বহুত্ববাদের মিলনতীর্থে লতাজী’র প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানাতে শাহরুখ খান প্রার্থনা করেছেন মুসলিম রীতিতে, আর তার ম্যানেজার পুজা প্রার্থনা করেছেন হিন্দুরীতিতে। সত্য-সুন্দর-মঙ্গলের বহুনদী এভাবেই এসে মিশে ভালোবাসার সমুদ্রে।
সদ্য প্রয়াত লতা মংগেশকার বিজেপি নেতা নরেন্দ্র মোদিকে বেশ পছন্দ করতেন। দক্ষিণ এশিয়ায় মানুষের বয়স যত বেশি হয়, সে তত সৃষ্টিকর্তা ও ধর্মের দিকে ঝুঁকে যায়। আর সৃষ্টিকর্তা নিজে যার কন্ঠে জাদুকরী সুর দিয়েছেন, তিনি তো সৃষ্টিকর্তার কাছে নিজেকে সমর্পণ করাটাই স্বাভাবিক। আবার এই লতা হিন্দু-মুসলমান বন্ধনের গানও গেয়েছেন।
ভুপেন হাজারিকা, ভিক্টর ব্যানার্জী হয়ে আজকের “দাদা আমি সাতে পাঁচে থাকিনা” পর্যন্ত অনেক শিল্পীই বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন। প্রিয় নেতা প্রণব মুখার্জিও বিজেপির দিকে এতো ঝুঁকে গিয়েছিলেন যে তার মেয়ে শর্মিষ্ঠা বিব্রত বোধ করেছিলেন, বাবা তাকে বিজেপির সাংসদ হতে বলায়। এসব বিজেপি ঘেঁষা প্রিয় মানুষকে আমি ব্যক্তিগতভাবে সবসময় পছন্দ করেছি। কারো কংগ্রেস, তৃণমূল, বামদল, আম আদমি পার্টি করার অধিকার থাকলে কারো ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলকেও সমর্থন করার অধিকার আছে। আংগেলা মেরকেল তো খ্রিস্টিয়ান ডেমোক্রেট পার্টির নেত্রী ছিলেন, তিনি কী এক অসাম্প্রদায়িক অভিবাসী বান্ধব নীতি উপহার দেননি জার্মানিতে!
কবি আল মাহমুদ ধর্মে ঝুঁকেছিলেন তার মায়ের হারিয়ে যাওয়া সোনার নোলক খুঁজতে। তিনি খুঁজে পেয়েছেন কীনা জানিনা, কিন্তু তার কবিতা পাঠ করে মনে হয়েছে গড গিফটেড কবি তিনি। সুতরাং খোদার আরাধনা তাকেই তো মানায়।ফেসবুকে কারো মৃত্যু খবর আসা মাত্র একদল তাকে বেহেশতে পাঠায়, আরেকদল পাঠায় দোজখে। যার নিজের প্রাত্যহিক জীবনে একটু সুখ আছে সে মৃতকে স্বর্গে নমিনেশান দেয়। যার জীবন দুনিয়ার দোজখ যন্ত্রণায় তেতো, সে নমিনেশান দেয় নরকের।
যার যে ধর্ম পছন্দ সে সেই ধর্ম পালন করুক। যার যে রাজনৈতিক দল পছন্দ সে তা সমর্থন করুক। এই ইচ্ছার স্বাধীনতার প্রতি পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধই সভ্যতা। মূল সমস্যা হচ্ছে কট্টরপন্হায়, সেটা ধর্মীয় কট্টরপন্হা হোক বা দলীয় কট্টরপন্হা হোক কিংবা চিন্তার কট্টরপন্হা হোক। কট্টরপন্হা মানে যুক্তিহীনতা। যুক্তি যেখানে শেষ হয়ে যায়, ক্রোধ সেখান থেকে আদিমতা জন্ম দেয়।