অতঃপর তিন নদীর মোহনায় অবস্থিত আবৃতনগরে পরিব্রাজক তাহার যাত্রাবিরতি করিলো। দেখিল নগরের উর্দ্ধরেল – উড়ালসেতু – আর পঞ্চজি তরঙ্গের মধ্যে ফুসফুসহীন কর্কটরোগে আক্রান্ত জীবন্মৃতদের লইয়া নেটফ্লিক্সের জন্য জম্বিমুভির ধারন চলিতেছে ক্রন্দনময় এফডিসিতে।
এ নগরের নাম কি?
নতুন বানানরীতি মানিয়া চীনা নাগরিক (চীনাগরিক) কর্তৃক অপমানিত ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণকারী এক নিরীহ ব্যাক্তি বলিল
এই নগরীর নাম উন্নয়নগরী।
পরিব্রাজক বলিলেন অভিন্দন।
পিয়াজুল কাঁদিয়া বলিল আপনার কি শিল্পী সমিতিতে ভোট আছে? না থাকিলে কারাভানবাজারে আপনার কর্ম কি? নিষ্ক্রান্ত হউন।
কারাভানবাজারের মতিগতি ভালো ঠেকিলো না।
পরিব্রাজক দেখিল চৌত্রিশজন নিষ্পাপ লোক সুরমাতীরবর্তী নগরের কাফনান্দোলনে বিব্রত হইয়া পদত্যাগি হইবার ঘোষনা দিয়াছেন।
এক ভবঘুরে ইহা দেখিয়া বলিতেছে পদসেবাকারীদিগের পদ দরকার কি?পদত্যাগ করুক সকলে। উহাদের হস্ত থাকিলেই হয়। তৈলমর্দনে হস্ত দরকার, পদ নহে।
এদিকে কিছু শিল্পী মা হইবার আনন্দে আনন্দরত এক অভিনেত্রীর বেবীটারমারিক অনুষ্ঠানের ছবি দিতেছে ফেসবুকে। পর্যটক বেবীশাওয়ার কি উহা জানিতো; বেবীটারমারিক জীবনে প্রথম দেখিয়া আশ্চর্য হইলো। আগে বেবী পরে টারমারিক। এক টারমারিকে দুইজন।
বেবীমাদারের শতশত বোতল ভরা বিশুদ্ধ পানি ছিলো যাহা মদভ্রমে বাজেয়াপ্ত করার বহুদিন পরে আবিস্কৃত হয়। ইহা অত্যাশ্চর্য যে এই বেবীমাদার একজন জলসংগ্রাহক। শতশত খুশিজলের বোতলে ওয়াসার জলসংগ্রহের এই ঘটনা বিশ্বে বিরল।
আর বাজেয়াপ্তকারীরাও সেইরকম পরহেজগার। গন্ধহীন বর্ণহীন পানিকে তাহারা ভদকা ভাবিয়া ভোদাই হইয়া গেলো।
আবৃতনগরীতে কুয়াশা প্রকৃত কুয়াশা নহে; উহা ধোঁয়াশা। চক্ষু ডলিয়া পরিব্রাজক দেখিল ৯৯ জন করিয়া বিবাহ অনুষ্ঠানে যাইতেছে। জানিলো বলা হইয়াছে সংক্রমণজনিত মহামারীতে ৯৯ জন একসঙ্গে থাকিলে ভয় নাই। ১০০ পার হইলেই ভাইরাস ছড়াইবে। এই উদ্ভাবনের কারণে নোবেল আসিবে হয়তো।
শিক্ষিতদের ইহা বেশি মারে তাই স্কুল কলেজ বন্ধ। পড়ালেখা করিয়া লাভ নাই। কনসার্ট করিলে লাভ আছে।
বায়ুবাহিত রোগে ফানুস আর আতশবাজি ফুটাইলে আগুনের তাপে বাতাস হইতে সব ভাইরাস দুর হইয়া যাইবে। তাই বেশি করিয়া এইসব উড়ানো ও ফুটানো হউক।
পড়ালেখা গোল্লায় যাক। বইমেলা পিছাইয়া যাক। তবে বানিজ্য চলিবে। বানিজ্যমেলা চলিবে। নাচিয়া নাচিয়া আইসক্রিম রুটি ফুচকা বেচিবে। তূর্কী গান না বুঝিলেই কি? পশ্চাতভাগ দুনিয়ার সর্বত্রই একই ভাবে দুলে।
পরিব্রাজক কাশিতে লাগিলো। কাঁদিতে লাগিলো। এই কাশি এই ক্রন্দনের কারণ বিষাক্ত বাতাস।
এতক্ষনে আপনি সুস্থ হইলেন। পাশের লোকটি বলিল
এই নগরে যে কাশে না; চক্ষু জ্বালাপোড়ায় ক্রন্দন করে না সে সুস্থ নহে।
সাকিব বলিলো ব্যাংকের অনুমতি না পাইয়া সে ই কমার্স ব্যবসা করিবে।
সংগীতারকা জামিন লইয়া কোক খাইতে খাইতে বলিল-It is strictly professional. একদিন কমদামে বাইক বেচিলে অন্যদিন বেশিদামে কোক খাইলে হিসাব বরাবর।
বাসযাত্রী এক সহমতাপা সমালোচনা সহ্য করিতে না পারিয়া সামাজিক মাধ্যমে তোলপাড় ভাইরাল ভিডিও দিতেছেন। ক্রন্দন ব্যতিত কোথাও আনন্দ নাই।
পরিব্রাজক দ্রুত শহরত্যাগী হইতে বিমানবন্দরের উদ্দেশ্যে রওনা করিলো।
কিন্তু পৌঁছাইতে পারিলো না। গভীর রাতে দ্রুতগামী যানে মাস্তিরত তিন তরুণ তরুণীর বাহনের ধাক্কায় আহত হইয়া সে নিবীড় পরিচর্যায় বন্দী। সে পরপারে যাইবে কিনা ইহা নির্ধারনে মেডিকেল বোর্ড আলোচনা করিতেছে।
গেলেই তো হইলো না, কিছুদিন আগে টাকলাকে ফিরাইয়া দিয়া তাহারা বিশ্বভ্রমনে বাধ্য করিয়াছে।
আপনারা বলেন বলে দম বন্ধ ভাবটা খানিক কমে।
সলিমুল্লাহ খান স্যার, আব্দুল্লাহ আবু সাঈদ স্যার, আব্দুন নূর তুষার স্যার, খালেদ মহিউদ্দিন স্যার, আসিফ নজরুল স্যারসহ আরও যারা আছেন তাদের রচনা-বক্তব্য-মতামত আরও বেশি বেশি করে চাই। অন্ধকারের বিপরীতে আলোর দ্বিগুণ উপস্থিতি চাই। বইমেলাতে এইসব লেখার সংকলন চাই।
আলো দিয়ে সব অন্ধকার দূর হয়ে যাক। আর কিছু না হোক, অন্তত একটা জেনারেশনের বুঝতে শিখার উপলক্ষ তৈরি হোক।