ডেস্ক রিপোর্ট : যা হওয়ার দরকার তাই হলো। পাপুয়া নিউগিনির বিপক্ষে বিশাল জয় দিয়ে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের মূল পর্বে খেলার টিকিট নিশ্চিত করেছে বাংলাদেশ।
বৃহস্পতিবার বাংলাদেশের জয় ৮৪ রানে। ৭ উইকেটে টাইগারদের ১৮১ রানের জবাবে ৯৭ রানে শেষ হয় পিএনজির ইনিংস। ম্যাচ সেরা সাকিব।
আল আমেরাত স্টেডিয়ামে পাপুয়া নিউগিনি শিবিরে প্রথম আঘাত হানেন মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন। লেগা সিয়াকাকে এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলেন তিনি। ফেরার আগে ১০ বলে ৫ রান করেন লেগা। এরপর নিজের প্রথম ওভারে তাসকিন আহমেদ ফিরিয়ে দেন আসাদ ভালাকে। ৯ বলে ভালা করেন ৬ রান।
সাকিব বল হাতে নিয়েই শিকারে পরিণত করেন চার্লজ অমিনিকে। অমিনি সীমানার কাছে নাঈম শেখের হাতে ধরা পড়েন। একই ওভারে সাকিব নেন সিমন আতাইয়ের উইকেটও। শূন্য রানেই ফিরে যান আতাই। সেসে বাউকেও নাঈমের ক্যাচ বানান সাকিব। এরপর দশম ওভারে মেহেদী হাসান তুলে নেন নরম্যান ভানুয়ার উইকেট।
পিএনজির মাত্র দুজন ব্যাটার দশের ঘর পেরুতে সক্ষম হন। চাঁদ সোপার ১১ ও কিপলিন দোরিগা ০ রান করেন। সোপারকে ফেরান সাইফ। বাংলাদেশের হয়ে ৪ ওভারে ৯ রানের বিনিময়ে সাকিব নেন চার উইকেট। দুটি করে উইকেট নেন সাইফ ও তাসকিন। একটি উইকেট পান মেহেদী।এর আগে অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের ঝড়ো হাফ-সেঞ্চুরিতে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের বাছাই পর্বে গ্রুপ ‘বি’তে নিজেদের তৃতীয় ও শেষ ম্যাচে পাপুয়া নিউ গিনির বিপক্ষে প্রথমে ব্যাট করে ২০ ওভারে ৭ উইকেটে ১৮১ রানের বড় সংগ্রহ করে বাংলাদেশ। ২৮ বলে ৫০ রান করেন মাহমুদুল্লাহ।
ওমানের আল আমেরাত ক্রিকেট গ্রাউন্ডের ম্যাচে টস জিতে প্রথমে ব্যাটিংয়ের সিদ্বান্ত নেয় বাংলাদেশ। ইনিংসের দ্বিতীয় বলেই প্যাভিলিয়নের পথ ধরেন আগের ম্যাচে ৬৪ রান করা ওপেনার মোহাম্মদ নাইম। আজকের ম্যাচে রানের খাতা খেলার আগেই বিদায় নেন তিনি।
শুরুর ধাক্কাটা ভালোভাবে কাটিয়ে ওঠেন আরেক ওপেনার লিটন দাস ও সাকিব আল হাসান। প্রথম ১৬ বলে কোন বাউন্ডারি বা ওভার বাউন্ডারি পায়নি বাংলাদেশ। ১৭তম বলে প্রথম স্লগ সুইপে ফাইন লেগে উপর দিয়ে ছক্কা মারেন লিটন। পরের ওভারে লং-অন দিয়ে ছক্কা আসে সাকিবের ব্যাট থেকে। ঐ ওভারে ১টি বাউন্ডারিও আদায় করে নেন লিটন।
এরপর পাওয়া প্লের বাকী ওভারগুলোতে আর কোন বাউন্ডারি ও ওভার বাউন্ডারি না আসলেও ৬ ওভার শেষে ৪৫ রান পায় বাংলাদেশ। সপ্তম ওভারে হাফ-সেঞ্চুরিতে পৌঁছায় বাংলাদেশের স্কোর। তবে অষ্টম ওভারের প্রথম বলে লিটন-সাকিবের জমে যাওয়া জুটি ভেঙ্গে যায়। ২৩ বলে ১টি করে চার-ছক্কায় ২৯ রান করে লিটন আউট হলে। সাকিব-লিটন জুটির কাছ থেকে ৪১ বলে ৫০ রান পায় টাইগাররা।
লিটনের বিদায়ে উইকেটে আসেন মুশফিকুর রহিম। উইকেটে সেট হতে সতর্কতার সাথে এগুলেও বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি তিনি। ৫ রান করে আউট হন মুশি। এতে ৭২ রানে তৃতীয় উইকেটের পতন ঘটে। মুশফিকের সাথে ১৯ বলে ২২ রান যোগ করেন সাকিব।
এরপর অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহকে নিয়েও বড় জুটির পথে ছিলেন সাকিব। দলের স্কোর শতরান স্পর্শ করার পরই থেমে যান তিনি। ১৪তম ওভারের দ্বিতীয় বলে পাপুয়া নিউ গিনির অধিনায়ক আসাদ ভালাকে ছক্কাও মারেন সাকিব। তার ছক্কাতেই দলের রান তিন অংকে পা রাখে।
কিন্তু চতুর্থ বলে আবারো ছক্কা মারতে গিয়ে লং-অনে ভালার বলে সাকিবের দুর্দান্ত ক্যাচ দেন চার্লস আমিনি। দারুন ব্যাট করতে থাকা সাকিব চার রানের জন্য হাফ-সেঞ্চুরি মিস করেন। ৩টি ওভার বাউন্ডারিতে ৩৭ বলে নিজের ৪৬ রানের ইনিংসটি সাজান দলের সেরা অলরাউন্ডার।
সাকিবের বিদায়ের পর বাংলাদেশের রানে চাকা দ্রুত ঘুড়িয়েছেন মাহমুদুল্লাহ। সাকিব যখন আউট তখন অধিনায়কের রান ছিলো ১১ বলে ১৬। পরে মারমুখী মেজাজে ২৭ বলে হাফ-সেঞ্চুরির স্বাদ নেন মাহমুদুল্লাহ। এবারের আসরে এখন পর্যন্ত এটিই দ্রুততম হাফ-সেঞ্চুরি। গতকাল ২৯ বলে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে ২৯ বলে হাফ-সেঞ্চুরি করেছিলেন নামিবিয়ার দক্ষিণ আফ্রিকার খেলোয়াড় ডেভিড ওয়াইজ।
১৭তম ওভারে ২টি ছক্কা ও ১টি চার মারেন মাহমুদুল্লাহ। একই ওভারে ১০৫ ম্যাচের টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে ষষ্ঠ হাফ-সেঞ্চুরির স্বাদ পান অধিনায়ক। শেষ পর্যন্ত ২৮ বলে ৩টি করে চার-ছক্কায় ৫০ রান করে আউট হন মাহমুদুল্লাহ। তখন ১৬ বল বাকী ছিল এবং দলীয় রান ছিল ১৪৪।
অধিনায়ক ফিরলেও রান তোলায় ভাটা পড়েনি বাংলাদেশের। আফিফ হোসেনের মারমুখী ব্যাটিং বাংলাদেশকে বড় স্কোরের পথে নিয়ে যেতে থাকে। তিনটি চারে দলের স্কোর ১৬০ অতিক্রম করান তিনি। কিন্তু ১৯তম ওভারের শেষ বলে থামতে হয় ১৪ বলে ২১ রান করা আফিফকে।
শেষ ওভারে প্রথম চার বল থেকে তিন রান নিতে পারেন মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন ও মাহেদি হাসান। তবে পঞ্চম বলে ছক্কা মারেন সাইফুদ্দিন। শেষ বলেও ছক্কা পান সাইফুদ্দিন, আর এই ডেলিভারিটি নো ছিলো। তাই অতিরিক্ত শেষ বলে চার দিয়ে বাংলাদেশের ইনিংস শেষ করেন সাইফুদ্দিন।
৬ বলে ১টি চার ও ২টি ছক্কায় অপরাজিত ১৯ রান করেন সাইফুদ্দিন। ২ রানে অপরাজিত থাকেন মাহেদি। পাপুয়া নিউ গিনির কাবুয়া মোরেয়া-ড্যামিয়েন রাভু ও ভালা প্রত্যেকে ২টি করে উইকেট নেন।
দিএডিটর৩৬৫/এমআরএম