কোভিড-১৯ মহামারিতে বাংলাদেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় ৪ কোটিরও বেশি শিক্ষার্থী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জাতিসংঘ শিশু তহবিলের (ইউনিসেফ) একটি প্রতিবেদনে বলা হয়। বিশেষ করে প্রাক-প্রাথমিক থেকে উচ্চশিক্ষা পর্যন্ত চার কোটিরও বেশি শিক্ষার্থী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানিয়েছে ইউনিসেফ।
দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো ২০২০ সালের ১৭ মার্চ থেকে বন্ধ আছে, যা করোনার কারণে স্কুল বন্ধের ক্ষেত্রে বিশ্বের দ্বিতীয় দীর্ঘতম। ইউনিসেফ বলছে, মহামারির পুরো সময়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার ফলে প্রাক-প্রাথমিক থেকে উচ্চতর শিক্ষার স্তর পর্যন্ত চার কোটিরও বেশি শিক্ষার্থী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের গ্রীষ্মকালীন ছুটি শেষ হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে জাতিসংঘ শিশু তহবিল ইউনিসেফ প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে গতকাল মঙ্গলবার (২৪ আগস্ট) এ তথ্য জানানো হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, যত বেশি সময় ধরে শিশুরা স্কুলের বাইরে থাকবে, সহিংসতা, শিশুশ্রম ও বাল্য বিয়ের ঝুঁকির সম্মুখীন হওয়ায় ততই তাদের স্কুলে ফিরে আসার সম্ভাবনা কমে যাবে। ২০২০ সালে বিশ্বব্যাপী স্কুলগুলো গড়ে ৭৯ শিক্ষা দিবস পুরোপুরি বন্ধ ছিল। তবে, মহামারি শুরুর পর ১৬ কোটি ৮০ লাখ শিক্ষার্থীর জন্য স্কুলগুলো প্রায় পুরো বছর বন্ধ ছিল। এখনও অনেক শিশুর ক্ষেত্রে দ্বিতীয় বছরের জন্য শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হতে।
বাংলাদেশে নিযুক্ত ইউনিসেফের প্রতিনিধি টোমো হোযুমি বলেন, ‘স্কুল এবং সশরীরে উপস্থিত হয়ে শিক্ষা গ্রহণ কার্যক্রম বন্ধ থাকা শিশুদের কেবল পড়াশোনার ক্ষেত্রে নয়, একইসঙ্গে তাদের স্বাস্থ্য, সুরক্ষা ও মনস্তাত্ত্বিক সুস্থতার ওপর গুরুতর প্রভাব ফেলে। এক্ষেত্রে প্রান্তিক শিশুরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, বর্তমানে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, নিরাপদে স্কুল পুনরায় খুলে দেওয়া এবং সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্তদের পড়াশোনার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে বিনিয়োগ করতে অগ্রাধিকার সৃষ্টি করা। কেননা আজকের এই গৃহিতব্য সিদ্ধান্তই শিশুদের পুরো জীবনকে প্রভাবিত করবে।’
ইউনিসেফের প্রকাশিত নতুন বিশ্লেষণে বলা হয়, প্রায় ১৪ কোটি শিশুর ক্ষেত্রে স্কুলের প্রথম দিন করোনার কারণে বিলম্বিত হচ্ছে। এই শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রায় ৮০ লাখ এমন স্থানে বসবাস করে, যেখানে মহামারির পুরো সময় স্কুল বন্ধ রাখা হয়েছে। এ কারণে সশরীর শিক্ষা গ্রহণের প্রথম দিনটির জন্য তারা এক বছরের বেশি সময় ধরে অপেক্ষা করছে। এ অপেক্ষা বেড়েই চলেছে। এর মধ্যে বাংলাদেশের প্রায় ৪০ লাখ শিক্ষার্থীও রয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, স্কুল বন্ধ থাকার কারণে অনেক শিশুর, বিশেষ করে বিকাশের গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়ে থাকা ছোট শিক্ষার্থীদের, শেখার ক্ষতি, মানসিক চাপ, টিকা না পাওয়া এবং ঝরে পড়ার উচ্চ ঝুঁকি, শিশুশ্রম ও শিশুবিয়ের মতো পরিণাম ভোগ করতে হবে।
দ্যএডিটর৩৬৫/ জেডআই