বহুকাল পর গুরুতুল্য বড়ভাই মাসকাওয়াথ আহসান স্বরুপে ফিরলেন ছাপ তিলকে এই ধ্রুপদী নভেলা ত্রয়ের মাধ্যমে। একজন সার্থক লেখক লাখো ফ্যানবেইজের চাইতে একটা আলোকিত কাল্ট তৈরী করেন যারা ওনার ভাবাদর্শ দ্বারা অনুপ্রাণিত হয় এবং সমাজ পরিবর্তনে ব্রতী হয়। আমার প্রজন্মের জন্ম ও বেড়ে ওঠা সামরিক শাসনামলে এবং নব্বুইয়ের আন্দোলনের সময় আমি স্কুল পড়ুয়া ছিলাম খুব সম্ভবত সপ্তম শ্রেনীতে। কাজেই সে সময় রাজনীতি অতোটা বুঝিনি আর বুঝতে পারিনি আমাদের সমাজিক অবকাঠামো।
নব্বই আন্দোলন পরবর্তী সমাজ ভাঙ্গতে থাকে। কারণ বংশপরম্পরায় শিক্ষিত আলোকিত মধ্যবিত্ত সম্প্রদায় নব্য লুটেরা ধনিক শ্রেনীর মুখোমুখি হতে থাকে এবং পরিবর্তিত সমাজের সাথে নিজেদের খাপ খাওয়াতে আলোকিত মধ্যবিত্ত সম্প্রদায় অস্তিত্বের সংকটে পড়ে । ঠিক সেই সময় মাসকাওয়াথ আহসান ভাই হাতে কলম তুলে নেন আর ভোরের কাগজে লিখতে শুরু করেন ওনার “বিষণ্ণতার শহর” নামক ধ্রুপদী কলাম যে লেখা পড়ে আমাদের প্রজন্মের অনেক তরুণ তরুণীর অন্তর্চক্ষু খুলে যায়। আমরা বুঝতে পারি বাংলাদেশে কথিত এলিট বলে কিছুই নেই আদতে কারণ এদেশে কোন প্রিন্সলি স্টেইট ছিলোনা কোচবিহার অথবা হায়দ্রাবাদের মতো কস্মিনকালেও। কিছু ধনতান্ত্রিক কৃষিজীবী মানুষ লেঠেল বাহিনীর মাধ্যমে মুঘল আমলে প্রচুর জমিজমা চর দখল করে ক্ষমতাসীনদের তোষণ করে চৌধুরী, তালুকদার,মৌলভী…..ইত্যাদি জাতে ওঠার উপাধি পায় এবং ব্রিটিশ আমলে এরাই ব্রিটিশদের তোষণ করে খান বাহাদুর আর রায়বাহাদুর উপাধি পায়। অথচ এসব জোতদারদের নামগুলো দেখলেই তাদের মানসিক দৈন্য বোঝা যায় যেমন মনু মিয়া, কালু মিয়া, সোনা মিয়া, ধনু মিয়া ইত্যাদি সব নাম তাদের রাজপ্রাসাদ সদৃশ্য বাড়ীর সামনে সিংহতোরণে খোদাইকৃত থাকে; সেখানে বৃটিশদের মনোরঞ্জনের জন্য কোঠাবাড়িও থাকতো ।
মাসকাওয়াথ আহসান ভাই তার সাহিত্যচর্চায় তথাকথিত এসব কথিত এলিট এবং লুটেরাদের আক্রমণ করে গিয়েছেন এবং যাচ্ছেন বলাবাহুল্য এই নভেলা ত্রয়ে সেটা কিঞ্চিৎ প্রতিফলিত হয়। যদিও এই ধ্রুপদী নভেলা ত্রয়ে মাসকাওয়াথ ভাই আমির খসরু, মীর্জা গালিব এবং মাওলানা রুমির সুফি দর্শনের কথা বলেছেন ওনার নিজের ভাষায় কিন্তু সেখানেও উনি তথাকথিত ব্রিটিশদের তোষণকারী এলিটদের ছাড় দেননি! কখনো তাদের পাবেন বইটিতে ইতিহাসান , কুলুদাদা অথবা অতিরঞ্জিত জাতীয়তাবাদী হিসেবে যারা রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের লাশে জুতা নিক্ষেপ করে জাতীয় বীর খেতাব পায় বিদেশে পলিটিক্যাল এসাইলাম পায়! আমি মনে করি একজন ঊণমানুষ হিসেবে এই ধ্রুপদী বইটি বিগত শেখ হাসিনার দুঃশাসনের একটি এন্টিথিসিস। মাসকাওয়াথ ভাইয়ের সাহিত্য রিলিজিয়াসলি পড়লে আপনার সাথে যেকোন একটি ব্যাপার ঘটতে পারে হয় আপনি একজন ধ্রুপদী সাহিত্যিক হয়ে উঠবেন নতুবা আমার মতো অপাংক্তেয় সমাজচ্যুত এনার্কিস্ট হবেন।
মাসকাওয়াথ ভাই কে সাধুবাদ জানাই এই অসাধারণ নভেলা ত্রয়ের জন্য বিস্তারিত লিখলাম না নভেলা ত্রয়ের বিষয়বস্তু নিয়ে এতে বইবিমুখ তরুণ প্রজন্ম বইটি পড়ার উৎসাহ পাবেন না আর। আমার খালু প্রয়াত ডঃ আনিসুজ্জামান চাচা মাসকাওয়াথ ভাইকে আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের সমতুল্য সাহিত্যিক মনে করতেন এবং আক্ষেপ করে বলতেন “মাসকাওয়াথ চটজলদি উপন্যাস শেষ করে ফেলে! ” আশা করি মাসকাওয়াথ ভাই এবার চব্বিশের গণঅভ্যুত্থান নিয়ে একটা মহাকাব্যিক ধ্রুপদী উপন্যাস লিখবেন; কারণ পাঠকদের নিরাশ করতে নেই এতে স্রষ্টার অভিশাপে লেখকদের রাইটার্স ব্লক হয়!