মাসকাওয়াথ আহসানঃ
ললিতাদি ফেসবুকে আক্ষেপ করে লেখে, সেই যে মা আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন; তারপর দেশটা জঙ্গিদের দেশ হয়ে গেলো। তোমরা যারা প্রোপিক লাল করে দেশটাকে মৌলবাদিদের হাতে তুলে দিলে; তারা কি এখনো বুঝতে পারছো না, সাজানো গোছানো দেশটাকে কাদের হাতে তুলে দিলে!
শিবব্রত দাদা এসে চুক চুক করে মন্তব্য করে, ডিসেম্বর গেলো, ফেব্রুয়ারি গেলো শহীদদের অর্ঘ্য দিতে বেদিতে পৌঁছাতে পারলাম না। স্কুল ছাত্ররা হাতুড়ি দিয়ে শহীদ মিনার ভেঙ্গেছে এ কি ভাবা যায়! মার্চ মাস এসে গেলো; তবু পত্রিকায় কোন আয়োজন নেই; দেশটা পূর্ব পাকিস্তান হয়ে গেলো যে!
ভিন্নমত ভাই এসে বলে, ডিসেম্বর-ফেব্রুয়ারি-মার্চ ঠিকই পালিত হয়েছে দাদা। ফেইক নিউজ প্রচার কইরা সেইটা বিশ্বাস করা শুরু করছেন দেখি। আপনার আসলে ভারতের আঁচলটা না থাকলেই বাংলাদেশটাকে পূর্ব পাকিস্তান মনে হয়। সরাসরি সেই কথাটা বললেই তো পারেন!
আষাঢ় বুবু এসে অশ্রুজলে সিক্ত হয়ে মন্তব্য করে, মা কি আমাদের ছেড়ে একেবারেই চলে গেলেন; আর কি শাহবাগে তিস্তাপাড়ের কাশফুল, সিলেটের হাওরে পদ্ম এসে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার দেউটি জ্বালবে না!
ললিতা এসে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে লিখে দেয়, মা আর ফিরবে না।
সেইখানে দু’চারটে হাহা পড়লে হাওরে পদ্ম এসে ক্ষুব্ধ হয়ে লেখে, এরা সব জিন্নাপুত্র যারা হাহা দিলো। মুনতাসির মামুন ঠিকই বলেছিলেন, এই অনিচ্ছুক জাতিকে স্বাধীনতা এনে দেয়াটাই ভুল হয়েছিলো।
একটা বেরসিক লোক কোত্থেকে এসে বলে, মুনতাসির মামুনের মতো আপনাদের যাদের পরিবারে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের ইতিহাস নাই; তারাই কেন মুক্তিযুদ্ধের আওয়ামী ইতিহাস রচনা ও চেতনা শিক্ষার দায়িত্বটা নিলেন বুঝিনা! বাই দ্য ওয়ে, শ্যামাপ্রসাদের পোলা নাকি আপনে!
তিস্তাপাড়ের কাশফুল এসে ধমক দেয়, চুপ কর রাজাকার; আমরা শাহবাগ সেক্টরের মুক্তিযোদ্ধা।
ভিন্নমত ভাই বলে, আপনাদের মা রাজাকার বইলা গালি দিয়া যে পগারপার হইয়া গেলো; তা-ও লজ্জা হয়নি নাকি! ঐ মিয়া খোঁজ নিয়া দেহেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় আপনার পরিবার মুনতাসির মামুনের মতোন আরামেই ছিলো।
কালাজম এসে ভয় দেখায়, ২০ মার্চ তারিখে রেডি থাহিস, আমরা আইতাছি; তগো উপদেষ্টাগো গিয়া বঙ্গোপসাগরে ঝাঁপ দিতে বল, এয়ারপোর্ট থাকবো এতিমের দখলে। স্বাধীনতা দিবসের আগেই দেশ স্বাধীন করুম আমরা।
ললিতাদি এসে ফোঁস ফোঁস করে কেঁদে বলে, আষাঢ় বুবুর মায়ের মৃত্যু নিয়া কেন হাহা দিলো; আপনারা তার বিচার করেন!
ভিন্নমত ভাই বলে, জুলাই আন্দোলনে শহীদ দেড় হাজার মানুষের মৃত্যু নিয়া আপনারা যে নিষ্ঠুরতা দেখাইলেন! আপনারা দেখতেছি মাইরাও কাঁদেন, মইরাও কাঁদেন।
শিবব্রত দাদা এসে কুঁচ কুঁচ করে বলে, মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি কোন শ্রদ্ধাবোধ নেই ওদের; লালবদরদের কাছে এসব বোধ প্রত্যাশা করা ভুল।
ভিন্নমত দাদা বলে, হ শ্রদ্ধাবোধ শিখতে হবে বাল বদরের কাছ থিকা। মুক্তিযুদ্ধ নিয়া ম্যানেজারি বন্ধ করো। তোমরা তো দেশটা তোমাগো স্বামীর হাতে তুইলা দিছিলা। আমরা ধাওয়া দিছি দেইখা তুমার রাগটা যাইতেছেই না।
শিবব্রত দাদা কপালে চোখ তুলে বলে, তুই তো দেখছি ঘরের শত্রু বিভীষণ। লালবদরগো কথায় নাচতেছো নাচো; পরে গিয়া যোগেন মণ্ডলের পরিণতি হইবো তোমার।
ভিন্নমত দাদা বলে, ভারত কিংবা পাকিস্তান; কারো অধীনতা স্বীকার করার জন্য আমগো জন্ম হয় নাই। আমরা তিনটা স্টেপে সার্বভৌমত্বের লড়াই করছি। ১৯৪৭ সালে ভারতের অধীন হওয়ার হাত থিকা বাঁচছি, ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের অধীনতা থিকা মুক্ত হইছি আর ২০২৪-এ ভারতের উপনিবেশ খেদাইছি। বালবদরের কাছ থিকা মুক্তিচেতনা শেখার দরকার নাই আমাগো।
ললিতাদি এসে চিৎকার করে পাড়া মাথায় তুলে, আষাঢ় বুবুর মায়ের চলে যাওয়া নিয়া ট্রল হইছে; আমি এই মানবতা বিরোধী অপরাধের বিচার চাই।
নির্লিপ্ত ধরনের একটা লোক এসে বলে, হাসিনা ছাড়া আপনাগো যে আর কোন মা আছে; সেইটা তো জানা নাই। সাত মাস ধইরা দেড় হাজার শহীদের মৃত্যু নিয়া ট্রোল কইরা এখন আইছেন সিমপ্যাথি নিতে; যাত্রায় নাইমা পড়েন; হিট হইয়া যাইবো।
জুলাই মাসে যারা “রোদ ঝড় বৃষ্টিতে হাসিনা মাকে চাই” বলে ছাত্র-জনতাকে হত্যার উস্কানি দিয়েছিলো; সাত মাস ধরে যারা ডিনাই করে চলেছে আওয়ামী লীগের মানবতা বিরোধী অপরাধ; তারা সবাই জাতির বিবেক হয়ে একে একে নেমে এসে, ছি লজ্জা, লজ্জায় মাথা হেট হয়ে যায়, ওরা কি মানুষ, ঘৃণা প্রকাশের ভাষা নাই, কত নীচে নামলে মানুষ কারো মায়ের মৃত্যু নিয়ে ট্রোল করতে পারে বলে রীতিমত ফেসবুকে আশুরা নামিয়ে আনে। আওয়ামী লীগের কালচারাল ইন্ডাস্ট্রির শেফালি, রুপালি, কল্পনা, আলপনা, শিয়াল ও বিবিধ বেলুন তাদের সেন্স এন্ড সেন্সিবিলিটিতে আঘাতের অভিনয় করে কঁকাতে থাকে। খোঁপায় ক্যামেলিয়া ফুল এঁটে রুদালিরা সমবেত সংগীত পরিবেশন করে, কি ব্যথা অন্তরে ওগো মা!
ভিন্নমত দাদা বলে, এই সেন্স এন্ড সেন্সিবিলিটির এক দশমাংশ যদি জুলাই-এ শহীদদের জন্য দেখাইতে পারতা; তাইলে আর গণধিকৃত হইতা না তোমরা বালবদরেরা।
মাসকাওয়াথ আহসান, সম্পাদক, দ্য এডিটর থ্রি সিক্সটি ফাইভ, প্রধান সম্পাদক, ই-সাউথ এশিয়া।