দেড় বছর পর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রাণের স্পন্দন। শ্রেনীকক্ষে ফিরেছে শিক্ষার্থীরা। তবে,শিক্ষক ও সংশ্লিষ্টদের মাঝে উৎসবের আমেজ থাকলেও করোনা ভাইরাস পরিস্থিতিতে অভিভাবকদের কেউ কেউ রয়েছেন উৎকন্ঠায়।
করোনা ভাইরাসের সংক্রামণ বৃদ্ধি পাওয়ায় শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার কথা বিবেচনায় এনে দফায় দফায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়। গত বছরের ১৭ মার্চ থেকে প্রায় আঠারো মাস শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা হয়েছিল।
এদিকে, শিক্ষার্থীদের শ্রেনীকক্ষে আসা উপলক্ষে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো স্বাস্থ্যনিরাপত্তা ও পরিচ্ছন্নতার দিকে সর্বোচ্চ নজর দিয়েছে। দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রবেশদ্বার রঙিন বেলুন দিয়ে সজ্জিত করার পাশাপাশি সারিবদ্ধভাবে শিক্ষার্থীদের বরণ করতে শিক্ষক-কর্মচারীদের প্রস্তুতিও ছিল ব্যাপক। শিক্ষার্থীদের ভয়-ভীতি দূর করতে শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মাঝে দেখা যায় উৎসাহ । শিক্ষার্থীদের স্বাগত জানাতে তারা নির্দিষ্ট স্থানে অবস্থান নিয়েছেন । সারিবদ্ধভাবে শ্রেনীকক্ষে যাওয়ার অপেক্ষায় ছিল শিক্ষার্থীরাও । শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ অভিভাবক সকলের মুখেই ছিল মাস্ক। শিক্ষার্থীরা যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে প্রতিষ্ঠানে প্রবেশ করেছে। শ্রেনীকক্ষেও ছিল পারস্পরিক নিরাপদ দূরত্ব। প্রতি বেঞ্চে জেড পদ্ধতিতে একজন করে শিক্ষার্থীরা আসন গ্রহণ করেছে। অন্যদিকে,শিক্ষার্থীদের বেঞ্চ থেকে শিক্ষকের পাঠদানের স্থানও ছিল নিরাপদ দূরত্বে।
প্রাক-প্রাথমিকের শিক্ষার্থীরা স্বশরীরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে উপস্থিত হওয়ার ঘোষণা এখনো না আসলেও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার ঘোষণা আসতেই শিক্ষক-শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের মাঝে স্বস্তি ফিরে আসে। এদিকে শিক্ষার্থীরাও বিশেষ করে চলতি বছরের এসএসসি ও এইচএসসি সমমানের শিক্ষার্থীদের মাঝেও এসেছে স্বস্তির নি:শ্বাস।
এদিকে, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর(মাউশি) এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর (ডিপিই) থেকে যথাযথ স্বাস্থবিধি অনুসরণ করে পাঠদান কর্মসূচি কঠোরভাবে মনিটরিংসহ নানা সচেতনতামূলক নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। মাউশি গত বৃহষ্পতিবার নতুন এক নির্দেশনায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার পর স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়ে মানসম্মত কার্যপ্রণালি বিধি (এসওপি) নির্ধারণ করে দিয়েছে। নির্দেশনায় প্রতিষ্ঠান প্রধান, শিক্ষক-শিক্ষার্থী-অভিভাবক-পরিচালনা কমিটি এবং মাঠপ্রশাসন কর্মকর্তাদের জন্য ৬৩ টি নির্দেশনা দিয়েছে। এরমধ্যে অভিভাবকদের আটটি বিষয় অনুসরণ করতে বলা হয়েছে।
এর আগে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার ঘোষণায় প্রতিষ্ঠানের শ্রেনীকক্ষ সাফা-ছুতরা করাসহ মোট উনিশ দফা নির্দেশনা দিয়েছে মাউশি। করোনা ভাইরাস পরিস্থিতি বিবেচনায় জনস্বার্থ বিষয়ে চারটি প্রামাণ্য চিত্র প্রকাশ করেছে। এছাড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শ্রেনী কার্যক্রম চালু করার বিষয়ে প্রতিষ্ঠানের প্রধান,শিক্ষক মন্ডলী,শিক্ষার্থী,কর্মচারী,পরিচালনা পর্ষদ-অভিভাবকদের জন্য নির্দেশনামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করার বিষয়েও নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
গত ৫ সেপ্টেম্বর সচিবালয়ের মন্ত্রী পরিষদ সম্মেলন কক্ষে শিক্ষা মন্ত্রী ডা.দীপু মনির সভাপতিত্বে আয়োজিত এক বৈঠকে প্রাথমিক,মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।
চলতি বছরের এসএসসি ও এইচএসসি শিক্ষার্থী এবং ২০২২ সালের এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার্থীরা প্রতিদিন শ্রেনীকক্ষে আসবে।এছাড়া পঞ্চম শ্রেনীর শিক্ষার্থীরাও প্রতিদিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আসবে। অন্যদিকে, প্রথম থেকে চতুর্থ শ্রেনীর শিক্ষার্থীরা সপ্তাহে একদিন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আসতে হবে জানিয়েছেন তিনি ।
শিক্ষা মন্ত্রী বলেছেন,চলতি বছরের মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের সংক্ষিপ্ত সিলেবাস ইতোমধ্যেই প্রস্তুত হয়েছে। তারা প্রতিদিন ক্লাস করলে পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নেয়া হয়ে যাবে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা থাকলে জেএসসি,জেডিসি,পিইসি পরীক্ষাসহ বার্ষিক পরীক্ষাও সম্পন্ন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
নির্দেশনার ক্ষেত্রে তিনি জানান,শিক্ষার্থীদের সুরক্ষা ও স্বাস্থ্যের দিকে লক্ষ্য রাখতে শ্রেনীকক্ষে শিক্ষক এবং প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্টরা প্রতিদিন তাদের পর্যবেক্ষণ করবেন। এ জন্য একটি সার্ভিলেন্স টিম কাজ করবে। আগামী ৯ সেপ্টেম্বরের আগে তৃণমূল বা মাঠপর্যায়ের প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠদান শুরু করার আগে তা সম্পূর্ণ তৈরি আছে কি না তা মনিটরিং করা সম্পন্ন হবে।কোন প্রতিষ্ঠানে কোভিড-১৯ সংক্রামণের ঝুঁকি থাকলে স্থানীয় পর্যায়ে তার অবস্থান বিবেচনায় তা বন্ধ করার ঘোষণাও থাকবে বলে উল্লেখ করেন তিনি। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার শুরুতে কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি মনিটরিং করা হবে। আগত শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সামাজিক দূরত্ব মেনে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সারিবদ্ধভাবে প্রবেশ করার নির্দেশনা রয়েছে। কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আপাতত কোন অ্যাসেম্বলী হবে না। কিন্তু শিক্ষার্থীদের মানসিক ও শারীরিক সুস্থ্যতার কথা চিন্তা করে স্বাস্থ্যবিধি মেনে তাদের খেলাধূলা বা ফিজিক্যাল অ্যাকটিভিটিজ চলবে বলেও উল্লেখ করেনে তিনি।
প্রাথমিক পর্যায়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দৈনিক চার থেকে পাঁচঘন্টা ক্লাস নেয়া হবে। পর্যায়ক্রমে এর সময়সীমা বাড়তে পারে। এছাড়া প্রতিদিন প্রত্যেকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে চেকলিষ্ট পূরণ করে অনলাইনের মাধ্যমে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠাতে হবে বলে জানান শিক্ষামন্ত্রী।
দীর্ঘদিন পর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা ও শ্রেনীকক্ষে পাঠদানের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ফিরিয়ে আনতে শিক্ষক-কর্মকর্তা ও সংশ্লিষ্ট কর্মচারীদের সমন্বয়ে কমিটিগঠন ও সমন্বয় সভা করে শিক্ষার্থীদের জন্য নানা কার্যক্রম নিয়েছেন। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান ফটকে স্যানিটাইজেশন করা, থার্মোমিটারে সামাজিক দূরত্ব মেনে প্রতিষ্ঠানে ‘কিউ’ মেনে সারি বদ্ধ ভাবে প্রবেশ, মাস্ক পরিধান নিশ্চিকরণ,শরীরের তাপমাত্রা চেক করাসহ বিভিন্ন নির্দেশনার পাশাপাশি ‘জেড’ শেপে শ্রেনীকক্ষে আসন বিন্যাস উল্লেখযোগ্য। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষার্থীদের করোনাকালীন সময়ের জন্য দিনভিত্তিক শ্রেনীবিন্যাস করা হলেও থাকছে না চেনা রুটিন। প্রতিদিন দুটো ক্লাস শেষে একটি শরীরচর্চা ও বিনোদন ক্লাস নেয়ার কথা রয়েছে। পর্যায়ক্রমে শ্রেনীতে পাঠদানের সময়সীমা বাড়ানো হবে।বাসস
দিএডিটর৩৬৫/এমআরএম