মাসকাওয়াথ আহসান
উনি একদম কিছু মুখে তুলছেন না। খাবার এনে দিলেই অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে নিচ্ছেন। উনার এটেনডেন্ট সোনম সিং অগত্যা ফোন করে শংকর স্যারকে।
–স্যার গতকাল থেকে উনি কিছু খাচ্ছেন না। এভাবে চললে তো দুর্বল হয়ে পড়বেন। আর কিছুক্ষণ পর পর আফসোস লীগের লোকেরা ফোন করে কান্নাকাটি করছে। ফলে উনি আরো ভেঙ্গে পড়ছেন।
–কি বলে ওরা ফোন করে!
–ঐ তো দরবেশের মতো লোক দাড়ি কামিয়েও রক্ষা পায়নি, পলক কাঁদছে, আনিস হাসছে, দীপুমণি অশ্রুপাত করছে।
–সবই তো নেগেটিভ খবর; পজিটিভ কিছু নেই?
–বিপ্লবী ছাত্ররা কি কি ভুল করছে তার ফিরিস্তি আছে।
–ভুলের ফিরিস্তিগুলো ময়ূখকে ফরোয়ার্ড করো। ও টিভি শোতে বসে ছিদ্রান্বেষণ করুক। দেখি আমি বীণা ম্যাডামকে অনুরোধ করি। একটা ভিজিট দিতে পারেন কিনা!
–স্যার শাশী থারুর ফোন করেছিলেন, উনি কঠিন কঠিন ইংরেজিতে বললেন, যতদিন খুশি থাকুন এখানে।
–শাশী তো নটি বয়। সে চায় উনি এখানে থাকুক; আর লিবেরেলরা আমাদের গুষ্টি উদ্ধার করুক। এখন ফোন রাখছি।
সানগ্লাস পরে কঙ্গণা রাণাউত এসে উপস্থিত হয়। সঙ্গে করে দোসা নিয়ে এসেছে। উনি খুশি হন কঙ্গণাকে দেখে; স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে বলেন, কই সেলফি তুলবে না কঙ্গণা আমার সঙ্গে। কঙ্গণা ছবি তুলে তারপর উনার মাথায় একটু জয়দেবের পতঞ্জলি ভেষজ তেল বসিয়ে দেয়। উনি ঘুমিয়ে পড়েন।
একটু পরে বীণা ম্যাডাম এসে খ্যাশখেশে গলায় চেঁচিয়ে ওঠেন, কোথায় আমাদের হার এক্সেলেন্সি! কাঁচা ঘুম ভেঙ্গে ধড়ফড়িয়ে ওঠেন উনি। বীণা ম্যাডাম নিজেই তার ফ্লাস্ক থেকে স্যুপ ঢেলে উনাকে পরিবেশন করেন।
–এই সোনম একটু ময়ুখের শো ইউটিউব থেকে স্ক্রিনে চলিয়ে দাও দেখি।
উনি বলেন, থাক থাক; ওকে দেখলেই মনে হয় রাঁচি থেকে পালিয়ে এসে অর্ণব গোস্বামীর স্টুডিওতে ঢুকে পড়েছে। সে ড ইউনুসকে ডাক্তার বাবু বলছে! রাঁচিতে ডাক্তারদের সঙ্গে কথা বলে বলে ও এখন সবাইকে ডাক্তারবাবু ডাকছে। এই সোনম তুমি একটু বাইরে যাবে!
সোনম বাইরে গেলে উনি বলেন, আমার এই মেয়েটাকে সন্দেহ হয়; সে জামাত শিবির নাতো। আজ এক হিজাবওয়ালী তার সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলো।
বীণা সিক্রি হেসে বলেন, ও আসলে খ্রিস্টিয়ান মেয়ে; ওর বোন চার্চের নান, সে বোধ হয় দেখা করতে এসেছিলো। আমরা ব্যাকগ্রাউন্ড চেক করে নিয়েছি ইওর এক্সেলেন্সি।
উনি আবার বলেন, গেটের কাছে এক ইউনিফর্ম পরা লোককে দেখে আমার তাকে বিএনপির ইশরাক বলে সন্দেহ হয়েছে। বিএনপি-জামায়াত কি আমাকে এতোটুকু শান্তিতে থাকতে দেবে না!
–ও তো বলবিন্দর সিং। শিখ ছেলে তাই বোধ হয় দাড়ি রেখেছে। দাড়ি তো আমাদের জয় শংকরেরও আছে; তার মানে তো সে জাকির নায়েকের শিষ্য নয়।
বীণা সিক্রি ডাক্তারকে ফোন করেন। ছয় ফুট লম্বা ডাক্তার পাশের ঘর থেকে এলে উনি আই এস আই, আই এস আই বলে চেঁচিয়ে ওঠেন।
বীণা উনার হাত ধরে বলেন, ও আপনার বাঙালি ছেলে অরিন্দম দাশগুপ্ত। ওর ঠাকুরদা পূর্ববঙ্গ থেকে এসে ভুপালে সেটল করেছিলো।
ডাক্তার বুঝতে পারে উনার প্যারানয়ার মাত্রা অনেক বেড়ে গেছে। প্রেশার মেপে বলেন, আপনি একটু খেয়ে নিন এক্সেলেন্সি।
উনি অনীহা দেখান। অভিমানের সুরে বলেন, মোদিজীকে এতো দিয়েছি; কিন্তু উনি আমার জন্য কিছুই করলেন না!
বীণা বলেন, ফরেন পলিসিতে কিছুটা ফর্মাল তো হতেই হয়। তাছাড়া নোবেল লরিয়েট ইউনুস তো ইনক্লুসিভ মানুষ। উনি কত সুন্দর করে বলেছেন, আপনি নিজেকে হিন্দু কিংবা মুসলমান ভাববেন কেন; আপনি বাংলাদেশের নাগরিক। নাগরিক অধিকার প্রতিষ্ঠিত হলেই; আপনারা সবাই ভালো থাকবেন।
–থাক থাক; ইউনুসকে আমার চেনা আছে; পদ্মা সেতুর বিশ্বব্যাংক লোন বন্ধ করেছে।
হঠাত উনার মনে হয় সামনে ফারজানা রুপা ও প্রভাস আমিন বসে আছে। উনি ইউনুসকে নিয়ে উনার ডিকশনারি অফ স্ল্যাংস উন্মুক্ত করতে শুরু করেন।
ডাক্তার উনাকে একটা ইনজেকশন দেয়। সোনাম একটা আইস ব্যাগ এনে মাথার ওপর ধরে।
বীণা ম্যাডাম একটু খিঁচুড়ি আর পোস্ত করে এনেছেন। সেটা সামনে এগিয়ে দিলে উনি না না করেন। বীণা ম্যাডাম সোনমকে বলেন, বেটি বংলাদেশের পূর্বাঞ্চলে বন্যার খবর কোন চ্যানেলে দেখাচ্ছে; একটু সার্চ করে দেখাবে কি!
জীবন মানেই জি-বাংলা চ্যানেলে চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে বলছে, বানের জলে ডুবেছে বাংলাদেশ, কাতর স্বরে বলছে ওরা, বাঁচাও বাঁচাও।
উনি কিছুক্ষণ দেখে তারপর পোস্ত দিয়ে খিঁচুড়ি খেতে শুরু করেন। মনটা এখন একটু ভালো। সোনমকে বলেন, তোমাকে আমি কুমড়োর বেগুনি আর কাঁঠালের বার্গারের রেসিপি দেবো। কী পারবে না তৈরি করতে!
মাসকাওয়াথ আহসান, সম্পাদক, দ্য এডিটর থ্রি সিক্সটি ফাইভ, প্রধান সম্পাদক, ই-সাউথ এশিয়া।