দীর্ঘ ২০ বছর, সেই ২০০১ থেকে ২০২১ পর্যন্ত সংগ্রাম, অপেক্ষা, অধ্যাবসায়। অত:পর গতকাল রোববার (১৫ আগস্ট) আনুষ্ঠানিকভাবে আফগান ক্ষমতা দখল তালেবানদের।
এই দীর্ঘ সময় ধরে চলা যুদ্ধের অবসান, কাবুলে ফিরে আফগান যুদ্ধের সমাপ্তি হয়েছে বলে জানিয়েছে তালেবান। রোববার (১৫ আগস্ট) তালেবানের রাজনৈতিক কার্যালয়ের এক মুখপাত্র একথা জানান বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।
তালেবান মুখপাত্র মোহাম্মদ নাঈম আফগান যুদ্ধ অবসানের ঘোষণা দিয়ে বলেন, তাদের শাসন পদ্ধতি ও কাঠামো শিগগিরই স্পষ্ট করা হবে। তিনি বলেন, কোনও কূটনৈতিক কাঠামো কিংবা তাদের কোনও কার্যালয়কে লক্ষ্যবস্তু বানানো হয়নি। সব কূটনীতিক মিশন এবং নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে বলেও প্রতিশ্রুতি দেন তিনি। একইসঙ্গে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে শান্তিপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখার আহ্বানও জানিয়েছেন তারা।
তালেবানের এই মুখপাত্র আরও বলেন, ‘আমরা যা চেয়েছিলাম সেই লক্ষ্যে পৌঁছেছি, দেশের স্বাধীনতা ও জনগণের মুক্তি। তালেবান মনে করে না বিদেশি কোন বাহিনী আফগানিস্তানে তাদের ব্যর্থতার পুনরাবৃত্তি ঘটাবে।’
ওই মুখপাত্র কাতারভিত্তিক আলজাজিরা টেলিভিশনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় থেকে তালেবান বিচ্ছিন্ন অবস্থায় থাকতে চায় না এবং শাসনের ধরন ও রাষ্ট্রীয় গঠন কাঠামো খুব শিগগিরই পরিষ্কার করা হবে। এবং যেকোনো সমস্যা সমাধানের জন্য আমাদের সঙ্গে বসতে আমরা সকল দেশ ও অংশীদারদের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।’
তিনি জানান, শরীয়াহ আইনের মধ্যে থেকেই নারী ও সংখ্যালঘুদের অধিকার নিশ্চিত করা হবে। একইসঙ্গে বাকস্বাধীনতাও নিশ্চিত করা হবে। তিনি বলছেন, বিশ্বের অন্যান্য রাষ্ট্রের সঙ্গে তালেবান শান্তিপূর্ণ সম্পর্ক রাখতে চায় এবং ইতোপূর্বে কয়েকটি দেশের সঙ্গে শুরু হওয়া যোগাযোগের চ্যানেলগুলোও আরও উন্নত করতেও আগ্রহী তারা।
এ বছরের এপ্রিলে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন আফগানিস্তান থেকে আগামী ৩১ আগস্টের মধ্যে সব মার্কিন ও ন্যাটো সেনা প্রত্যাহারের ঘোষণা দেওয়ার পর মে মাস থেকে আফগানিস্তান দখলে অভিযান শুরু করে তালেবানগোষ্ঠী। তারা অবিশ্বাস্য দ্রুততায় মাত্র আড়াই মাসের মধ্যে দেশের ৩৪টি প্রদেশের ২৮টি দখল করে বর্তমানে কাবুলে অবস্থান করছে। ইতোমধ্যে আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনি পদত্যাগ করেছেন এবং দেশটিতে একটি অন্তবর্তী সরকার গঠনের প্রক্রিয়া এগিয়ে চলছে।
আফগান প্রেসিডেন্ট বাসভবন নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার পর এবং মার্কিন সেনারা দেশটির মাটি ছাড়ার পর এমন ঘোষণাই দিল দীর্ঘদিন ধরে লড়াই চালিয়ে যাওয়া তালেবান। কাবুল এয়াপোর্টে যখন হাজার হাজার মানুষ দিশেহারা হয়ে ঘুরছে তখন তাদের কথা না ভেবেই দেশ ছাড়েন দেশটির প্রেসিডেন্ট আশরাফ গানি। ফলে তীব্র সমালেচনার মুখে পড়েছেন গানি। যদিও তিনি বলেছেন, রক্তপাত যেন না হয় সেকারণেই দেশ ছেড়েছেন।
দ্যএডিটর৩৬৫/ জেডআই