মাসকাওয়াথ আহসান
পৃথ্বীরাজ চতুর্বেদী (নতুন দিল্লি) ব্রেকফাস্ট টেবিলে তাকে বেশ ফুরফুরে মেজাজে দেখাচ্ছিলো। সীতার অগ্নিপরীক্ষার আগে তাকেও বুঝি অমন আত্মবিশ্বাসী দেখিয়েছিলো।
কী করেননি তিনি! অর্থনীতিতে উন্নয়নশীল দেশের গ্রাজুয়েশন ডিগ্রি নিয়েছেন, এশিয়ার রাইজিং টাইগারের পালক লেগেছে তার মুকুটে, পদ্মা সেতু কানেক্টিভিটির নতুন দিগন্ত খুলেছে, মেট্রোরেলে বিলেতের মৌতাত; ড্রোন ক্যামেরায় এলিভেটেড এক্সপ্রেস হাইওয়ের দৃশ্যচিত্র দেখে মনে হবে সিঙ্গাপুর ওদিক থাক; আমি ঢাকাকে দেখি বরং প্রাণভরে।
আমার ঠাকুরদা বিক্রমপুরের প্রজাহৈতিষী জমিদার ছিলেন, হাতিশালে হাতির পুল ছিলো, ঘোড়াশালে সার কারখানা। জিন্নাহ’র দ্বিজাতি তত্ত্বের অনলে পুড়ে কলকাতায় দশ ফিট বাই দশ ফিটের বেদনায় মুষড়ে গিয়েও দাদু বলতেন, একদিন দেখে নিস; পূর্ব বঙ্গ দেখিয়ে দেবে উন্নয়ন কাকে বলে।
আমি কে-টু পর্বত দেখিনি কিন্তু শেখ হাসিনাকে দেখেছি; উনার অভিধানে অসম্ভব বলে কিছু নেই। উনি কী ইতিহাসের সুলতানা রাজিয়া নাকি বেগম আখতার! তুমি কেমন করে গান করো হে গুণী। তিনি এলেন, দেখলেন, জয় করলেন!
বাংলাদেশের স্বাধীনতার শত্রুরা আর মৌলবাদিরা এখন উন্নয়নের শত্রু। তারা জো বাইডেনকে কানপড়া দিয়ে স্বাধীনতার স্বপক্ষের শক্তির তখত কেড়ে নেবার ষড়যন্ত্র করছে। অথচ বাংলাদেশের তখতে কেবল আওয়ামী লীগেরই অধিকার। যারা শহীদ মিনারে ফুল দেয়, স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা জানায়, টুঙ্গিপাড়ার পূণ্যভূমিতে যেখানে মহামানব ঘুমিয়ে সেই তীর্থে অশ্রুপাত করে; বাংলাদেশ তাদের। তারাই বাংলাদেশের মালিক; আর কেউ নয়।
কিন্তু পররাষ্ট্র মন্ত্রক আমাকে ইশারা দিয়েছিলো, আজ কিছু হতে চলেছে। তাই তো ছায়ার মতো অনুসরণ করেছি গণতন্ত্রের মানসকন্যাকে।
তাঁর মুখোমুখি হতেই যেন জো বাইডেন মন্ত্রমুগ্ধ হলেন, জামদানী শাড়িতে মাদার অফ হিউম্যানিটিকে যেন মা দুর্গার মতো দেখাচ্ছিলো। দশহাতে সামলান তিনি নির্বাচন, উন্নয়ন, শত্রুদমন, ইতিহাসের বয়ান, পররাষ্ট্র নীতি, বাক স্বাধীনতা, প্রেস ফ্রিডম, নির্বাহী বিভাগের প্রতাপ, বিচার বিভাগের সার্বভৌমত্ব, শিক্ষকদের প্রজ্ঞা, বুদ্ধিজীবীর ঈমান।
পাশে পুতুলের মতো ফুটফুটে সুন্দর এক রাজকন্যা, যিনি ভারতবর্ষের সামষ্টিক অটিজমের শুশ্রুষা করছেন ফ্লোরেন্স নাইটেঙ্গেলের মতো। আরেকপাশে শেখ বংশের আরেক বাতি যিনি গবেষণা প্রতিষ্ঠান গড়েছেন সম্রাট অশোকের মতো। রাজ্য পরিচালনায় অশোক তো হতেই হয়।
জো বাইডেন মুহূর্তের মধ্যে যেন বশীকরণের মন্ত্রে খিল খিল করে হেসে উঠলেন সুবোধ বালকের মতো করে। আমরা বুঝতে পারলাম রাহু কেটে গেছে; আবার ভোটের রাতে শ্যামের বাঁশী বাজবে, গণতন্ত্র সেথা রাধার মতো নাচবে!
পররাষ্ট্রমন্ত্রকের চোখে তখন আনন্দাশ্রু; ঋষি দরবেশ; আমরা যারা ফ্রেন্ডস অফ আওয়ামী লীগ; সবাই কাঁদছি তখন; এমন কান্না শেষবার কেঁদেছিলাম সেই ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বরে। এও তো আরেক মুক্তিযুদ্ধই ছিলো পররাষ্ট্রনীতির টেবিলে।
কোথায় আর ভিসা স্যাংশান; এখন এমেরিকাজুড়ে থাকবে আওয়ামী লীগের উন্নয়নের গোলাপ বাগান।
এখন আওয়ামী লীগের ঘাটে চীন-রাশিয়া-এমেরিকা সবাই জলপান করবে; ভারত সেখানে শালি ধানের চিড়ে দেবে।
কী করে সম্ভব হলো এই জাদুকরী কূটনৈতিক বিজয়! ঢাকায় শুনেছি হারুনের ভাতের হোটেলে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, চিত্রতারকা সবাই খায়; অমন আধ্যাত্মিক হোটেল দিল্লিতেও আছে।
গতকাল মোদির হোটেলে যখন আপ্যায়িত হলেন অভ্যাগত অতিথিরা, সবাই মন্ত্রপুত হলেন। আধ্যাত্মিকতার আবেশে নতুন শক্তি পেলেন যুদ্ধজয়ের। ভারত দিবাকর মোদিজি কেদারনাথের পাহাড়ের গুহায় ধ্যান করে এই মন্ত্র মুঠোয় এনেছেন।
আজ ভারতরত্নাকর প্রণব মুখার্জি থাকলে বড্ড খুশি হতেন। হয়তো খুশি হয়ে চারটে রাজস্থানি ঘোড়া দিতেন ঋষি দরবেশকে।
মোদিও কী দেননি কিছুই; তিনি দিয়েছেন ময়ূরপংখী নাও! এই নৌকা আসমুদ্র হিমাচল বিজয় করে গেরুয়া উড়িয়েছে; সেখানে বাংলাদেশ বিজয় তো মুহূর্তের ব্যাপার। লিখে নিন, ২০২৪টা একান্ত আওয়ামী লীগের।
সংবিধিবদ্ধ সতর্কীকরণঃ স্যাটায়ার মনের স্বাস্থ্যের জন্য ভালো।
মাসকাওয়াথ আহসান, সম্পাদক, দ্য এডিটর থ্রি সিক্সটি ফাইভ, প্রধান সম্পাদক, ই-সাউথ এশিয়া