মাসকাওয়াথ আহসানঃ
প্রাইম মিনিস্টার ইন হোপ তাহাজ্জুদের নামাজ পড়ে দোয়া করেন ভারতের মঙ্গলের জন্য। এরপর লুটিয়েন্স প্যালেসের বাগানে হাঁটাহাঁটি করতে থাকেন। এমন সময় তার এটেনডেন্স রোদেলা সিং আসে এক কাপ চা হাতে নিয়ে। তিনি জিজ্ঞেস করেন, কি তোমরা শিখরা ভারতের সঙ্গে আছো তো; নাকি পেয়ারা পাকিস্তানের পক্ষে চলে গেছো; তোমাদের শিখদের গুষ্টি ধরে পাকিস্তানে পাঠিয়ে দেয়া উচিত। তোমরা সব রাজাকার।
রোদেলা সিং মুচকি হেসে বলে, আমি তো আমার দেশেই আছি ম্যাম। রাজাকারি করার অপরাধে আপনার দলকে গুষ্টিসুদ্ধো ভারতে পাঠিয়ে দিয়েছে বাংলাদেশের জনগণ।
–এই মেয়ে মুখে মুখে তর্ক কোরোনা।
–আপনিও একটু বুঝে শুনে কথা বলুন ম্যাম। আমরা শিখেরা কারো অন্যায় কথা সহ্য করি না।
রোদেলা সিং চা দিয়ে চলে গেলে উনি ফোন করেন বিজিত দোভালকে। বিজিত ফোন ধরলে উনি নালিশ করেন, এই শিখ মেয়েটিকে চেঞ্জ করে আমাকে একজন বাঙালি এটেনডেন্ট দিন। ওর আচার আচরণ ভালো নয়।
–ভীষণ দুঃশ্চিন্তায় কাটছে প্রাইম মিনিস্টার ইন হোপ। নর্দান ফ্রন্টের চিফ যুদ্ধ করতে অস্বীকৃতি জানাচ্ছে। কেউ-ই ঠিক এই যুদ্ধে জড়াতে চায় না।
–ও নিয়ে ভাববেন না; আমার দলের বীর সৈনিকেরা যুদ্ধে যাবে। মানুষ হত্যার দীর্ঘ অভিজ্ঞতা তাদের।
বিজিত দোভালের ফোন রেখেই উনি ফোন করেন নৌফেল ও হাতেমকে। একটা যুদ্ধের নোটিশ পাঠাতে বলেন দলের নেতা কর্মীদের।
ঘন্টা দুয়েকের মধ্যে লুটিয়েন্স প্যালেসের সামনের পার্কে হাজির হয়ে যান যুদ্ধ কমান্ডারেরা।
ভারত-পাকিস্তান সীমান্তের মানচিত্র টেবিলের ওপর রেখে পুলিশ মনিরুল স্ট্র্যাটেজি সাজাতে থাকে। তার পাশে দাঁড়িয়ে সুভাষ সিং হ ঢাউস একটা বই থেকে চাণক্য পড়ে শোনাতে থাকে। শামীম ওসমান হুংকার দেন, খেলা হবে।
আসাদুজ্জামান কামাল ঠিক করে দেন, খেলা হোঙ্গে।
পুলিশ হারুন দুই পকেটে হাত রেখে চিৎকার করে বলে, খেলা হোঙ্গে।
সাদ্দামের নেতৃত্বে হেলমেট পরে মার্চ পাস্ট করতে থাকে ছাএলীগের ছেলেরা। সম্রাটের নেতৃত্বে যুবলীগের লোকেরা শরীর চর্চা করে।
প্রাইম মিনিস্টার ইন হোপ আসেন বিজিত দোভালের সঙ্গে। টাবু একটা ওয়াকিটকিতে অক্ষয় কুমার, ইমরান হাশমিকে পজিশন নিতে বলে পার্কের দুটি কি পয়েন্টে। কঙ্গনা রানাওত সেনা ইউনিফর্ম পরে হাজির হয়। অর্ণব গোস্বামী চেঁচাতে থাকে, উই উইল ওয়াইপ আউট পাকিস্তান ফ্রম দ্য ওয়ার্ল্ড ম্যাপ।
ছাএলীগ ও যুবলীগের সুসজ্জিত সেনাদল গার্ড অনার দেয় প্রাইম মিনিস্টার ইন হোপকে। তিনি সালাম গ্রহণ করেন।
মনির এসে ব্রিফ করে, পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে কয়েকটি জঙ্গী আস্তানা রয়েছে বলে ঘোষণা দিতে হবে। অর্ণব গোস্বামী একশোবার কথাটা বললেই তা ধ্রুব সত্য প্রমাণিত হবে।
কমান্ডার সম্রাটের নেতৃত্বে এই অভিযানের নাম হবে, অপারেশন ওয়াইপ আউট। যুবলীগ ও ছাত্রলীগের সৈনিকেরা কয়েকটা বাড়ি ঘিরে ফেলবে। রিপাবলিক টিভিতে এই জঙ্গী বিরোধী অভিযান লাইভ টেলিকাস্ট করা হবে।
শামীম ওসমান চিৎকার করেন, খেলা হোঙ্গে। কামাল, আরাফাত, নাসিম সমস্বরে বলেন, খেলা হোঙ্গে।
এতোক্ষণে অগ্নিবীণা সিক্রি এসেছেন, উনি এই ব্রিগেড ২০৪১-এর রণসজ্জা দেখে মুগ্ধ হয়ে বলেন, হার এক্সেলেন্সি আপনাদের দেখে আমাদের অনেক কিছু শেখার আছে। আমাদের এখানে লিবেরেল দলগুলো মিন মিন করছে যুদ্ধ নয় শান্তি চাই বলে। অথচ আপনারা বাংলাদেশের একমাত্র প্রবাসী লিবেরেল দলটি কি অসম সাহসী ও যুদ্ধংদেহি।
গর্বে প্রাইম মিনিস্টার ইন হোপ আপ্লুত হন। তিনি বলেন, স্বজন হারানোর বেদনা আমার চেয়ে বেশি আর কে বোঝে। পেহেলগামের প্রতিশোধ তাই নিতেই হবে।
আরাফাত এগিয়ে এসে বলে, আমাদের অধিকাংশ নেতার হেলিকপ্টার ও স্পিড বোটে চড়ার অভিজ্ঞতা আছে। প্রাইম মিনিস্টার ইন হোপের পিয়নই তো হেলিকপ্টারে চড়তো।
বিজিত দোভাল সিদ্ধান্ত দেন, বিপুর নেতৃত্বে এয়ার ফোর্স কমান্ড ও ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে একটি নৌকমান্ড প্রস্তুত করা হবে। ভারত থেকে নদীর পানি ছেড়ে পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীর পানিতে ভাসিয়ে দেয়া হয়েছে। কাজেই সেখানে জঙ্গী বিরোধী অভিযানে নৌকমান্ড প্রয়োজন হবে।
সুভাষ সিংহ পরিচয় করিয়ে দেয় সাইবার যোদ্ধা বালটনের সঙ্গে। সিপি গ্যাং-এর সদস্যদের মধ্যে এই গুনধর ছেলেটি অনেক নাম করেছে। সুইপারপল্লীতে শৈশবে সে গালাগাল আবৃত্তিতে প্রথম হয়ে চাইল্ড আর্টিস্ট হিসেবে জীবন শুরু করেছিলো; আর এখন তো সে চলিষ্ণুগালিকল্পদ্রুম। সে একাই পারবে পাকিস্তানিদের গালি দিয়ে ভুত ছুটিয়ে দিতে।
বাল্টন কসরত দেখাতে ডিগবাজি দিয়ে দিয়ে পাকি পাইক্কা পাকি জা-জ পাকি বী- ইত্যাদি কবিতা আবৃত্তি করতে থাকে।
অগ্নিবীণা সিক্রি বলেন, থাক থাক অনেক হয়েছে বেটা। তোমাকে বিজেপির আইটি সেলে ট্রেইনার হিসেবে নিয়োগের বন্দোবস্ত করছি।
বিজিত দোভাল খানিকটা নিশ্চিন্ত ও নির্ভার হয়ে মোদীকে ফোন করেন, মি প্রাইম মিনিস্টার প্রবাসী আওয়ামী লীগের চারটি ব্রিগেড পাকিস্তান বিনাশী যুদ্ধে অংশ নিচ্ছে। জলে-স্থলে-অন্তরীক্ষে ওরা লড়বে। ভারতীয় জেনারেলরা যুদ্ধে কেমন তবে কিন্তু করছে; অথচ আওয়ামী লীগের ব্রিগেড কমান্ডার থেকে সৈনিক যুদ্ধ তৃষ্ণায় এক্ষুণি আঘাত হানতে চায়।
মোদি অত্যন্ত তৃপ্ত হয়ে বলেন, আচ্ছে দিন। বহুত আচ্ছে দিন।
(এটি একটি কাল্পনিক গল্প মাত্র)
কার্টুন কৃতজ্ঞতাঃ অপু
মাসকাওয়াথ আহসান, সম্পাদক, দ্য এডিটর থ্রি সিক্সটি ফাইভ, প্রধান সম্পাদক, ই-সাউথ এশিয়া।