ভারী বৃষ্টিপাত ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে দেশের উত্তর ও মধ্যাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। নদীর পানি ক্রমশ বাড়ার ফলে দেশের আট জেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে।
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) বলছে, এখনও দেশের প্রধান নদীগুলোতে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। সে জন্য বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতির শঙ্কা করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে গতকাল রবিবারের সর্বশেষ তথ্য মতে দেশের পাঁটি নদীর পানি আটটি পয়েন্টে বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
পাউবো জানিয়েছে, সবচেয়ে বন্যাপ্রবণ নদ ব্রহ্মপুত্রের পানিও বাড়ছে। এই নদের অববাহিকাও প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ব্রহ্মপুত্র-যমুনা ও পদ্মার পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা অব্যাহত থাকতে পারে। এছাড়া স্থিতিশীল হতে পারে তিস্তা নদীর পানিও।
আজ সোমবারের মধ্যে কুড়িগ্রাম, সিরাজগঞ্জ, পাবনা, কুষ্টিয়া, মানিকগঞ্জ, রাজবাড়ী, ফরিদপুর ও শরিয়তপুর জেলার নিম্নাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে। এ সময় যমুনা নদী সিরাজগঞ্জ পয়েন্টে এবং ধলেশ্বরী নদীর পানি এলাসিন পয়েন্টে বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে। এছাড়া পরবর্তী ১০ দিনের মধ্যমেয়াদি এক পূর্বাভাসে পাউবো জানিয়েছে, ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে পাউবো।
আগামী ২৭ আগস্টের মধ্যে জামালপুর জেলার বাহাদুরাবাদ স্টেশন, বগুড়া জেলার সারিয়াকান্দি স্টেশন, সিরাজগঞ্জ জেলার কাজীপুর স্টেশনে পানি বিপৎসীমার কাছাকাছি পৌঁছাতে পারে। মানিকগঞ্জের আরিচা স্টেশন, সিরাজগঞ্জের সিরাজগঞ্জ স্টেশন এবং টাঙ্গাইলের এলাসিন ঘাট স্টেশনেও পানি বিপৎসীমার কাছাকাছি পৌঁছাতে পারে। ইতিমধ্যে এসব স্থানের কোথাও কোথাও পানি বিপৎসীমা ছাড়িয়ে গেছে।
গঙ্গা নদীর পানির আগামী পাঁচ দিন স্থিতিশীল থাকতে পারে। তবে পদ্মা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকতে পারে। রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ পয়েন্টে ও শরীয়তপুরের সুরেশ্বর পয়েন্টে পানি আগামী সাত দিন স্থিতিশীল থাকতে পারে, যার ফলে চলমান বন্যা পরিস্থিতি আগামী সাত দিন অব্যাহত থাকতে পারে। এছাড়া মুন্সীগঞ্জের ভাগ্যকূল এবং মাওয়া পয়েন্টে পানি ২৫ আগস্ট নাগাদ বিপৎসীমার কাছাকাছি পৌঁছাতে পারে। তবে, ঢাকার চারপাশের নদীগুলোতে পানি বাড়লেও বিপৎসীমা অতিক্রমের ভয় নেই।
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আরিফুজ্জামান ভুঁইয়া জানান, এখন পাঁচটি নদীর পানি আট স্থানে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এর মধ্যে ধরলার পানি কুড়িগ্রামে বিপৎসীমার সাত সেন্টিমিটার, সিরাজগঞ্জের কাজীপুরে যমুনার পানি ১ সেন্টিমিটার, পাবনার মথুরায় ১২ সেন্টিমিটার, মুন্সীগঞ্জের আরিচায় ২ সেন্টিমিটার, আত্রাইয়ের পানি সিরাজগঞ্জের বাঘাবাড়ীতে ৯ সেন্টিমিটার, পদ্মার পানি রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে ৫২ সেন্টিমিটার ও শরীয়তপুরের সুরেশ্বরে ৮ সেন্টিমিটার এবং গড়াই নদীর পানি কুষ্টিয়ার কামারখালি স্টেশনে ১৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
অন্যদিকে রাজবাড়ীর দৌলতদিয়ায় পদ্মার পানি ৬ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপৎসীমার ৫২ সেন্টিমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পদ্মার পানি বেড়ে যাওয়ায় সদর ও গোয়ালন্দ উপজেলার কয়েক ইউনিয়ন এলাকার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে হাজারো মানুষ। রাজবাড়ী সদর উপজেলার বরাট ইউনিয়নের আকবার মোল্লা বলেন, গত এক সপ্তাহ আমরা পানিবন্দি অবস্থায় আছি। আমাদের যাতায়াতের সমস্যা হচ্ছে। রান্না করতে পারছি না, খাওয়া-দাওয়ার কোনো ঠিকঠিকানা নেই।
নীলফামারীতে উজানের ঢল ও ভারী বর্ষণে তিস্তা নদীর পানি বিপৎসীমার ওপরে উঠে ১৫টি গ্রামের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। নিম্নাঞ্চলের অন্তত ৫ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়েছে।
মানিকগঞ্জে গত ২৪ ঘণ্টায় উজান থেকে নেমে আসা ঢলে শিবালয় উপজেলায় আরিচার যমুনা পয়েন্টে ৬ সেন্টিমিটার পানি বেড়ে বিপৎসীমার ৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
কুড়িগ্রামে পানি বৃদ্ধির ফলে প্লাবিত হয়ে গেছে ধরলা অববাহিকায় নিম্নাঞ্চলগুলো। তলিয়ে গেছে এসব এলাকার রোপা আমনখেতসহ বিভিন্ন সবজিখেত।
কুষ্টিয়ার দৌলতেপুরে পদ্মা নদীতে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। উপজেলার পদ্মা তীরবর্তী চরাঞ্চলের চারটি ইউনিয়নের ৪০টি গ্রামের প্রায় ৬০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। চারিদিকে অথৈ পানিতে সেখানকার মানুষ চরম দুর্ভোগের মধ্যে দিন পার করছে।
টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরের সবকটি নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় টাঙ্গাইলে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে। যমুনা নদীর পানি পোড়াবাড়ি পয়েন্টে ১১ সেন্টিমিটার, ধলেশ্বরী নদীর পানি এলাসিন পয়েন্টে ১৫ সেন্টিমিটার ও বংশাই নদীর পানি মির্জাপুর পয়েন্টে ৮ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়েছে।
দ্যএডিটর৩৬৫/ জেডআই