ভারী বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় মৌসুমের শেষ দিকে এসে দেশে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। দেশের বিভিন্ন জেলার মধ্যে ছয়টি জেলার নিম্নাঞ্চল পানির নিচে বিরাজ করছে এবং ক্রমাগত পানি বাড়ার ফলে অনেক এলাকা ক্রমশ তলিয়ে যাচ্ছে।
বিভিন্ন জেলার প্রতিনিধির তথ্য বলছে, ছয় জেলার নিম্নাঞ্চল এখন পানির নিচে। এর মধ্যে ফরিদপুর, কুড়িগ্রাম, পাবনা, কুষ্টিয়া, মানিকগঞ্জ ও রাজবাড়ী জেলার নিম্নাঞ্চলে বসবাস করা লক্ষাধিক পরিবারের মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
এছাড়াও নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। একইসাথে বন্যায় ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বসতবাড়ি তলিয়ে যাওয়ায় অনেকেই উঁচু রাস্তা এবং স্কুলে আশ্রয় নিয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে, গতকাল চারটি নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আরো প্রায় পাঁচটি নদীর পানি বিপৎসীমার কাছাকাছি। যে কোনো সময় বিপৎসীমা অতিক্রম করবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আরিফুজ্জামান ভূঁইয়া জানিয়েছেন, সুরমা-কুশিয়ারা ব্যতীত দেশের প্রধান নদনদীর পানির উচ্চতা বাড়ছে।
দেশের বন্যা পরিস্থিতির সর্বাধিক অবনতির পর্যায়ে আছে ফরিদপুর জেলা। এ জেলায় পদ্মা নদীর পানি বেড়ে চারটি উপজেলার শতাধিক গ্রামের বহু পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। রাস্তা তলিয়ে যাওয়ায় ফরিদপুরের সঙ্গে বিভিন্ন ইউনিয়নের যোগাযোগও বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। সর্বশেষ তথ্যমোতাবেক পদ্মার পানি রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে বিপৎসীমার ৪২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে আর গড়াই নদীর পানি ফরিদপুরের কামারখালীতে প্রবাহিত হচ্ছিল বিপৎসীমার ২০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে।
ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক অতুল সরকার জানিয়েছেন, উপজেলা চেয়ারম্যান ও ইউপি চেয়ারম্যানদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। পানিবন্দি এলাকাগুলোতে সচেতনতায় মাইকিং করা হচ্ছে। তাদের শুকনো খাবার ও আশ্রয়ের জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে।
এদিকে কুষ্টিয়ায় পদ্মা ও তার প্রধান শাখা গড়াই নদীতে পানি বাড়ছে। এতে জেলার বন্যা ও ভাঙন পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। দৌলতপুর উপজেলার পদ্মা-তীরবর্তী চরাঞ্চলের দুই ইউনিয়নের ৩৭টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। সেখানকার অন্তত ৫০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। শিশু, বৃদ্ধ মানুষ ও গবাদিপশু নিয়ে চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছে তারা। কুষ্টিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যমতে, কুষ্টিয়ায় গত ২৪ ঘণ্টায় পদ্মায় পানি বেড়েছে দশমিক ৩ মিটার।
সিরাজগঞ্জে গত ২৪ ঘণ্টায় যমুনা নদীর পানি ১৮ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে গতকাল শনিবার সকালে সিরাজগঞ্জ শহর রক্ষা বাধ পয়েন্টে বিপৎসীমার ১৮ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। জেলার নদী তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল ও চরাঞ্চল ইতিমধ্যেই বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে। বিস্তীর্ণ এলাকার ফসলি জমি তলিয়ে গেছে।
ঈশ্বরদীতে পদ্মা নদীতে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার মাত্র ৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। পদ্মার পানি এখন বিপৎসীমা ছুঁইছুঁই। পানি বাড়ায় পদ্মার চরে জেগে ওঠা সাঁড়া ইউনিয়নের সাহেবনগর ও মোল্লার চরের বসতি সরিয়ে ফেলা হয়েছে। স্রোতের তীব্রতায় চরের অধিকাংশ ফসলি জমি ডুবে গেছে।
গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে তিস্তার ভাঙনে শতাধিক পরিবারের বসতভিটা নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙনের হুমকিতে পড়েছে পাঁচ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, দুইটি কমিউনিটি ক্লিনিক, বাঁধের রাস্তাসহ সাতটি গ্রামের কয়েক শ একর আবাদি জমি। উপজেলার দলদলিয়া ইউনিয়নে অর্জুন ও থেতরাই ইউনিয়নের গোড়াই পিয়ার, হোকডাঙ্গা ও দালালপাড়া গ্রামের ৫০০ পরিবার বসতবাড়ি হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েছে। ইতিমধ্যে নদীতে বিলীন হয়েছে গোড়াই পিয়ার, হোকডাঙ্গা, হিন্দুপাড়া ও দালালপাড়া গ্রামের অধিকাংশ আবাদি জমি, গাছপালা, সড়ক কালভার্ট।
প্রবল বর্ষণ ও ঢলে নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় রংপুরের গঙ্গাচড়ায় পানিবন্দি হয়ে পড়েছে প্রায় ৫ হাজার পরিবারের মানুষ। সেই সঙ্গে ব্যাপক ভাঙন দেখা দিয়েছে। ১৫ পরিবার বাড়িঘর ভেঙে অন্যত্র নিয়ে গেছে।
দ্যএডিটর৩৬৫/জেডআই