মাসকাওয়াথ আহসান
সেন্টার ফর রুথলেস ইনটেলিজেন্স (ক্রাই) দপ্তরে আজ সীমাহীন উত্তেজনা। “মিশন কক-ট্রেডিং” নিয়ে ব্যস্ত সবাই। ক্রাই প্রধান বাড়াভাত ছাইষ্ণু (বাছা) বসে ঘন আলোচনা করছে ছোট চুল সুঠামদেহী আহসানের সঙ্গে।
আয়নাঘরে জাতীয়তাবাদের ডিম ফুটে যে মোরগের বাচ্চা বেরিয়েছে; তা বেশ বড় হয়েছে। তৃণমূল খেয়ে খেয়ে মোরগটা সংবাদ সম্মেলন করছে গণতন্ত্র নিয়ে।
ক্রাই-এর ক্যাশাবাবু বাঙ্গময় পেটওয়ালা একটা লালপাঞ্জাবী পরে বাছার অফিস কক্ষে ঢুকে খুক খুক করে কাশি দেয়। বাছা ধমক দেয়, সারাক্ষণ কাশেন কেন, একটু ফেনসিডিল খেয়ে নিতে পারেন না। তাহলেই তো কাশি চলে যায়।
–বাছা ভাই, ক্রাই সোলজারদের এবারের নূর হোসেন দিবস উপলক্ষে তার ছবি ও শ্লোগান পাঠিয়েছিলাম। “স্বৈরাচার নিপাত যাক, গণতন্ত্র মুক্তি পাক”। এ বছর নাকি ঐ ছবি ও শ্লোগান শেয়ার করতে লজ্জা লাগছে তাদের।
বাছা ধমক দিয়ে বলে, “লজ্জা ঘৃণা ভয়, সব করেছি জয়”, না হলে এ লাইনে টিকে থাকা যায় না। যান শেয়ার করতে বলুন। আমরা তৃণমূল খেয়ে মোটা তাজা হওয়া মোরগকে নিয়োগ করেছি, “নূর হোসেন দিবস” উপলক্ষে প্রেসক্লাবে সেমিনার করতে।
ক্রাই-এর সিনিয়র ফেলো আহসান তার ছোট চুল সুঠাম দেহী হুংকার দিয়ে বলে, একটা কাজও ম্যানেজ করতে পারেন না; আবার শুনলাম দামী ফ্ল্যাট কিনেছেন।
বাঙ্গময় পেটওয়ালা দ্রুত অফিস কক্ষ ত্যাগ করে।
বাছা তাড়া দিয়ে বলে, মি আহসান আপনি একটু “ভাতের হোটেল” ঘুরে আসুন। দেখুন কটা মোরগ জোগাড় হলো অংশগ্রহণমূলক গণতন্ত্রের জন্য।
ভাতের হোটেলে বসে ঝিমাচ্ছে কিছু অচেনা মোরগ। আহসান ভাতের হোটেলের মালিককে জিজ্ঞেস করে, কী ব্যাপার “মৌমাছি মৌমাছি কোথা যাও নাচি নাচি, দাঁড়াওনা একবার ভাই?”
ভাতের হোটের মালিক বলে, এখন না কবো কথা; আনিয়াছি তৃণলতা, খাওয়াবো এদেরকে তাই”।
–ভুলে যাবেন না, ৩০০ টি মোরগ প্রয়োজন, কিছু মুরগী হলেও ভালো। এমন প্রতিদ্বন্দ্বিতা তৈরি করতে হবে যেন বিদেশী হাঁসেরা বলে, ওরে বাবা, এ যে দেখছি অংশগ্রহণমূলকের বাপ।
–এসব কথা বলতে সোজা, কাজটা এতো সোজা না। এই যে মাথা ফাটিয়ে তারপর ব্যান্ডেজ বেঁধে আট পদের তরকারি দিয়ে ভাত খাওয়ালাম; তবু তো রাজি করাতে পারলাম না, এই তৃণমূল খাওয়া মোরগ জোটে যোগ দেওয়াতে।
–কিং মেকার হওয়া এতো সহজ না। সোজা আঙ্গুলে ঘি না উঠলে আঙ্গুল বাঁকা করুন। খুঁজে দেখুন দুর্বলতা, সম্পদের হিসাব নিন, দুর্বল জায়গা ছেলে-মেয়েকে খুঁজে দেখুন। দুর্বল জায়গায় ক্যাঁক করে ধরবেন, অমনি দেখবেন সুড় সুড় করে রাজি হয়ে যাবে।
হোটেলের মালিক গজ গজ করে বলে, আপনারা যারা অর্ডার দিয়েই খালাশ, তারা তো জানেন না; এইগুলি কত হার্ড নাট। এতোগুলো লোককে ছোট্ট একটা রুমে বসিয়ে রেখেছি; গাদাগাদি করে বসে আছে; তবু রাজি হবার লক্ষণ নাই।
আহসান, বিদ্রুপের সুরে বলে, আপনারা তো পড়াশুনা করেন না, খুঁজে দেখুন কম্বোডিয়া ও বেলারুশের কেসস্টাডি; পাকিস্তানের আয়নাঘরে কীভাবে হর্স ট্রেডিং হয়; কীভাবে এই মালিকের ঘোড়া অন্য মালিকের ঘোড়াশালে ঢুকিয়ে দেয়া হয়; এইসব খোঁজ কী রাখেন! খালি “কাঁচা”-দের বুদ্ধিতে কাজ করলে তো হবে না! ধর্মান্তরিত করতে ওস্তাদ লোকেরা কীভাবে লোকজনকে ধর্মান্তর করে; তা দেখে শিখে কাজ করুন।
হোটেলের মালিক বলে, হাতে সময় তো কম! লাভ জিহাদ করা কিংবা গোবর খাইয়ে বা দুধ দিয়ে গোসল করিয়ে লোকজনকে তৃণমূলের মোরগ বানানোর মতো যথেষ্ট সময় তো হাতে নাই।
রাগে গজ গজ করতে করতে আহসান বলে, সারাক্ষণ খালি নেগেটিভ কথা বলেন, দেন আপনার তৃণমূল খাওয়ানো মোরগগুলো দেন, হর্স ট্রেডিং তো ভাগ্যে নাই; কক ট্রেডিং করেই জীবনটা গেলো।
প্রেসক্লাবে জাতীয়তাবাদের তৃণমূল খাওয়া প্রধান ঝুঁটিওয়ালা মোরগটি বেশ ঠোঁটে লিপস্টিক দিয়ে ঝুঁটি নড়িয়ে বক্তৃতা করছে, আমাদের দলে ৩০০ টি মোরগ আছে; এরা শৃগালদের সঙ্গে দৌড় প্রতিযোগিতায় অংশ নেবে। মনে রাখবেন, নূর হোসেনের রক্ত বৃথা যেতে দেবো না। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেই ছাড়বো।
সহযোগী এক মোরগ পরামর্শ দেয়, এপাং ওপাং ঝপাং” ছড়াটা বলেন লিডার, আপনাকে বেশ আসল তৃণমূলের মতো মমতাময় লাগবে।
প্রধান মোরগ রেগে পায়ের স্যান্ডেল ছুঁড়ে মারলে; তা জানালা দিয়ে বাইরে চলে যায়। তখন একজোড়া নতুন স্যান্ডেল এনে তাকে দিতে হয়। প্রেসক্লাবের সংবাদ সম্মেলনে তিনবার লিপস্টিক দিয়ে আর চার জোড়া স্যান্ডেল বদলে বক্তৃতা শেষ করে সে কোন মতে।
বাছা একটু বাহাদুরী দেখাতে হাঁসকে ফোন করে, হ্যালো হাঁস, ৩০০ টি তৃণমূল খাওয়া মোরগ জোগাড় হয়েছে; এবার দেখবেন, হবে না মানে! সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলকের বাপ হবে।
হাঁস হেসে বলে, সেই পাকিস্তানের হর্স ট্রেডিংটা কপি পেস্ট করে অকুস্থলে এই যে কক ট্রেডিং-টা করছেন মশয়; ওখানকার রুটির হোটেল দেখবেন আবার আপনাদের ভাতের হোটেলের বিরুদ্ধে যেন কপিরাইট ভঙ্গের অভিযোগ না আনে!
ফোন রেখে ঝিম ধরে বসে থাকে বাছা। দুঃশ্চিন্তা হয়, তৃণলতা জোগাড়ের এই “মিশন কক-ট্রেডিং” টাও আবার ফ্লপ খেয়ে না যায়!
মাসকাওয়াথ আহসান, সম্পাদক, দ্য এডিটর থ্রি সিক্সটি ফাইভ, প্রধান সম্পাদক, ই-সাউথ এশিয়া।