** দৃষ্টি ফেরাও **
শুষ্ক তীরভূমি থেকে ফিরে তাকাও প্রিয়
দেখ চারিদিক আচ্ছাদিত ফাগুনের তান্ডবে
অলীক অন্বেষণে কুড়িয়ে পাবে শুধু স্তব্ধতার কাঁটা
এখানে ধানসিঁড়ির মোহনায় রঙ্গের উল্লাস
যাবতীয় শৈথিলতা ফেলে শশব্যস্ত পুষ্প প্রান্তর
আদিগন্ত ধোঁয়াটে খরস্রোতা পথের আর্তনাদ হয়েছে বিলীন
আকাঙ্খিত প্রলয়ের আগমনী কল্লোলে জেগেছে অস্থিরতা
অকস্মাত বেপরোয়া ফল্গুধারায় এসেছে স্নানের আহ্বান
সুপ্ত স্মৃতিফলকের নিশান মুছে দিয়ে শোন ওই নির্ঝরের কীর্তন
মূর্ছিত বালুকাবেলায় দেখ লেগেছে আগুনের ফুলঝুরি
এখানে রুদ্রপলাশের স্বতন্ত্র শিহরনে বেহিসাবি লেলুয়া বাতাস
তোমার আদিগন্ত সূচিবিদ্ধ শূণ্যতা ডুবেছে শ্বেত গহ্বরে
অনাদিব্যাপী শৈতপ্রবাহের চিতায় প্রজ্জ্বলিত ঋতুরাজ
তুষারাবৃত বেদনা জলাঞ্জলি দিয়ে শোন ওই স্রোত মর্মর
কল্পিত দুঃখের বাঁধানো বিলাস মাড়িয়ে চলো অনন্ত প্রণয়ের অভিমুখে
উদভ্রান্ত ব্যকুলতার সময় ফুরিয়েছে আজ
নিরাপদ সুখের সমতলে অবিরাম যাত্রা হবে শুরু
সশঙ্কচিত্তের মরণে যৌবনের প্রতিধ্বনি আজ চারিদিকে
শ্রীহীন তটভূমি থেকে এবার তবে দৃষ্টি ফেরাও।
** অসমর্পিত অভিমান **
দেখে নিও ঠিক একদিন অরণ্য-পথ ধরে হেঁটে যাব সুদূরের আহ্বানে
কোন বেনামি বন্দরে করবো নোঙ্গর যেখানে উদ্ধত সব স্বপ্নেরা ঘুরে বেড়ায়
ক্রীতদাসের নৈবেদ্য ফেলে লক্ষ্যহীন পথ বেছে নেব অসংকোচ আলিঙ্গনে
কম্পমান তারকার মতো আরতির স্তুতি সেখানে ছড়াবে উতরোল
এখানে স্পন্দনহীন নৈরাশ্যে নির্বাসিতের নীড় করি নির্মাণ
নিয়ত কেঁদে যায় সারেঙ্গী তার পুঞ্জীভূত কালীমার ছদ্মবেশে
নিরুদ্দেশ যাত্রায় সঙ্গী করে নেব শ্যওলা দিঘীর ঘাটের ভাটফুলের হাসি
পাঁজরের বুক চিড়ে না গাওয়া সুরের প্রণতি টানবে সমাপ্তির শংকা
চলে যাবো সকল সংশয়, গ্লানি মলিনতা মৃত্যুম্লান বিসর্জন দিয়ে
ঘুমন্ত পাহাড়ের দীর্ঘনিঃশ্বাসে মহাকালের অট্টহাসির মহোৎসব শেষে চলে যাবো
রেখে যাবো দেরাজ বন্ধ সঞ্চিত বিভ্রম আর বহুকালের নির্মিত নিয়তি
স্বপ্নচারী মন অনিশ্চয়তার প্রতিধ্বনিকে স্বাক্ষী করে বেছে নেবে নির্বাসন
বিদায়-সন্ধ্যায় অসমাপ্ত রুপকথার সাথে মিলবে আলোকের অর্ধস্ফুট সুর
নির্লিপ্ত দেবতার অঙ্গুলি নির্দেশিকা উপেক্ষা করে বেছে নেব নটরাজের পোশাক
যাপিত জীবন চূর্ণ করে নতুন হিসাবের খাতায় লিখবো অনিবার্য কথন অনুক্ষণ
নির্বাচিত শুক্লপক্ষের তিথির কাছে রয়ে যাবে আমার সকল অসমর্পিত অভিমান।