আজ সিলেট শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ‘কাফন’ পরে শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের তৃতীয় ধাপটিতে গিয়েছে। এই আন্দোলনের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে অহিংসপন্থার প্রতিটি আন্দোলন পদ্ধতি বিনির্মাণ করেছে তারা। পিটিয়ে রক্তাক্ত করার পরে পিঠে রক্তজবার চিহ্ন নিয়ে শিক্ষার্থীরা পুলিশকে ফুল দিয়েছে। এর পরের ধাপে অনশনে গেছে, অসুস্থ হয়েছে; তবু অনশন ছাড়তে চায়নি। এরকম প্রতিবাদ পদ্ধতির প্রয়োগ বাংলাদেশে খুবই নতুন।
আন্দোলন কৌশলের ওপর ইন্টারনেটের লাইব্রেরিতে অনেক লেখা ও ভিডিও আছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি কোর্সের মতোই এই আন্দোলন কোর্সের স্টাডি ম্যাটেরিয়াল।আজকের যুগের ছাত্রদের ইউনির্ভাসিটিতে এসাইনমেন্ট তৈরির জন্য গবেষণা করতে হয়। সেই গবেষণা এরা জীবনের সব পদক্ষেপেই করে। কোথায় ভালো খাবার অর্ডার করা যায়, কোথায় বেড়াতে যাওয়া যায় এরকম যে কোন বিষয়ে তারা পট করে মোবাইল ফোন বের করে গবেষণা করে। এরা যে রকম পারফেক্ট ছবি তুলতে শিখেছে; কিংবা এক কাটে এতো সুন্দর ভিডিও বানাতে পারে, যে আমি বিস্মিত। নতুন প্রজন্ম পারফেকশনিস্ট বিশ্বনাগরিক।
তাই শুধু আঞ্চলিক জাতীয়তাবাদী বিদ্যা দিয়ে এদের হ্যান্ডেল করা কঠিন। এরা ঠান্ডা মাথায় যে কোন বিষয়ে লেগে থাকতে পারে। একারণে এদের উদ্যোক্তা হবার সম্ভাবনা উজ্জ্বল। সবাই তো দেশ থেকে পালাবে না; বেশীর ভাগ তরুণ নিজের দেশে থাকতে চায়। তাই তারা সিস্টেমটাকে সংস্কার করে সমসাময়িক বানাতে চায়। যে ছেলের মাথার মধ্যে বিশ্ববীক্ষা; হাতের মুঠোয় বিশ্বজ্ঞান; আপনি তাকে গলি ঘুঁজির মাস্তানি দিয়ে থামাতে পারবেন না। এতে আপনিই ধীরে ধীরে ডেট এক্সপায়ার্ড ক্লাউন হিসেবে নিজেকে আবিষ্কার করবেন একসময়। উপাচার্য মি ফরিদ কিংবা পলিটিক্যালি ইনকারেক্ট ‘চাষা-ভূষা’ শব্দ ব্যবহার করা শিক্ষিকা; এই যে ডেড টিচার্স সোসাইটি; এরা যে সমাজের বোঝা; শাহজালালের শিক্ষার্থীদের আপত্তি সেখানেই। ব্যাকডেটেড চিন্তার পুঁথিগত বিদ্যার গ্রন্থকীট, দলীয় বুদ্ধি আবর্জনা স্তুপের বুদ্ধিজীবীগুলো, এরা মাথার খুলি ঘরে থুয়ে, এ ওর গায়ে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে কোন মতে।
আধুনিক শিক্ষা পদ্ধতি ছাত্রছাত্রীদের যেমন মূল্যায়ন করে, ছাত্রছাত্রীরাও শিক্ষক ও শিক্ষাপদ্ধতির মূল্যায়ন করে। শিক্ষার্থীদের কাছে এ প্লাস না পেলে একাডেমিক জীবনের এ প্লাসের সারটিফিকেটগুলো বৃথা। শিক্ষক এখন শো বিজের নায়ক-গায়ক-লেখকের মতোই। আপনি পারলে কাজটা করেন, নইলে বিদায় হোন। একেকটা ক্লাস একেকটা কনসার্টের মতো। ক্লাসের সময় ছাত্রছাত্রীদের এনগেজ করে জ্ঞান বিনিময় করে পুরো সময়টা ছাত্র-ছাত্রীদের মনোযোগ ধরে রাখার জাদুকর হচ্ছেন শিক্ষক।শিক্ষক চাকরী পেয়ে গেলেই মিটে গেলো তা হতে পারে না; প্রতি দুই-তিনবছর পর পর শিক্ষকদের চুক্তি নবায়ন করা জরুরি। প্রতিটি কোর্সের শেষে ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষক মূল্যায়নের স্কোর কার্ড শিক্ষককে দিলে, শিক্ষক নিজের স্কোর বাড়াতে সচেষ্ট থাকবেন।
এর মাঝ দিয়ে এমন শিক্ষক বেরিয়ে আসেন, যারা একটা চাকরির চুক্তির চেয়ে অনেক বড়। ছাত্র-ছাত্রী তার পেছনে পেছনে ঘোরে। যেমন ছিলেন, আমার শিক্ষাজীবনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দেখা, সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম, কাশীনাথ রায়, রাজিয়া খান আমিন; আর সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী তো ছিলেন এ যুগের সক্রেটিস। প্রধানমন্ত্রী, শিক্ষামন্ত্রী, শিক্ষার মূল গুরু শিক্ষকদের বদলে যাওয়া সময়ের শিক্ষা-ব্যবস্থা ও শিক্ষক-শিক্ষার পরিবেশ বুঝতে চেষ্টা করতে হবে। এটা জাতি গঠনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জায়গা। এ এমন এক বিনিয়োগ যা সবচেয়ে বেশি মুনাফা দেয়।