আজ ২১ শে আগস্ট। ভয়াবহ গ্রেনেড হামলার ১৭ বছর পূর্ণ হলো। এক বছর আগে পেপারবুক প্রস্তুত হলেও করোনার কারণে থমকে ছিল বহুল আলোচিত ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার ডেথ রেফারেন্স ও আসামিদের আপিল শুনানি। এই হামলার মামলায় পলাতক আসামিদের জন্য আইনজীবী নিয়োগ দিয়েছে রাষ্ট্র।
২০০৪ সালের ২১ আগস্ট ঢাকার বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সমাবেশে গ্রেনেড হামলা চালানো হয়। এতে দলের নেতা-কর্মীসহ ২২ জন নিহত হন। আহত হন তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা শেখ হাসিনাসহ কয়েক শতাশিক নেতা-কর্মী। আগামীকাল এ ভয়াবহ হামলার ১৭ বছর পূর্ণ হলো।
গত সপ্তাহ থেকে হাইকোর্টের নিয়মিত বেঞ্চে বিচারকার্য শুরু হয়েছে। রাষ্ট্রপক্ষ বলেছে, ২১ শে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলা আপিল শুনানির জন্য ইতোমধ্যে পলাতক আসামিদের রাষ্ট্র থেকে আইনজীবী নিয়োগ প্রক্রিয়াও শেষ হয়েছে। আসামিদের মৃত্যুদণ্ডাদেশ অনুমোদনের (ডেথ রেফারেন্স) জন্য পেপারবুক বা মামলার বৃত্তান্তও প্রস্তুত করা হয়েছে। এ বছরেই আলোচিত এ মামলার আপিল ও ডেথ রেফারেন্স শেষ করার আশা প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্টরা।
মামলার বিষয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন বলেন, ‘ইতোমধ্যে একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় হাইকোর্ট থেকে পেপারবুক রেডি হয়ে গেছে। দণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামিদের জন্য আদালত থেকে রাষ্ট্রের আইনজীবী নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। মামলা আপিল শুনানির জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুত। যেহেতু নিয়মিত আদালত চালু হয়ে গেছে আমরা সামনের সপ্তাহে আদালতে উপস্থাপন করব অতিদ্রুত শুনানির জন্য। এ বছরেই আমরা শুনানি শেষ করব বলে আশা করছি।’
আসামিপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘মামলাটি এখন আপিল শুনানির জন্য প্রস্তুত। কিন্তু বিগত কয়েক মাস ধরে লকডাউনের কারণে আদালতে আপিল শুনানি হয়নি। এ মামলা নিয়ে আমাদের ভয়ভীতির কিছু নাই। খুব পরিষ্কার করে যদি বলি, লুৎফজ্জামান বাবর, তারেক রহমান, আবদুস সালাম পিন্টুসহ রাজনৈতিক নেতাদের সম্পূর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে সম্পৃক্ত করা হয়েছে। রাজনৈতিকভাবে হয়রানি করার জন্যই তাদের এ মামলায় চার্জশিটভুক্ত করা হয়েছে। আমরা এ কথাগুলো আপিল শুনানিতে তুলে ধরবো।’ তিনি আরও বলেন, করোনাভাইরাসের সংক্রমণের কারণে সীমিত পরিসরে আদালতের কার্যক্রম চলে। করোনা পরিস্থিতি না এলে হয়তো এত দিনে মামলার শুনানি শুরু হয়ে যেত।
গ্রেনেড হামলা ও হত্যাযজ্ঞের ঘটনায় বিচারিক আদালত সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, সাবেক শিক্ষা উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টু, প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা সংস্থার (ডিজিএফআই) সাবেক পরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) রেজ্জাকুল হায়দার চৌধুরী ও জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থার (এনএসআই) সাবেক মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবদুর রহিমসহ ১৯ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেন। এই মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি ১৯ জন, যাবজ্জীবনপ্রাপ্ত ১৯ জন, বিভিন্ন মেয়াদে সাজা হয়েছে ১১ জনের এবং পলাতক রয়েছে ১৭ জন।
জানা যায়, মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তদের মধ্যে ১৪ জন জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদের (হুজি-বি) সদস্য। এ ছাড়া বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ ১৯ জনের যাবজ্জীবন এবং অপর ১১ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড দেওয়া হয়।
এর মধ্যে কারাগারে থাকা ও জামিনে থাকা দণ্ডিত আসামিরা দুই মামলায় জেল আপিল ও নিয়মিত আপিল করেছেন। সাধারণত বছর ও মামলার ক্রম অনুসারে ডেথ রেফারেন্সের শুনানি হয়ে থাকে। চলতি বছরের ২০ জুন পর্যন্ত ডেথ রেফারেন্স মামলার সংখ্যা ছিল ৮৫০টি। এখন ২০১৬ সালে আসা ডেথ রেফারেন্সের শুনানি শুরু হয়েছে। তবে গুরুত্ব বিবেচনায় অগ্রাধিকার ভিত্তিতেও ডেথ রেফারেন্স শুনানি হয়। ডেথ রেফারেন্স মামলা শুনানির জন্য বর্তমানে হাইকোর্টে তিনটি বেঞ্চ রয়েছে।
সুপ্রিম কোর্টের মুখপাত্র মোহাম্মদ সাইফুর রহমান গতকাল বলেন, ‘২১ আগস্টের মামলার পেপারবুকসহ নথিপত্র সতর্কতার সঙ্গে যাচাই–বাছাই চলছে, যা একবারেই শেষ পর্যায়ে। শুনানি–পূর্ব প্রস্তুতির এই প্রক্রিয়া শেষে বিধি অনুসারে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’
দ্যএডিটর৩৬৫/ জেডআই