলো।
১২ ভারতের একটি কট্টর হিন্দুত্ববাদী সরকারকে ক্রমাগত তোষণ নীতি; অজানা আশংকায় বাংলাদেশে সাধারণ্যে ইসলামাইজেশন বাড়িয়েছে। এটি ডমিনো এফেক্ট। লীগ সমর্থক যখন একই মুখে হিন্দুত্ববাদের জয়গান গাইছে; বিজেপির সঙ্গে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ককে গর্বের মনে করছে, অন্যদিকে জামায়াত সমালোচনার নামে মুসলমানদের গড়-পড়তায় “জঙ্গী, জিহাদী” তকমা দেয়; বিজেপির পোশাক ও ধর্মীয় চিহ্নকে “প্রগতিশীলতার চিহ্ন” বলে জাহির করে “দাড়ি-টুপিকে” ইনফেরিয়র বলে বর্ণনা করে; তখন বাংলাদেশের কোমল ইসলাম; আত্মপরিচয় রক্ষার তাগিদে কঠোর হয়ে ওঠে। তাছাড়া বিএনপি নির্মূলের ধনুক ভাঙ্গা পণ; পাশাপাশি হেফাজতকে খাস জমি দেয়া, তাদের সঙ্গে শোকরানা মেহেফিল করা, অপরাধীদের “ওমরাহ করার প্রবণতা বৃদ্ধি”; অসংখ্য মসজিদের দেশে নতুন করে মডেল মসজিদ নির্মাণ; এসব শঠতা; বিরোধী দলের জায়গায় বিএনপিকে প্রতিস্থাপন করে ইসলামপন্থী দলগুলোকে বসানোর নজির রেখেছে। ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য হিন্দু ও ইসলাম ধর্ম নিয়ে রাজনীতি করার যে লীগ ডক্ট্রিন; তা রেসিপি অফ আ ডিজাস্টার বলেই প্রতীয়মান হয়।
১৩ আওয়ামী লীগ নজর কাড়া বিজ্ঞাপনময় উন্নয়নের জয়গান গাইলেও; কার্যত বাংলাদেশের অর্থনীতি এখন ভঙ্গুর; দ্রব্যমূল্যবৃদ্ধির দংশনে সাধারণ মানুষের জীবন ওষ্ঠাগত। আওয়ামী লীগ সরকারের উন্নয়নের সুফল কেবল আওয়ামী লীগের সক্রিয় নেতা-কর্মীদের জন্য; এরকম স্বদেশী ঔপনিবেশিক চিত্র এখন জনগণের সামনে স্পষ্ট। সরকারের আত্মতুষ্টির কথামালা সাধারণ মানুষের অর্ধাহারি জীবনে তীব্র বিবমিষা তৈরি করেছে। আওয়ামী লীগের নিজ দলের মধ্যেই যারা সৎ মানুষ তারা নিষ্ক্রিয়। অসততা সপাপবিদ্ধ আওয়ামী লীগের প্রতি যে আপাত ভীতিমিশ্রিত শ্রদ্ধা দৃশ্যমান; তা ঘৃণারই প্রতিশব্দ।
১৪ কম্বোডিয়ার স্বৈরাচারী শাসক হুনসেন যে পদ্ধতিতে বিরোধী দলকে নির্মূল করেছেন, আওয়ামী লীগ একই পদ্ধতিতে বিএনপিকে নির্মূলের চেষ্টায় মরিয়া। বিএনপির নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে ৪০ লক্ষ মামলা; কারাগারের ধারণ ক্ষমতার অধিক বিএনপির রাজবন্দী। ইলেক্টেবল নেতাদের সবাইকে গ্রেফতার করা হয়েছে। মেজর হাফিজ বা শমশের মোবিন চৌধুরীর মতো বিএনপির দলছুট দুই সাবেক সেনা কর্মকর্তা নেতাকে দিয়ে একটি নকল বিএনপি তৈরির চেষ্টায় সক্রিয় আওয়ামী লীগের এস্টাবলিশমেন্ট। পাকিস্তানে ইমরান খানকে সন্দেহজনক মামলায় বিচার করে কারাগারে রেখে; তার পিটি আই দলটি নির্মূল করে পাকিস্তানের মুসলিম লীগ নওয়াজের এস্টবলিশমেন্ট ঠিক যেরকম প্রহসনের নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ ও পাকিস্তানে আইডেন্টিক্যাল টুইন “হর্স ট্রেডিং” ও “প্রি ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিং দৃশ্যমান ।
১৫ পশ্চিমা বিশ্ব, বাংলাদেশে যাদের বিপুল বিনিয়োগ, যারা রেমিটেন্সের উতস, রপ্তানীর গন্তব্য, তারা বাংলাদেশে এক দলীয় শাসনের পরিবর্তে গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা প্রত্যাশা করে। কারণ অর্থনৈতিক ও বানিজ্যিক সম্পর্কে গণতন্ত্র একটি অত্যন্ত প্রয়োজনীয় সূচক তাদের জন্য। তবে হাসিনা সরকার পশ্চিমাদের অগ্রাহ্য করে একদলীয় চীন, ফ্যাসিস্ট শাসক পুতিনের সমর্থন নিয়ে চতুর্থবার বিনাভোটে নির্বাচিত হবার তোড়জোড় করছে। ভারতের কট্টর মোদী সরকার বাংলাদেশে কথিত প্রগতিশীলতাকে সমর্থনের নামে আওয়ামী লীগকে চিরস্থায়ীভাবে বাংলাদেশের ক্ষমতায় দেখতে চায়। কারণ কেবল তাদের সীমান্ত নিরাপত্তা নয়, রেমিটেন্স, বিনিয়োগ বানিজ্য ও রপ্তানী বানিজ্যের নিশ্চয়তা পেতে এই স্টেটাসকো তাদের জন্য উপকারী বলে তারা মনে করে।
সবশেষে, আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের জ্ঞান নির্ভর সমাজকে টেকাটুকা নির্ভর সমাজে রুপান্তর করে; শিক্ষা ও সামাজিক- সাংস্কৃতিক মূলবোধের ধস নামিয়েছে। বিংশ শতকের বরণীয় শিল্পী-সাহিত্যিক-চিন্তক-সাংবাদিক-বিজ্ঞানী-শিক্ষক অর্থাৎ সমাজের আলোকিত অংশটি এখন “হীরক রাজার দেশে”-র বিদূষকে পরিণত হয়েছে। ক্রসফায়ার সমর্থনকারী তো মানবতাবিরোধী অপরাধী। নতুন প্রজন্ম তাদের কাছে নীতিবাক্য, সংস্কৃতি কথা, সংগীত, কবিতা, জ্ঞানের কথা কেন শুনবে আর! শ্রদ্ধেয় মানুষদের এই আত্মঘাতী দলান্ধতা ও জীবন্মৃত অস্তিত্ব আমাকে ব্যক্তিগতভাবে বেদনাক্লিস্ট করে।
২০০১-০৬ সাল পর্যন্ত আমি ডয়েচেভেলে থেকে প্রতিদিনের সাংবাদিকতা, গণমাধ্যমে লেখালেখি ও উপন্যাসে বিএনপি-জামাতের কালো শাসনের প্রতিবাদ জানিয়েছি। ইউরোপে নাগরিক সমাজকে দেখেছি, যে কোন মূল্যে তারা জনগণের পক্ষে থাকেন। দলীয় বুদ্ধিজীবী বলে তেমন কিছু চোখে পড়েনি। ক্ষমতায় সামাজিক গণতন্ত্রী থাকুক আর খ্রিস্টিয় গণতন্ত্রীরাই থাকুক; লেখক কলম ধরেন জনগণের পক্ষে; সরকারের অন্যায় কর্মকান্ডে ফুঁসে ওঠে মিডিয়া ও নাগরিক সভা। দলের কাছে বিবেক বন্ধক দিয়ে প্লট-পদক-পদবী উঞ্ছবৃত্তি দেখা যায়না বলেই; দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে গ্রাউন্ড জিরোতে মিশে যাওয়া দেশগুলো মাত্র দশ-পনেরো বছরে কল্যাণ রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। রাজনীতি সচেতন সমাজের নৈর্ব্যক্তিকতা ও নিরপেক্ষতা ছাড়া গণতন্ত্র, আইনের শাসন, বহুত্ববাদ, সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা অসম্ভব।
বাংলাদেশের দলীয় লেজুড়বৃত্তি কেন্দ্রিক যে স্বৈরমনোভঙ্গি তা রাজনীতি নয়; কেবলই ভিলেজ পলিটিক্স। আওয়ামী লীগ এই ভিলেজ পলিটিক্সের ওপর ভর করে যে অপরাধগুলো করে চলেছে; তা সে নিজেই বুঝতে অক্ষম। তার বিবেচনাবোধ ক্ষমতার মোহে অন্ধ। একী তবে স্বৈরাচারের অন্ধ দৈত্য এক!
(লেখাটি নব্বুই-এর স্বৈরাচার বিরোধী সংগ্রামের শহীদ নূর হোসেনের “গণতন্ত্রের মুক্তির আকাংক্ষা”র প্রতি উতসর্গ করা হলো)
মাসকাওয়াথ আহসান, সম্পাদক, দ্য এডিটর থ্রি সিক্সটি ফাইভ, প্রধান সম্পাদক, ই-সাউথ এশিয়া।