রাজধানীর গুলশানে কলেজ শিক্ষার্থী মোসারাত জাহান মুনিয়া (২১) ধর্ষণ ও হত্যা মামলায় মডেল ফারিয়া মাহবুব পিয়াসার দু’ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।
আজ রোববার ঢাকা মহানগর হাকিম নিভানা খায়ের জেসি শুনানি শেষে এ রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
এদিন পিয়াসাকে ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করে পুলিশ। এরপর এ মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখানো এবং সাত দিনের রিমান্ডে নিতে আবেদন করেন পুলিশ। অপর দিকে তার আইনজীবী রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিনের আবেদন করেন। উভয় পক্ষের শুনানি শেষে বিচারক তার গ্রেফতার দেখানোর আবেদন মঞ্জুর করেন। একই সঙ্গে তার জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে দু’ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
২৬ এপ্রিল সন্ধ্যায় গুলশানের ১২০ নম্বর সড়কের ১৯ নম্বর বাসার একটি ফ্ল্যাট থেকে কলেজ ছাত্রী মোসারাত জাহান মুনিয়ার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
কলেজছাত্রী মোসারাত জাহান মুনিয়ার রহস্যজনক মৃত্যুর ঘটনায় আদালতের নির্দেশে ধর্ষণের পর হত্যার অভিযোগে গুলশান থানায় গত ৭ সেপ্টেম্বর মামলা দায়ের করা হয়। পরে মামলার তদন্তভার দেয়া হয় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই)।
নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৯ (২) (ধর্ষণ) ও দন্ডবিধির ৩০২ ধারায় (হত্যা) এ মামলার প্রধান আসামি বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সায়েম সোবহান আনভীর।
এছাড়া তার বাবা, মা ও স্ত্রীসহ আটজনের নাম আসামির তালিকায় রয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন গুলশান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আবুল হাসান।
গত ৬ সেপ্টেম্বর দুপুরে ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৮ এর বিচারক মামলাটি গ্রহণ করেন। কুমিল্লার বীর মুক্তিযোদ্ধা আওয়ামী লীগ নেতা প্রয়াত মো. সফিকুর রহমানের ছোট মেয়ে মুনিয়ার বড় বোন নুসরাত জাহান তানিয়ার করা এ নালিশি মামলার এজাহারে চাঞ্চল্যকর তথ্য উপস্থাপন করা হয়।
ডাক্তারি পরীক্ষার বরাত দিয়ে ওই এজাহারে বলা হয়েছে, মৃত্যুর আগেও মুনিয়া ধর্ষণের শিকার হয়েছিলেন। বড় দুর্ঘটনার আশঙ্কায় ভোরে যশোরে পালিয়ে বাঁচতে চেয়েছিলেন। মুনিয়া দু’তিন সপ্তাহের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। তার পরনের জামা-কাপড় ছেঁড়া ছিল ও পুরুষের ডিএনএ মিলেছে। আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে এ কলেজ ছাত্রীকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, ছয় নম্বর আসামি সাইফা রহমান মিম এক নম্বর আসামি সায়েম সোবহান আনভীরের গার্লফ্রেন্ড ও সাত নম্বর আসামি কথিত মডেল ফারিয়া মাহবুব পিয়াসার (মাদকসহ গ্রেফতারের পর বর্তমানে কারাবন্দি) সঙ্গেও এ আসামির বিশেষ সম্পর্ক রয়েছে। পিয়াসা প্রতিহিংসার বশবর্তী হয়ে ভিকটিম মুনিয়াকে বিভিন্ন সময় ফোন করে আনভীরের সঙ্গ ত্যাগ করতে বলে এবং তার মাধ্যমেই দু’নম্বর আসামি আনভীরের মা আফরোজার কাছে ভিকটিম সম্পর্কে কুৎসা রটিয়ে হত্যার প্ররোচনা দেয়। পিয়াসার মাধ্যমেই মুনিয়াকে বসুন্ধরা এলাকার বাসায় ডেকে নিয়ে প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে গ্রামের বাড়িতে যেতে বাধ্য করে প্রধান আসামির পরিবার।
ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৮ আদালতে মুনিয়ার বড় বোন নুসরাত জাহান তানিয়া বাদি হয়ে এ মামলা করেন। ওই আদালতের বিচারক বেগম মাফরোজা পারভীন মামলাটি গ্রহণ করে পিবিআইকে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন। এদিন দুপুরে নুসরাতের জবানবন্দি রেকর্ড করেন আদালত। ধর্ষণের পর হত্যার এ চাঞ্চল্যকর মামলায় প্রধান আসামি বসুন্ধরার এমডি সায়েম সোবহান আনভীর (৪২)। পাশাপাশি তার বাবা বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান ৭০, মা আফরোজা সোবহান ৬০, আনভীরের স্ত্রী সাবরিনা ৪০, হুইপপুত্র শারুনের সাবেক স্ত্রী সাইফা রহমান মিম (৩৫), কথিত মডেল ফারিয়া মাহবুব পিয়াসা, পিয়াসার বান্ধবী ও ঘটনাস্থল গুলশানের ফ্ল্যাট মালিকের স্ত্রী শারমিন (৪০) ও তার স্বামী ইব্রাহিম আহমেদ রিপনকে (৪৭) আসামি করা হয়েছে।
দিএডিটর৩৬৫/এমআরএম