মুনির রানাঃ গান-বাজনা কি হারাম?এককথায় এর জবাব – না।তবুও অনেক ধর্মভীরু মুসলিম মনে করেন গান বাজনা হারাম। ধারণার ভিত্তি হুজুরদের অনির্ভরযোগ্য বয়ান, কোরআনের অপব্যাখ্যা ও বিভ্রান্তিকর হাদিস।এক.যারা গান-বাজনা নিষেধের কথা বলেন তারা কোরআনের কিছু আয়াতের মনগড়া ব্যাখ্যা দিয়ে থাকেন।প্রথম আয়াত৩১:৬ মানুষের মধ্যে কেহ কেহ অজ্ঞতাবশত আল্লাহর পথ হইতে বিচ্যুত করিবার জন্য অসার বাক্য (লাহওয়াল হাদিস) ক্রয় করিয়া নেয় এবং আল্লাহ-প্রদর্শিত পথ লইয়া ঠাট্টা-বিদ্রুপ করে। উহাদের জন্য রহিয়াছে অবমাননাকর শাস্তি।লাহওয়াল হাদিস বলতে এখানে সঙ্গীতের কথা বলা হয়েছে বলে মনে করেন অনেকে। এটি তারা ধারণা করেন কিছু হাদিসের বর্ণনাকে মাথায় রেখে। লাহওয়া শব্দের মূল হলো লাম হা ওয়াও। এর অর্থ তুচ্ছ, অসার, বাজে, অর্থহীন কথা (হাদিস) যা গুরুত্বপূর্ণ কাজের কথা ভুলিয়ে দেয়, মানুষকে বিপথে নিয়ে যায় ইত্যাদি।
Arabic-English Dictionary of Quranic Usage শব্দটির অর্থ লিখেছে amusement, distraction, divertion, pastime, time-wasting ইত্যাদি (পৃষ্ঠা৮৫৩)। লিসান আল আরব (১৫/২৫৮), মুফরাদাত আল কোরআনে (পৃ ৪৫৫) এভাবেই অর্থ করা হয়েছে শব্দটির। এডওয়ার্ড লেনের লেক্সিকনেও এর ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে- He became diverted from it, so as to forget it. (ভলিউম ৪ পৃষ্ঠা ১২৮৯)। হাদিস শব্দটির ব্যবহার দিয়েও ইঙ্গিতটি পরিস্কার করা হয়েছে। বলা হয়েছে এসব অর্থহীন কথা দিয়ে যারা আল্লাহর বিরুদ্ধে মিথ্যা উদ্ভাবন করে, মানুষকে বিপথগামী করে, তাদের জন্য আছে কঠোর শাস্তি। শব্দটিকে কোন কোন তফসিরকার গান (আবদুল্লাহ বিন মাসুদ, আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস), কেউ কেউ কেবল বাজনা (হাসান বসরী), আবার কেউ কেউ শিরেকি কার্যকলাপ (জাহাক) আবার বাজে কথা (কাতাদা) হিসেবে ব্যাখ্যা করেছেন। এদের সবার মত পর্যালোচনা করে ইবনে জরির তাবারি বলেছেন, And the correct view in this regard is that these words imply every such activity that can hinder you from the way of God and listening to that which has been prohibited by God and His Messenger. This I say because God has not mentioned any specific things rather He used a comprehensive expression “lahw al Hadith.” Therefore this is a general directive unless and until some other evidence proves specification. Singing and polytheism are also one of the implied meanings. (Jaamiul Bayaanan Taweeli Aayil Quraan, vol 21 page 63)
ইমাম রাজীসহ অনেক ইমাম একই মত পোষণ করেন। কোরআনের একাধিক আয়াতেও শব্দটির ব্যবহার দেখলে অর্থ পরিস্কার হয়। (২৯:৬৪, ৬:৩২, ৬:৭০, ৭:৫০-৫১)ঠান্ডা মাথায় ভাবলে আরো দুটি কারণে এ আয়াতে সঙ্গীতের প্রসঙ্গটি আপনাতেই খারিজ হয়ে যায়। ১. সঙ্গীত বাজনা নির্ভর। ক্ষেত্রবিশেষে এটি কেবল বাজনাই। যেমন সরোদ, সন্তুর, বাঁশি ইত্যাদি। এখানে বাণীর প্রয়োজন হয় না। সুতরাং এখানে লাহওয়াল হাদিসের যুক্তিটি ধোপে টেকে না। কারণ এখানে কথার কোন ব্যাপার নাও থাকতে পারে।২. মনোযোগ দিয়ে পড়লে দেখা যাবে, এখানে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে শুধু তাদের যারা লাহওয়াল হাদিসকে কাজে লাগাবে মানুষকে বিপথগামী করার জন্য। অর্থাত্ লাহওয়াল হাদিসকে এমনকি গান বাজনা ধরে নিলেও এটি নিষিদ্ধ হওয়া বুঝায় না, অন্তত এই আয়াতে। বরং এর অপব্যবহারকে নিরুত্সাহিত করা হয়। বলা বাহুল্য শব্দ ব্যবহার করে আমরা সুন্দর কথা বলতে পারি, খারাপ কথাও বলতে পারি। শব্দ/কথা মাধ্যম মাত্র। সঙ্গীতও মাধ্যম যাকে আপনি ভালো কাজেও লাগাতে পারেন, খারাপ কাজেও। ভাল বা খারাপের মাত্রাটা নির্ধারন করে বিদ্যমান সমাজ/গোত্র/গোষ্ঠী। বিবেকবুদ্ধিই এখানে প্রধান নিয়ামক।
ইমাম গাযযালী এ প্রসঙ্গে একটি সুন্দর উদাহরণ পেশ করেছেন। একজন কপট ইমাম কুরআনের সুরা আবাসার প্রথম থেকে কয়েকটি আয়াত প্রায়ই সব নামাযে তিলাওয়াত করতেন। সুরা আবাসার এই অংশে আল্লাহ তাঁর প্রিয় নবীকে একজন অন্ধ লোককে অবজ্ঞা করারর জন্য কিছুটা শক্ত ভাষা ব্যক্ত করেছেন, এই কপট ইমামের এ অংশটুকু পুনঃ পুনঃ পাঠের উদ্দেশ্য ছিল মুসলমানদের মনে যেন ধীরে ধীরে হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) সম্পর্কে একটা বিরুপ ভাবের সৃষ্টি করে। হযরত ওমর এই ঘটনা শুনে এমন রাগান্বিত হয়েছিলেন যে, তিনি ঐ কপট ও ভন্ড ইমামকে হত্যা করতে হুমকি পর্যন্ত দিয়েছিলেন।
এতে বুঝা যায় মানুষকে বিপথগামী করার উদ্দেশ্যে কুরআন তিলাওয়াতও নিষিদ্ধ। (সূত্র : ইসলামের দৃষ্টিতে সঙ্গীত- আবুল কালাম মুহাম্মদ আবদুল্লাহ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পত্রিকা। সংখ্যা ৪৩। জুন ১৯৯২, আষাঢ় ১৩৯৯।)(ইসলামিক ফাউন্ডেশনের অনুবাদে ৩১:৬ আয়াতের ‘কেহ কেহ’ প্রসঙ্গে পাদটীকায় বলা হয়েছে, নাদর ইবন হারিছ নামে মক্কার নেতৃস্থানীয় এক ব্যক্তি পার্শ্ববর্তী দেশসমুহে, বিশেষত পারস্য হইতে গল্পের বই সংগ্রহ করিয়া আনিত এবং কুরআন শ্রবণ হইতে বিরত রাখার উদ্দেশ্যে আসর জমাইয়া লোকদের সেই সকল গল্প শুনাইত। সেই আসরে আমোদ-স্ফূর্তির আরও সামগ্রী রাখা হইত। তাহার সম্বন্ধে আয়াতটি নাজিল হয়। ঘটনাটি সত্য হোক বা না হোক, এখানে লাহওয়াল হাদিস বলতে গানের বাইরে অন্য কিছু বোঝাচ্ছে, সেটা পরিস্কার।) দ্বিতীয় আয়াত৫৩:৫৯-৬২ তোমরা কি এই কথায় বিষ্ময় বোধ করিতেছ! এবং হাসিঠাট্টা করিতেছ! ক্রন্দন করিতেছ না? তোমরা তো উদাসীন (সামেদুন)। অতএব আল্লাহকে সিজদা কর এবং তাঁহারই ইবাদত কর।এ আয়াতের কোথাও সঙ্গীত বা বাদ্য বিষয়ে কিছু বলা হয়নি। শুধুমাত্র বলা হয়েছে কিয়ামত আসন্ন এ কথা জানার পরও কেউ যেন উদাসীন হয়ে বিনোদনে ডুবে থেকে সালাত বা এবাদত থেকে দুরে সরে না যায়। যে কোন কিছুই একজনকে সালাতের কথা বিস্মৃত করে দিতে পারে। যেমন খাওয়া দাওয়া, টিভি দেখা, বই পড়া। এখন এগুলো কি সব নিষিদ্ধ হয়ে যাবে?ইবনে যাওজী ও আরো কেউ কেউ ৫৩:৬০-৬১ আয়াতের সামেদুন শব্দের অর্থ করেছেন সঙ্গীত। অথচ সিন মিম দাল শব্দমূলের অর্থ to be elevated, to raise the head and thrust out the chest in pride; to be heedless; to be playful; to be careless. (Arabic-English Dictionary of Quranic Usage, page 454.) সামাদা অর্থ one who passes his life in merriment. (A Concordance of the Quran page 1087) । ইবনে আব্বাস বলেছেন এটি আরবী ভাষার শব্দ নয়। হেময়রী ভাষায় এর অর্থ সঙ্গীত। আকরম খাঁ বলেছেন, এরকম কথা ইবনে আব্বাস বলেননি। বললেও তা গ্রাহ্য হবেনা। কুরআনে আরবী ভাষার গ্রন্থ, এ কথা কুরআনের। যে কোন ভাষায় বিদেশী ভাষা পরিগৃহীত হয়ে প্রচলিত হয়ে যায়। তখন আর সেটিকে কেউ বিদেশী ভাষা বলে না।
ইবনে আব্বাসের ওই বর্ণনাটি নির্ভর করছে ইকরামার বর্ণনার উপর। ইবনে আব্বাসের নামে বহু মিথ্যা হাদীস বর্ণনার ফলে ইবনে আব্বাসের পুত্র তাকে থামের গায়ে বেঁধে রাখেন। কি ব্যাপার জিজ্ঞেস করলে সে জবাব দেয়, এ খবিশটি আমার পিতার নামে মিথ্যা বর্ণনা করে থাকে। (সূত্র : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পত্রিকা। সংখ্যা ৪৩। জুন ১৯৯২, আষাঢ় ১৩৯৯।)তৃতীয় আয়াতএরপর বলা হয় ১৭:৬৪ আয়াতের কথা।তোমার আহ্বানে (আওয়াজ দ্বারা, আরবী- বিসাওতিকা) উহাদের মধ্যে যাহাকে পার পদস্খলিত কর, তোমার অশ্বারোহী ও পদাতিক বাহিনী দ্বারা উহাদের আক্রমণ কর এবং উহাদের ধনে ও সন্তান-সন্ততিতে শরীক হইয়া যাও ও উহাদেরকে প্রতিশ্রুতি দাও। শয়তান উহাদেরকে যে প্রতিশ্রুতি দেয় উহা ছলনামাত্র।সোয়াদ ওয়া তা শব্দমূলে সাওতের অর্থ শব্দ, কণ্ঠস্বর, কোলাহল ইত্যাদি। (দেখুন Arabic-English Dictionary of Quranic Usage, পৃষ্ঠা ৫৪০)সঙ্গীত নিষিদ্ধ মনে করেন যারা তারা বলেন, এ আয়াতে শয়তান যে স্বর/আওয়াজ দিয়ে মানুষকে ফুসলায় সেটাই গান। আল্লাহ যদি গানের কথাই বলতে চাইতেন তাহলে সরাসরি গানের কথাই বলতে পারতেন। আল্লাহর শব্দের অভাব হয় না। ((৩১/২৭, ১৮/১০৯) তাছাড়া একই শব্দ (সাওত) কোরআনের অন্যত্রও ব্যবহার করা হয়েছে। (২০:১০৮, ৩১:১৯, ৪৯:২-৩)। কোথাও একে গান হিসেবে উল্লেখ করা হয়নি। এ আয়াত প্রসঙ্গে ইমাম ইবনে যাওজী ও তার সমমতাবম্বীরাও বলছেন যে শয়তানের শব্দ/আওয়াজ হচ্ছে সঙ্গীত। কারণ মুজাহেদও ঐরুপ বলেছেন। হযরত ইবনে আব্বাস আগে সামেদুনকে গান হিসেবে উল্লেখ করেছেন। আবার এখানে সাওতকেও সঙ্গীত হিসেবে নেওয়া হচ্ছে। এখানে যওজীরা ইবনে আব্বাসের মতকে অবলীলায় উপেক্ষা করছেন। মুজাহিদ বলছেন সওত শব্দের অর্থ সঙ্গীত। এটা নিতান্তই মনগড়া কথা। সুরা হুজরাতে মুমিনদের উদ্দেশ্য করে বলা হয়েছে, তোমরা নিজেদের সওতকে নবীর সওতের উপর উচ্চ করো না। এখানে সওত অর্থ কণ্ঠস্বর, আওয়াজ। কখনোই সঙ্গীত নয়। সুরা লুকমানে বলা আছে, ‘এবং কণ্ঠস্বর (সাওতিকা) নিচু কর।’ এর পরেই বলা আছে, নিঃসন্দেহে গাধার স্বরই সর্বাপেক্ষা অপ্রীতিকর। সওত অর্থ সঙ্গীত ধরলে আয়াতের অর্থ হবে নিশ্চয়ই সর্বাপেক্ষা ঘৃণিত সঙ্গীত হচ্ছে গাধার গান। (সূত্র : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পত্রিকা। সংখ্যা ৪৩। জুন ১৯৯২, আষাঢ় ১৩৯৯।) সঙ্গীতকে নিষিদ্ধ করার লক্ষে অনেক তফসিরকারই কোরআনের আয়াতের মনগড়া ব্যাখ্যা দিয়েছেন।
কোথাও লাহওয়া, কোথাও সামেদুন কোথাও সওতকে সঙ্গীত অর্থে ব্যবহার করেছেন তাদের ধারণাকে চারিয়ে দেওয়ার জন্য। উল্লেখ্য, সংগীতের আরবী হচ্ছে “মুসিকি”, সারা কোরানে ওই “মুসিকি” শব্দটাই নেই। দুই.এবার হাদিস প্রসঙ্গ। অন্য অনেক বিষয়ের মতো গান-বাজনা নিয়েও এই সেকেন্ডারি সোর্সেও যথারীতি স্ববিরোধিতা রয়েছে। অর্থাত্ কিছু হাদিসে গানবাজনাকে একেবারে হারাম বলা হয়েছে। আবার কিছু হাদিসে এ ব্যাপারে অনুমোদন রয়েছে। অনুমোদনসূচক হাদিসের জন্য দেখুন বুখারি ৪/৫৬/৭৩০, ২/১৫/৭২, ২/১৫/১০৩। (ইসলামি ফাউন্ডেশন দ্বিতীয় খন্ড হাদিস ৯০৪, ৯৩৫ ইত্যাদি)।যারা গানবাজনাকে নিষিদ্ধ মনে করেন তারাও এ ব্যাপারে কিছু হাদিস ব্যবহার করেন। যেমনবুখারি -‘ভবিষ্যতে এমন সময় আসবে যখন আমার উম্মতদের অনেকে অবৈধ মিলন, রেশমী পোশাক পরা, মদ্যপান ও বাদ্যযন্ত্রের ব্যবহারকে বৈধ মনে করবে।’ (৭/৬৯/৪৯৪, ইসলামি ফাউন্ডেশন নবম খন্ড, ৫১৮৯)সুনানে ইবনে মাজাহ এ হাদিসটি বর্ণনা করেছে এভাবে- আমার উম্মতরা ভিন্ন নাম দিয়ে মদ্যপান করবে, এবং তাদের সামনে পরিবেশন করা হবে বাদ্যসঙ্গীত এবং গায়িকারা (তাদের জন্য গাইবে)। আল্লার হুকুমে মাটি তাদের গ্রাস করবে এবং তাদেরকে বানর ও শুকরে রুপান্তরিত করবেন। (সুনান ইবনে মাজাহ ৪০২০, বুক ৩৬ হাদিস ৯৫) প্রায় একই রকম হাদিস অন্যান্য বইয়েও সহজলভ্য। যাই হোক, গত ১২০০ বছরে যারা গান বাজনা করেছেন বা শুনেছেন তাদের কেউ পাহাড় চাপা পড়েছেন, মাটি তাদের গিলে নিয়েছে বা তাদের কেউ বাঁদর শুকরে পরিণত হয়েছেন এমনটা শোনা যায়নি।
প্রসঙ্গত, আরেকটি কথা। এসব এবং আরো অনেক হাদিসে বলা হচ্ছে, নবীজী ভবিষ্যত্ দেখতে পেতেন। অথচ কোরআন বলছে-৪৬:৯ বল, আমি কোন নতুন রাসুল নই। আমি জানি না, আমার ও তোমাদের ব্যাপারে কী করা হইবে; আমি আমার নিকট যাহা ওহী করা হয় কেবল তাহারই অনুসরণ করি। আর আমি তো এক স্পষ্ট সতর্ককারী মাত্র।৭: ১৮৮ বল, আল্লাহ যাহা ইচ্ছা করেন তাহা ব্যতীত আমার নিজের ভাল-মন্দের উপরও আমার কোন অধিকার নাই। আমি যদি অদৃশ্যের খবর জানিতাম তবে তো আমি প্রভূত কল্যানই লাভ করিতাম। এবং কোন অকল্যানই আমাকে স্পর্শ করিত না! আমি তো শুধু মুমিন সম্প্রদায়ের সতর্ককারী ও সুসংবাদদাতা বৈ আর কিছু নই।এরকম আরো আয়াত আছে। এ প্রসঙ্গে কোরআনই যথেষ্ট। তবে হাদিসের স্ববিরোধিতার বিষয়টি তুলে ধরার জন্য হাদিসেরও উল্লেখ করা যায়। যেমন:…হযরত আয়েশা আরো বলেন, যে লোক বলে যে নবী জানেন আগামীকাল কী ঘটবে, সে লোক মিথ্যাবাদী। এরপর তিনি আবৃত্তি করেন, ‘কেউ জানে না আগামীকাল সে কী পাবে (৩১:৩৪)।’ (বুখারি ৬/৬০/৩৭৮ অংশবিশেষ, বুখারি শরিফ, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, অষ্টম খন্ড, ৪৪৯১)ইমাম মালিককে সঙ্গীত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি উত্তরে বলেছিলেন, নিতান্ত অজ্ঞ মুর্খ ও হূদয়হীন লোক ব্যতীত সঙ্গীতকে অন্য কেউ হারাম বলতে পারে না।
ইমাম গাযযালী বলেছেন, নির্দোষ সঙ্গীতকে নিষিদ্ধ বলে ফতোয়া দিলে শরীয়তের এনকার হয়। (সূত্র : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পত্রিকা। সংখ্যা ৪৩। জুন ১৯৯২, আষার ১৩৯৯।)সঙ্গীত সংক্রান্ত হাদিসগুলি বিশ্লেষণ করে কাজী আবুবকর ইবনুল আরাবী বলিয়াছেন ‘গান হারাম হওয়া পর্যায়ে একটি হাদিসও সহীহ নহে’। ইবনে হাজম বলিয়াছেন – ‘এ পর্যায়ের সকল বর্ণনাই বাতিল ও মনগড়া রচিত। (সূত্র হাসান মাহমুদ, বিডিনিউজ২৪ডটকম)তিন.কোরআন-হাদিসের আলোকে সঙ্গীতকে কোনভাবেই নিষিদ্ধ বলা যায় না। দাউদ (সা) কে জাবুর কিতাব দেওয়া হয়েছিল। পন্ডিতেরা একে বাইবেলের সামের (Psalms) সমতুল্য মনে করেন। উল্লেখ্য, আরবী শব্দ জাবুর হিব্রু জিমরাহ’র সমতুল্য যার অর্থ সঙ্গীত। ৩৪:১০ আয়াতে হযরত দাউদের সঙ্গে পাহাড় ও পাখিরা স্তবগান করতেন বলে অনেক অনুবাদে আমরা পড়ি। (২১:৭৯ আয়াতটিও বিবেচ্য।) কোরআনের অনুবাদক অবদুল্লাহ ইউসুফ আলী আয়াতের ব্যাখ্যায় লিখেছেন, David had the gift of song and sacred music, and this is shown in his Psalms. All nature-hills and birds-sing and echo back the Praises of Allah.সঙ্গীত নিষিদ্ধ হলে এরকম স্তবগানের উল্লেখ ধর্মগ্রন্থে থাকতো না। ভালো গান আর খারাপ গানের বিভেদ থাকতে পারে। সে আলোচনা ভিন্ন। কিন্তু সার্বিকভাবে গান নিষিদ্ধ এ কথার ভিত্তি নেই।আল্লাহ যদি চাইতেন পরিস্কার ভাষায় গান ও বাজনা নিষিদ্ধ হওয়ার কথা কোরআনেই উল্লেখ করতে পারতেন।
(কোরআনের আয়াতগুলোর অনুবাদ নেওয়া হয়েছে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের আল কুরআনুল করীম থেকে)
হাদিসের জন্য : http://www.sahih-bukhari.com/Pages/Bukhari_1_04.php প্রাসঙ্গিক পাঠ : http://quransmessage.com/articles/music%20FM3.htm
মুনির রানাঃ সিনিয়র সাংবাদিক ও লেখক