মাসকাওয়াথ আহসানঃ
বইমেলায় পতিত ফ্যাসিস্ট হাসিনা ঝুড়িতে বাদামের খোসা ফেলার ঘটনাকে কেন্দ্র করে ফ্যাসিবাদি দুনিয়ায় প্রতিবাদের ঝড় বয়ে যাচ্ছে। ফেসবুকে ময়লা হাসিনা ঝুড়িতে বাদামের খোসা ফেলার ছবি ছড়িয়ে পড়লে; মনে হয় যেন ফ্যাসিবাদিদের লেজে কেউ তারা বাতি বেঁধে দিয়েছে। সেই তারা বাতির আগুনে ফ্যাসিজমের রুচি চানাচুর ফ্যাক্টরিতে আগুন লেগেছে।
রুচি চানাচুর ফ্যাক্টরির মালিক এজরা পাউন্ড বললেন, একি ভাবা যায়; বইমেলায় হাসিনা ময়লার ঝুড়ি; ঐ ঝুড়ির ছবি দেখেই আমাদের ফ্যাসিবাদি লেখক পরিষদের লেজে আগুন লেগে যায়। সেই লেজের আগুনে রুচি চানাচুর ফ্যাক্টরি পুড়ে ছারখার হয়ে গেছে।
ফ্যাসিবাদি রুচি চানাচুর ফ্যাক্টরিতে আগুন লাগার খবরে ছুটে আসেন বেনিতো মুসোলিনি। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, রুচিবোধ বলে কিছুই অবশিষ্ট রইলো না। যাবো না ঐ বইমেলায়; যেখানে ফ্যাসিস্টের কোন সম্মান নেই। হাসিনা তো আমার মতো মেট্রোরেল দিয়েছেন, শিল্পী-সাংবাদিকের সমবায় সমিতিতে ত্রাণ দিয়েছেন, ধন-ধান্য পুষ্পভরা গান গেয়েছেন, সংবাদ সম্মেলনে অত্যন্ত রুচিশীল কথা বলেছেন সব সময়; তবু তার অসম্মান কেন!
খবর পেয়ে ভস্মীভুত রুচি চানাচুর ফ্যাক্টরিতে পৌঁছেন আডলফ হিটলার। তিনি বিক্ষুব্ধ হয়ে বলেন, অত্যন্ত রুচিহীন কাজ হয়েছে হাসিনা ময়লার ঝুড়ি নির্মাণ। তিনি তো ময়লা অপছন্দ করেন বলেই বাগানের আগাছা পরিষ্কারে ক্রসফায়ার করেছেন, এইতো জুলাই-অগাস্ট মাসে ময়লা পরিষ্কার করতে গণকবর ও লাশ পুড়িয়ে ফেলার বন্দোবস্ত করেছেন। এছাড়া গুম পদ্ধতিতেও তিনি ময়লা পরিষ্কার করেছেন। তাকে অসম্মান করা বড্ড অশোভন কাজ হয়েছে।
একটা চেয়ারে চড়ে ইদি আমিন আসেন। চারজন লোক চেয়ারটি বহন করে নিয়ে আসে। ইদি আমিন বলেন, মাদার অফ হিউম্যানিটিকে অসম্মান করলে সে দেশে হিউম্যানিটি থাকবে কি করে। হাসিনা ময়লার ঝুড়ির মাধ্যমে তাকে ডিহিউম্যানাইজ করা হয়েছে। অথচ কেউ কখনো বলতে পারবে না হাসিনা তার প্রতিপক্ষকে কখনো ডিহিউম্যানাইজ করেছেন। উনি তো প্রতিপক্ষকে বেহেশতের পাসপোর্ট ধরিয়ে দিয়েছেন; সুরম্য আয়নাঘরের বসন্তে ফুল খেলবার ব্যবস্থা করেছেন; হাসিনার মতো এমন সোনার মানুষ কোথায় গেলে পাবিরে বল!
টিস্যুতে চোখ মুছতে মুছতে এসে হাজির হন রবার্ট মুগাবে। তিনি কান্না বিজড়িত কন্ঠে বলেন, হাসিনা ময়লার ঝুড়ি নির্মাণের প্রতিবাদে ফিনিক্স পাখির মতো ফেসবুকে উদয় হয়েছে রুচিশীল ফ্যাসিবাদি, যারা ক্যাম্পাসে কৃষ্ণচূড়া ফুল দেখে জুলাই মাসে বলেছিলো, সব কিছু স্বাভাবিক হয়ে আসছে। যারা পোস্টার হাতে দাঁড়িয়েছিলো, রোদ ঝড় বৃষ্টিতে হাসিনাকে চাই। এদের সবাইকে এতিম করে উনি দিল্লিতে পালিয়ে যেতে বাধ্য হলেও আজ দেখুন তাকিয়ে, দিকে দিকে এতিমের প্রতিবাদের ঝড়। মব সার্ভিসের ভয়ে তারা এমনিতেই বইমেলায় যেতে পারতো না; কিন্তু বইমেলায় হাসিনা ময়লার ঝুড়ি স্থাপনে তারা এখন বলতে পারছে, যাবো না ঐ বই মেলায়।
ধীর পায়ে এগিয়ে আসেন নরেন্দ্র মোদি, তিনি শ্লোগান দেন, জয় শ্রীরাম। এরপর সবাইকে আশ্বস্ত করেন, ভগবান যা করেন ভালোর জন্যই করেন। হাসিনা ময়লার ঝুড়ি তার ভক্তদের আবার ঐক্যবদ্ধ করেছে। তারা সুদে আসলে এই অপমানের প্রতিশোধ নিতে একাট্টা। আমি চারটা লালঘোড়া ছোলা খাইয়ে মোটাতাজা করছি। প্রথম সুযোগেই জলপাই বনে উপহার হিসেবে পাঠাবো ঘোড়াগুলো। অমনি দেখবেন, ময়লার ঝুড়ি লাইলাতুল ইলেকশনের প্রসাদের ঝুড়ি হবে। আচ্ছে দিন আবার ফিরে আসবে।
চিত্রকর্ম কৃতজ্ঞতাঃ দেবাশিস চক্রবর্তী
মাসকাওয়াথ আহসান, সম্পাদক, দ্য এডিটর থ্রি সিক্সটি ফাইভ, প্রধান সম্পাদক, ই-সাউথ এশিয়া।