মাসকাওয়াথ আহসানঃ
মিশন ডগ ডে’র জন্য ব্রিফ করা হচ্ছিলো ন্যান্সি ও টমকে। হঠাতই ন্যান্সি ঘুমিয়ে পড়ে। ডাক্তার পরীক্ষা করে জানায় ন্যান্সি সন্তানসম্ভবা। কম্পাউন্ডার ফোন করে খবরটা জানায় রাঁচি বাংলায়। অমনি ঘেউ ঘেউ ব্রেকিং নিউজ এসে যায়, স্পাই ন্যান্সি সন্তান সম্ভবা। কে এই সন্তানের বাবা। ন্যান্সি টমকে ফিসফিস করে বলে, আমরা প্রফেশনাল এথিকস ভেঙ্গেছি। দুজনেরই চাকরি যেতে পারে। তুমি একদম টু শব্দ করবে না। আমি দোষটা সীমান্তের ওপারের কোন ডার্টি হ্যারির ওপর চাপিয়ে দেবো।
অপারেশন প্রধান ডেকে পাঠায় ন্যান্সি ও টমকে, পাইপ মুখে নিয়ে যিপ্পো জ্বালানোর সময় মাথাটা কাত করে বলে, তোমাদের দুজনকেই অপারেশন ডগ ডে’তে পাঠানোর কথা ছিলো। কিন্তু ন্যান্সি এ অবস্থায় ফিল্ডে গিয়ে রিস্ক নেবার অবস্থায় নেই। তাই টম তোমাকে একাই যেতে হবে। আমাদের লোকাল ডগেরা সাহায্য করবে তোমাকে। আর ন্যান্সি থাকবে মাস্টার কন্ট্রোল রুমে।
আলুর ট্রাকে করে টম পৌঁছে যায় কারওয়ান বাজারে। সেখানে লুসি তিনবার ঘেউ ঘেউ করে কুঁই কুঁই করে পা দিয়ে কান চুলকাতে থাকলে টম বুঝে ফেলে, ওদের ডগ এটা।
লুসি ব্রিফ করে, রাইটার্স বিল্ডিং-এ কি একটা রিফর্ম নিয়ে সারাদিন ঘেউ ঘেউ শব্দ শোনা গেছে। ক্লান্ত হয়ে সবাই এতোক্ষণে ঘুমাতে চলে যাবার কথা। আমাদের বন্ধু ক্যানি অপেক্ষা করবে। সেই পথ দেখিয়ে নিয়ে যাবে তোমাকে। লুসি গুগল ম্যাপে তবু লোকেশান পিন সেন্ড করে টমির কাছে।
ন্যান্সির সঙ্গেও কানেক্টেড রয়েছে টম। রাইটার্স বিল্ডিং-এর ভি আই পি গেটে পৌঁছে দেখে ক্যানি কান ঝাপটা দিয়ে সিগনাল দিচ্ছে প্রাচীরের ওপর বসে। টম একটু পেছন দিকে গিয়ে প্রেসক্লাবের লনে দৌড়ে ঝাঁপ দিয়ে উঠে যায় প্রাচীরে। ক্যানি তখন তাকে নিয়ে টার্গেটের দিকে এগোতে থাকে।
লুসি মনে করিয়ে দেয়, বিল্ডিং-এর দুই দিকে আগুন দিতে হবে; দূর থেকে তা দুটো চোখের মতো দেখাতে হবে। আমরা আসলে একটা সিগনেচার রাখবো, বার্তা দেবো, তোমরা সরে গিয়ে আমাদের বি টিমকে বসতে দাও। বি টিম হবার জন্য সিভি জমা দিয়ে বসে আছে অনেক কর্মচারী। আর বুড়ি কর্মচারীকে ফেরত চেওনা। এইখানেই তার বৃহত স্বর্গ হতে দাও।
ক্যানি এরিমাঝে ক্যান ক্যান শুরু করেছে, জানো টম এরা কি সব রিফর্ম করে বুবুর কুকুরগুলোকে বাদ দিয়ে দিতে চেষ্টা করেছে। ক্যানি হেসে বলে, কজনকে বাদ দেবে বলো, পনেরো বছর ইউনিয়ন পরিষদের কুকুর সার্টিফিকেট দিয়ে নিশ্চিত করেছে, এই কুকুর আমাদের। তখন চাকরি হয়েছে। স্তরে স্তরে সাজানো আছে আমাদের কুকুর। ক’টাকে বাদ দেবে। আমাদের স্বার্থ হেফাজতের কুকুরও রয়ে যাবে অন্য বেশে।
টম জিজ্ঞেস করে, তাহলে আর আমি এতোদূর থেকে এলাম কেন!
তুমি কিছু নথিদাহ করে যাও, যাতে যে কুকুরগুলো গ্রেফতার হয়েছে, তাদের দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির কোন প্রমাণ না থাকে।
–তোমরা নাকি ডিজিটাল হয়েছিলে; তাহলে এতো নথি কেন!
–ডিজিটাল করার টেকাটুকা দিয়ে নধর কুকুরগুলো বিলাতে সেকেন্ড হোম কিনেছে। আর গ্যাটিস দেয়া কুকুর দিয়ে কি টেকনিক্যাল কাজ হয়। রাজপথে ঘেউ ঘেউ করে কোন কুকুর তা দেখে চাকরি দিলে যা হয় আর কি!
–তুমি কি রাজপথে ঘেউ ঘেউ করোনি।
–নাহ আমি কালচারাল কুকুর। আমার কাজ ছিলো তোমাদের ন্যারেটিভগুলো কবিতার ছন্দে ছন্দে বলা।
টম একটা জায়গায় আগুন দেয় সাফল্যের সঙ্গে। কিন্তু আরেক জায়গায় আগুন দিতে দিতে নথিভান্ডারের ভেতরে ঢুকে পড়ায়; আর বের হবার পথ খুঁজে পায়না। ন্যান্সি ওপার থেকে বলে, হারি আপ। এনাদার টোয়েন্টি সেকেন্ডস।
টম ন্যান্সিকে উত্তর দেয়, আমি মায়ের পেটে থাকতে কি করে অগ্নিগোলকে ঢোকা যায় সেই গল্প শুনেছিলাম। কিন্তু গল্পটা অসম্পূর্ণ রয়ে যাওয়ায়; জানিনা কি করে অগ্নি গোলক ধাঁধা থেকে বের হতে হয় ন্যান্সি।
ন্যান্সি কেঁদে ফেলে, তুমি জোর করে আমায় নিয়ে গেলে না কেন টম! আমিও এই নথিদাহ’তে সহমরণে যেতে পারতাম।
টমকে বের না হতে দেখে ক্যানি পালিয়ে যায়। লুসি রাইটার্স বিল্ডিং-এর দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে। সে খবর পাঠায়, হ্যালো আলফা, মিশন একোমপ্লিশড; টম ডাউন; ওভার।
ফেসবুকে আগুনের খবরটা ছড়িয়ে পড়লে সবার মনে প্রশ্ন জাগে, ঠাকুর ঘরে কে রে!
আগুনের খবরে আনন্দে খলবল করতে করতে রাস্তার এতিম কুকুরেরা উত্তর দেয়, আমরা কলা খাইনি।
(কাল্পনিক গল্প। বাস্তবের সঙ্গে কোন মিল কাকতালীয়)
মাসকাওয়াথ আহসান, সম্পাদক, দ্য এডিটর থ্রি সিক্সটি ফাইভ, প্রধান সম্পাদক, ই-সাউথ এশিয়া।