বগুড়ার সারিয়াকান্দির কালিতলা ও জামালপুরের মাদারগঞ্জ উপজেলার জামথলের মধ্যে চালু হচ্ছে ফেরি। ফেরি চালু হলে ঢাকার সঙ্গে সারিয়াকান্দির (সারিয়াকান্দি পয়েন্ট থেকে) দূরত্ব কমবে প্রায় ৮০ কিলোমিটার। এর ফলে ফেরি পথে উত্তরাঞ্চলের সাথে নতুন রুট যুক্ত হচ্ছে।
আজ বৃহস্পতিবার ফেরি সার্ভিসের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন প্রধান অতিধি নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সংসদ সদস্য মির্জা আজম।
এই খবরে যমুনার দুই পাড়ের মানুষের মধ্যে খুশির বন্যা বইছে। নতুন এ সার্ভিস চালুর মাধ্যমে ঢাকাসহ দেশের উত্তরাঞ্চলের বেশ কিছু জায়গার দূরত্ব কমবে। খরচের দিক থেকেও সাশ্রয়ী হবে অনেকটা। সেই সাথে যমুনা সেতু পারাপারে যাত্রী চাপ কমবে।
আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও জামালপুর-৩ আসনের সাংসদ মির্জা আজম বলেন, ফেরি সার্ভিস চালুর প্রস্তুতি প্রায় শেষের দিকে। আপাতত যমুনার দুই পারে কোনো ফেরিঘাট নির্মিত হচ্ছে না। তিনি আরও বলেন, যাত্রী ও ছোট গাড়ি পারাপারের মধ্য দিয়ে ফেরি সার্ভিস চালু হলেও শিগগিরই বড় যানবাহন পারাপার শুরু হবে। এ জন্য বগুড়া-জামালপুর আঞ্চলিক মহাসড়ক নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। জামালপুর–মাদারগঞ্জ থেকে জামথল পর্যন্ত এলজিইডির ১২ ফুট সড়ক ২৪ ফুটে উন্নীত করতে সড়ক ও জনপথ বিভাগে হস্তান্তর করা হয়েছে।
জানা যায়, জামালপুরের মাদারগঞ্জ থেকে সারিয়াকান্দি উপজেলার কাজলা ইউনিয়নের জামথল পর্যন্ত এলজিইডির নির্মিত ১২ ফুট সড়ক ২৪ ফুটে উন্নীত করতে সড়ক ও জনপথ বিভাগে হস্তান্তর করা হয়েছে। সারিয়াকান্দি উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সারিয়াকান্দি পৌরসভার মেয়র মতিউর রহমান মতি বলেন, ফেরি সার্ভিসটি চালু হলে দু’পারের মানুষকে নৌকার জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকতে হবে না। পণ্য আনা-নেওয়ায়ও সুবিধা হবে।
জামালপুর ও বগুড়া জেলার মধ্যে যমুনার নৌপথে ফেরি সার্ভিস চালু করার বিষয়ে দীর্ঘদিন চেষ্টা চলছিল। ফেরি সার্ভিসের উদ্বোধন হলেও পরীক্ষামূলকভাবে চলবে সি-ট্রাক। পূর্ণাঙ্গ ফেরি সার্ভিস চালু করতে সময় লাগবে আরও কয়েক মাস। বিআইডাব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষ এই নৌপথে চলাচলের জন্য ২শ আসনবিশিষ্ট শহীদ আব্দুর রউফ সেরনিয়াবাত নামে একটি সি-ট্রাক এরই মধ্যে মাদারগঞ্জের জামথল ঘাটে ভিড়িয়েছে। ভরা বর্ষা মৌসুমে দুই ঘাটের দূরত্ব থাকে ১০ কিলোমিটার। শুকনো মৌসুমে দূরত্ব বেড়ে ১৫ কিলোমিটার হয়। শুরুতে সি-ট্রাকটি এই নৌপথে দিনে চারবার যাতায়াত করবে। সময় লাগবে ৪০ মিনিটের মতো।
যাত্রীরা বলছেন, বঙ্গবন্ধু সেতু দিয়ে ঢাকায় যাতায়াতের ক্ষেত্রে ৮০ কিলোমিটার পথ বেশি ঘুরে যেতে হয়। এতে করে একদিকে যেমন বাড়তি সময় লাগছে, তেমনি গুনতে হয় বাড়তি ভাড়াও। অথচ সারিয়াকান্দি দিয়ে জামালপুর হয়ে ঢাকায় যেতে সময় লাগছে তার অর্ধেক, খরচও হচ্ছে কম। তবে নৌকায় রোদ-বৃষ্টির ঝামেলাসহ দূর্ঘটনার ঝুঁকি নিয়ে পারাপার হতে হয়। এক্ষেত্রে ফেরি চলাচল করলে দীর্ঘদিনের এই সমস্যার সমাধান হবে। এদিকে ফেরি চালু হলে বেচাকেনা বাড়বে বলে আশা করছেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা।
বৃহস্পতিবার (১২ আগস্ট) সকাল ১০টায় ফেরি সার্ভিস আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের পর ২শ যাত্রী নিয়ে মাদারগঞ্জ থেকে বগুড়ার সারিয়াকান্দির কালিতলা ঘাটের উদ্দেশে যাত্রা করবে।
জানা যায়, জামালপুরের মাদারগঞ্জ থেকে জামথল ঘাট পর্যন্ত এলজিইডির আওতাধীন আট কিলোমিটার দীর্ঘ ১২ ফুট সড়কটি ২৪ ফুটে উন্নীত করতে সড়ক ও জনপথ বিভাগে হস্তান্তর করা হয়েছে। সড়ক ও জনপথ এই সড়ক নির্মাণের জন্য এরই মধ্যে জমা দিয়েছে ১৯২ কোটি টাকার প্রকল্পের পিপি।
সারিয়াকান্দি পৌরসভার মেয়র মতিউর রহমান জাগো নিউজ বলেন, সারিয়াকান্দি-মাদারগঞ্জ রুটে ফেরি চালু হলে কৃষকদের জন্য বিপ্লব ঘটবে। কারণ চরাঞ্চলের অবহেলিত কৃষক কখনই তাদের উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য পায় না। আবার চর থেকে রাজধানীর বাজারে পণ্য পাঠানোও তাদের জন্য কঠিন। ফেরি চালু হলে পাইকাররা এ অঞ্চলে আসবেন। এতে মৌসুমি পণ্যের ভালো দাম পাবেন কৃষকরা।
দ্যএডিটর৩৬৫/ জেডআই